চাকরি যাওয়া ম্যানেজার থেকে বিশ্বকাপ জেতা কোচ! স্কালোনিতে ডুবে গোটা আর্জেন্টিনা

#দোহা: ফ্রান্সকে হারিয়ে যখন উৎসব করছেন লিওনেল মেসিরা, তখন এক কোণে দাঁড়িয়ে চোখ দিয়ে জল গড়াচ্ছে লিওনেল স্কালোনির। দু’বছর আগেও কেউ চিনত না যাকে। রবিবার মেসিদের হাতে কাপ উঠলেই আর্জেন্টিনার সর্বকালের সেরা কোচেদের তালিকায় নাম চলে আসত লিওনেল স্কালোনির। এই তালিকায় নাম আছে আর্জেন্টিনার দুই বিশ্বকাপজয়ী কোচ লুইস মেনোত্তী ও কার্লোস বিলার্দো।

২০১৮ সালে জর্জ সাম্পলির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর আর্জেন্টিনা দলের অন্তর্বর্তী কোচ হিসেবে দায়িত্ব নেন স্কালোনি। ৪৪ বছর বয়সী স্কালোনি তার নিজের মত করে দলকে শক্তিশালী করে তুলেছেন। তৃতীয়বারের জন্য বিশ্বকাপ জয়ের দোরগড়ায় আর্জেন্টিনাকে পৌঁছে দিয়েছিলেন স্কালোনি। গত বিশ্বকাপে দলের সহকারী কোচের দায়িত্ব সামলেছেন স্কালোনি।

আরও পড়ুন – ৩৬ বছর পর মেসির হাতেই বিশ্বসেরা মারাদোনার দেশ, নীল সাদা আকাশের পুরোটাই আর্জেন্টিনা!

সাম্পলি ঘন ঘন মেজাজ হারাতেন, কিন্তু স্বল্পভাষী স্কালোনি সম্পূর্ণ বিপরীত চরিত্রের। ২০১৮ এর রাশিয়া বিশ্বকাপে শেষ ষোলোয় আর্জেন্টিনার বিদায়ের পর তাকে কোচ হিসেবে নিয়োগ করা হয়। কিন্তু আর্জেন্টিনা ফুটবল ফেডারেশনের এই সিদ্ধান্ত এর সমালোচনা করেন সে দেশের প্রাক্তনীরা, স্কালোনিকে কোচ হিসেবে মেনে নিতে পারেননি অনেকেই।

তাদের যুক্তি ছিল আর্জেন্টিনার কোচ হওয়ার প্রয়োজনীয় যোগ্যতা স্কালোনির নেই। শোনা যায় কিংবদন্তী দিয়েগো মারাদোনা, যিনি নিজেও আর্জেন্টিনার কোচিংয়ের দায়িত্ব সামলেছেন এক সময়, স্কালোনি সম্পর্কে জানান, উনি রাস্তার ট্রাফিক সামলানোরও যোগ্য নন। স্কালোনি এমন একটি দলের দায়িত্ব পেয়েছিলেন, যে দলটি তীরে এসেও একাধিকবার তরী ডুবিয়েছে। ২০১৪ এর বিশ্বকাপ ফাইনালে জার্মানির কাছে পরাজয়ের পর ২০১৫ ও ২০১৬ সালের কোপা আমেরিকার ফাইনালে চিলির কাছে পেনাল্টিতে হেরে যায়।

এই বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার ২৬ জন ফুটবলারের মধ্যে ১৯ জন প্রথমবারের জন্য বিশ্বকাপ খেলছেন। ১৯৮৬ সালে বিশ্বকাপের ফাইনালে জয়সূচক গোল যিনি করেছিলেন সেই জর্জ বুরুচাজ্ঞা সংবাদসংস্থা এএফপিকে জানান,  তিনি মলিনা, ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো , লিসান্দ্র মার্টিনেজ ও ম্যাক এলিস্টারের মত ফুটবলারদের আবিষ্কার করেছেন।

এরা দলকে আলাদা পরিচয় দিয়েছেন, লিওনেল মেসিকে নিজেকে মেলে ধরার এমন অপশন দিয়েছেন। কিন্তু তার পূর্বসূরীদের সঙ্গে তুলনায় যেতে চান না স্কালোনি। তিনি বলেন, আমি অন্য কোচেদের সঙ্গে তুলনায় যেতে চাই না। অনেকেই মনে করেন স্কালোনির মধ্যে মেনোত্তীর কৌশলী মস্তিস্ক ও বিলার্ডর বাস্তববাদিতার সংমিশ্রণ রয়েছে।

বিশ্বকাপের আগে স্কালোনির অধীনে আর্জেন্টিনা টানা ৩৬ টি ম্যাচ অপরাজিত ছিল। শেষ কোপা আমেরিকা জিতে ২৮ বছরের ট্রফির খড়া কাটিয়েছে আর্জেন্টিনা। এবার স্কালোনির হাত ধরে বিশ্বকাপ এল নীল সাদার দেশে। কবরে ঘুমিয়ে থাকা মারাদোনা বেঁচে থাকলে তাকে আশীর্বাদ করতেন।