কলকাতা: তরুণী চিকিৎসককে নির্যাতন করে খুনের ঘটনার জের৷ ঘটনার দু’দিন পরে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের সুপারকে সরানোর নির্দেশ৷ হাসপাতালের এমএসভিপি বা সুপার সঞ্জয় বশিষ্ঠকে সরিয়ে দেওয়া হল৷ তার বদলে নতুন সুপার নিযুক্ত হলেন ডক্টর বুলবুল মুখোপাধ্যায়৷ তিনি ডিন অফ স্টুডেন্টস এফেয়ার ছিলেন৷ বর্তমান তরুণী হত্যার ঘটনায় গঠিত ১১ সদস্যের বিশেষ তদন্তকারী দল বা সিট-এরও অন্যতম সদস্য তিনি৷
যদিও ঘটনার কথা সামনে আসার পরে হাসপাতালের প্রিন্সিপালের করা মন্তব্য নিয়ে ইতিমধ্যেই ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হয়েছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে৷ আন্দোলনকারীদের তরফেও তাঁকে বরখাস্ত করার দাবি জানানো হয়েছিল৷ কিন্তু, বদলে সুপারকে সরিয়ে স্বাস্থ্য দফতর সেই ক্ষোভ খানিকটা হলেও প্রশমনের চেষ্টা করল বলে মনে করা হচ্ছে৷ সঞ্জয়কে সরিয়ে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে অধ্যাপক হিসাবে পাঠানো হয়েছে।
গত শুক্রবার সকালে আর জি কর হাসপাতালের চেস্ট মেডিসিন বিভাগের ইমারজেন্সি বিল্ডিংয়ের চার তলার সেমিনার রুম থেকে রহস্যজনক ভাবে উদ্ধার হয় এক তরুণী চিকিৎসকের দেহ৷ তিনি ওই হাসপাতালে পোস্ট গ্র্যাজুয়েশনের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন৷ তার আগের দিন অর্থাৎ, বৃহস্পতিবার রাতে অন কল ডিউটিতে হাসপাতালে ছিলেন তিনি৷ দুপুর ২টো নাগাদ খেয়ে ২ ঘণ্টার জন্য সেমিনার রুমে বিশ্রাম নিতে এবং পড়াশোনা করতে গিয়েছিলেন৷
আরও পড়ুন: আরজি কর কাণ্ডে পড়ুয়াদের সমস্ত দাবি দাবি মেনে নিল স্বাস্থ্য দফতর, কী কী পদক্ষেপ?
পরেরদিন, অর্থাৎ শুক্রবার সেমিনার হলে উদ্ধার হয় ওই চিকিৎসকের দেহ৷ পোশাক ছিল অবিন্যস্ত৷ পরবর্তীকালে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে জানা যায়, ওই তরুণীর সারা শরীরে কমপক্ষে ১০টি ক্ষতচিহ্ন রয়েছে৷ গলা টিপে ভেঙে দেওয়া হয়েছে গলার দু’পাশ ও থাইরয়েড গ্রন্থির হাড়৷ মুখে, গলায় কালশিটে৷ পেটেও আঘাত৷ ভেঙে দেওয়া হয়েছে ডান হাতের অনামিকা আঙুলটি৷ পায়েও কালশিটে, ক্ষত৷ ক্ষত গোপনাঙ্গেও৷ ময়নাতদন্তের রিপোর্টের ভিত্তিতে প্রথমে খুন ও শনিবার ধর্ষণের মামলা রুজু করে পুলিশ৷
ঘটনাস্থলে পড়ে থাকা ব্লু টুথ হেডফোন এবং সিসিটিভি ফুটেজ দেখে গ্রেফতার করা হয় সঞ্জয় রায়কে৷ পুলিশি জেরায় সে অপরাধের কথা স্বীকারও করে৷ জানা যায়, শনিবার ভোট ৪টে নাগাদ মত্ত অবস্থায় সেমিনার রুমে গিয়েছিল সে৷ তরুণীকে খুন করে ধর্ষণ করার পরে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে ফর মদ খায়৷ পোশাকে থাকা রক্তের দাগ ধুয়ে প্রমাণ লোপাটের চেষ্টাও চালায় সে৷ ধৃতকে ১৪ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত৷
আরও পড়ুন: আরজি কর কাণ্ডে ধৃত সঞ্জয়কে নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য! সিভিকের চাকরি…আর কী কী?
অন্য দিকে, আরজি কর হাসপাতালের সমস্ত চিকিৎসক এবং অচিকিৎসক কর্মীদের ছুটি বাতিল করেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালে উদ্ভূত সাম্প্রতিক পরিস্থিতির জেরেই এই সিদ্ধান্ত বলে জানানো হয়েছে। একটি নোটিস জারি করে আরজি কর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, অবিলম্বে ছুটি বাতিলের এই নির্দেশ কার্যকর হবে। তবে আগে থেকে যাঁদের ছুটি অনুমোদিত হয়ে গিয়েছিল, তাঁদের আপাতত ছুটি বাতিল করে কাজে যোগ দিতে হবে না৷