কলকাতা: আরজি কর হাসপাতালে মৃত চিকিৎসক-পড়ুয়ার ময়নাতদন্ত আর ফরেন্সিক রিপোর্ট-ই আপাতত কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই-এর কাছে সবথেকে চ্যালেঞ্জের বিষয়! কিন্তু কেন? সূত্রের খবর, ময়নাতদন্তের রিপোর্টে স্পষ্টভাবে উল্লেখিত, মৃতাকে যৌন নিগ্রহ করা হয়েছে। কিন্তু ফরেন্সিক রিপোর্টে এই বিষয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে, কোনও একটি নির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেননি ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা।
সোমবার ছিল সুপ্রিম কোর্টে আরজি কর হাসপাতালে চিকিৎসক-পড়ুয়া ধর্ষণ ও খুনের মামলার দ্বিতীয় শুনানি। এদিন আদালতে সিবিআই জানায়, মামলায় নতুন মোড় পাওয়া গিয়েছে। ধরে নেওয়া হচ্ছে সিবিআই প্রমাণ লোপাটের দিকেই ইঙ্গিত করছে। মৃতার পরিবারের তরফেও এক-ই অভিযোগ আনা হয়েছে। শুনানিতে প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় বলেন, ” সিবিআই-এর কাছে ফ্রেশ ‘লিড’ আছে। ওরা তদন্ত করে নয়া স্ট্যাটাস রিপোর্ট ১৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জমা দিক।”
সূত্রের খবর, ময়নাতদন্তের রিপোর্টে স্পষ্টভাবে উল্লেখিত, মৃতাকে যৌন নিগ্রহ করা হয়েছে। কিন্তু ফরেন্সিক রিপোর্টে এই বিষয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে, কোনও একটি নির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেননি ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট বলছে, চিকিৎসকের দেহে যৌন হেনস্থার প্রমাণ মিলেছে। চিকিৎসককে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছিল। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে উল্লেখিত, চিকিৎসকের যৌনাঙ্গে জোরপূর্বক কিছু প্রবেশ করানো হয়েছিল (রিপোর্টে লেখা পেনিট্রেশন/ইনসারশন)।
নির্যাতিতার ‘এন্ডোসার্ভিক্যাল ক্যানাল’ থেকে ‘সাদা ঘন চটচটে তরল’ সংগ্রহ করা হয়েছে। তবে সেই তরল কী, তার উল্লেখ নেই রিপোর্টে। এই তরলের সঙ্গে অভিযুক্ত সঞ্জয় রাইয়ের ডিএনএ-র নমুনা মিলে গিয়েছে।
সিবিআইয়ের তরফে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা বলেন, ” বিষয়টি খুব-ই গুরুত্বপূর্ণ। ফরেন্সিক রিপোর্ট অনুযায়ী, যখন নির্যাতিতার দেহ দেখতে পাওয়া যায়, তখন তা অর্ধনগ্ন অবস্থায় ছিল। দেহে একাধিক ক্ষতচিহ্ন ছিল। পুলিশ সেখান থেকে নমুনা সংগ্রহ করে এবং ফরেন্সিকের জন্য পাঠায়। অথচ রিপোর্ট-টা দেখুন! আমাদের দেখা উচিত ঘটনাস্থল থেকে কে নমুনা সংগ্রহ করেছিলেন।” ফরেন্সিক পরীক্ষা হয় পশ্চিমবঙ্গের একটি ল্যাবরেটরিতে। সিবিআই সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওই সব নমুনা তারা দিল্লির এইমস এবং অন্যান্য সব কেন্দ্রীয় ফরেন্সিক ল্যাবরেটরিতে পাঠাবে।
শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় জানতে চান, “মৃতদেহ কখন ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়? তার চালান কোথায়?”উত্তরে সিবিআইয়ের তরফে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা জানান, তাঁদের কাছে যে ফাইল দেওয়া হয়েছিল, সেখানে কোনও চালান নেই। তখন প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন তোলেন, ” চালান ছাড়াই ময়নাতদন্ত হয়ে গেল?” বিচারপতি পাদরিওয়ালা-র মন্তব্য, ” চালান যদি না থাকে তাহলে বুঝতে হবে কিছু সমস্যা আছে।” যদিও কলকাতা পুলিশের তরফে বলা হয়, কোন-ও তথ্য-ই মিসিং নয়, সব তথ্য-ই আছে।
দেহ যখন ময়নাতদন্তের জন্য হস্তান্তর করা হয়, তখন চালানটি দেওয়া হয়। এই চালানটি প্রয়োজনীয় কারণ তাতে মৃতদেহের বিবরণ, পোশাক, তার সঙ্গে কী কী বস্তু রয়েছে, সবের বিবরণ থাকে। সূত্রের খবর, ময়নাতদন্তের রিপোর্টে উল্লেখিত, মৃতদেহের পরণে ছিল গোলাপি টপ, অন্তর্বাস ছিল না।