RG Kar Hospital: আর জি করে রক্তাক্ত পুলিশের উর্দি! ঘড়ির কাঁটা থমকে ১২টা ৩৫ মিনিটে, তছনছ জরুরি বিভাগ

কলকাতা: মেয়েদের রাত দখলের রাতেই আর জি কর হাসপাতালে চলল তাণ্ডব৷ পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে হাসপাতালের এমারজেন্সি বিভাগের কাছে ঢুকে পড়লেন আন্দোলনকারীদের ভিড়ের মধ্যে থাকা একদল মানুষ৷ তাঁদের কারও পরনে ছিল হাফ প্যান্ট, কারও স্যান্ডো গেঞ্জি৷ এমনকি, ভাঙচুর চলল হাসপাতালের ভিতরে থাকা আন্দোলনকারীদের মঞ্চেও৷ তছনছ হয়ে গিয়েছে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের টিকিট কাউন্টার, এইচসিসিইউ (হাইব্রিড ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট), সিসিইউ (ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট), ওষুধের স্টোররুমও। ভাঙচুর করা হয় আরজি করের পুলিশ ফাঁড়িও।

প্রথমে পরিস্থিতি সামলাতে না পারলেও ঘটনার খবর পাওয়া মাত্রই আর জি কর হাসপাতালে পৌঁছয় বিরাট পুলিশবাহিনী৷ নামানো হয় র‌্যাফ। কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটিয়ে ভিড়কে ছত্রভঙ্গ করা হয়। তার আগে ভাঙচুর করা হয়েছে পুলিশের একাধিক গাড়ি। এই হামলার ঘটনায় আহত হন বেশ কয়েক জন পুলিশকর্মী। হাসপাতালে ঢুকে পরা ব্যক্তিদের ছোঁড়া ইটের আঘাতে রক্তাক্ত হয় পুলিশের উর্দি৷

বর্তমানে ডিসি নর্থ অ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি৷ তাঁর বুকে মাথায় আঘাত লেগেছে৷ স্ক্যান করা হচ্ছে৷ মানিকতলা থানার অফিসার দেবাশিস দত্তের মাথা ফেটে গিয়েছে৷ আহত আরও ১৫ জন পুলিশকর্মী৷ সিপি নির্দেশ দেন, যেখানে যে জমায়েত আছে উঠতে বলুন। না হলে গ্রেফতার করা হোক৷ আর জি কর হাসপাতালের সামনে পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়, পরে  ক্রেনে করে নিয়ে যাওয়া হয় সেই গাড়ি৷

আরও পড়ুন: রাত দখলের রাতে আরজি করে হামলা! জোর করে ভিতরে ঢুকে হাসপাতালে ভাঙচুর বহিরাগতদের

আর জি কর হাসপাতালের এমার্জেন্সির ঠিক বাইরে পুলিশ এবং সিভিক ভলেন্টিয়ারদের ইউনিফর্ম, জীবনদায়ী ওষুধ পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে বলেও জানা গিয়েছে৷

তাণ্ডবে থমকে যাওয়া একটি ঘড়িতে দেখা গিয়েছে সেটির কাঁটা রাত ১২টা ৩৫ মিনিটে থমকে গিয়েছে৷ অর্থাৎ, সেই সময়েই ঘটনা ঘটেছিল বলে মনে করা হচ্ছে৷ তাণ্ডবকারীদের কয়েক জনের হাতে রড এবং লাঠি ছিল বলে অভিযোগ। জরুরি বিভাগের বাইরের কোলাপসিবল গেট ভেঙে উপড়ে ফেলা হয়। ভিতরে ঢুকে সব কিছু লন্ডভন্ড করে দেন তাঁরা।

আরও পড়ুন: গভীর রাতে কারা ঢুকল আরজি করে? পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র? তছনছ এমার্জেন্সি বিভাগ

ভেঙেচুরে ফেলা হয় জরুরি বিভাগের সব কিছুই। টিকিট কাউন্টার, এইচসিসিইউ, সিসিইউ, ওষুধের স্টোররুম হামলাকারীদের হাতে চুরমার হয়ে যায়। মেঝেতে ছড়িয়ে পড়ে ওষুধপত্র, ইঞ্জেকশনের ভাঙা ভায়াল। ওলোটপালোট করে দেওয়া হয় বেড, আসবাবপত্র। গোটা জরুরি বিভাগ জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে চুরমার হওয়া কাচ। জরুরি বিভাগের এইচসিসিইউ (হাইব্রিড ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট), সিসিইউ (ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট)-তেও ভাঙচুর চালানো হয়।

তাণ্ডব চলার কিছুক্ষণ পরেই ঘটনাস্থলে পৌঁছন কলকাতা পুলিশের সিপি বিনীত গোয়েল৷ বিনীত বলেন, ‘‘ডিসি নর্থ প্রতিবাদকারীদের রক্ষা করতে গিয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন। তিনি অজ্ঞান হয়ে গিয়েছেন। এখানে যা হয়েছে তা ভুল প্রচারের জন্য। কলকাতা পুলিশ এই বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত।’’ নানা রকমের গুজব ছড়ানো হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার৷

এদিকে আর জি কর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভাঙচুরের ঘটনায় কারা জড়িত রয়েছে, তা নিয়েও শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা৷ বিজেপি নেতা সুকান্ত মজুমদার গোটা ঘটনার পিছনে শাসকদলের হাত দেখছেন৷ শুভেন্দু অধিকারীর দাবি, মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ-খুনের মামলার তদন্তভার যেহেতু সিবিআইয়ের হাতে গিয়েছে, তাই তথ্যপ্রমাণ লোপাটের জন্য এ ভাবে হামলা চালানো হয়েছে। অন্যদিকে, এলাকার তৃণমূল নেতৃত্বের অভিযোগ, বিক্ষোভকারীদের মধ্যে মিশে থাকা বাম-বিজেপি সমর্থকই এই কাণ্ড ঘটিয়েছে৷ সিপি-র কাছে ঘটনার দ্রুত পদক্ষেপ করার আর্জি জানিয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়৷