খুন ও ধর্ষণ হওয়া আরজি করের চিকিৎসকের মৃত্যুর স্বচ্ছ তদন্তের দাবিতে ডিএমই, ডিএইচ এসকে সরানোর দাবি জানিয়ে আসছিলেন আন্দোলনরত চিকিৎসকরা৷

Junior Doctor Protest: শিরদাঁড়ার পর হাতে মস্তিষ্ক! স্বাস্থ্য ভবন অভিযানে চিকিৎসকরা, দেওয়া হল ডেডলাইন

কলকাতা: মঙ্গলবার করুণাময়ীতে স্বাস্থ্য ভবনের সামনে বিপুল জমায়েত। ঝাঁটা হাতে স্লোগান দিতে দেখা গেল আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারদের।  ৫ দফা দাবি নিয়ে মিছিলে শামিল তাঁরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে রয়েছে পুলিশ। দাবি না মানলে বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেবেন, এমনই জানায় ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্টস।

প্রতীকী মস্তিষ্ক হাতে নিয়ে মিছিলে হাঁটছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। তাঁদের বক্তব্য, রাজ্যের স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে একের পর এক দুর্নীতি হয়ে গেলেও স্বাস্থ্য ভবনের তরফে এত দিন কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। চিকিৎসকদের অভিযোগ, তাঁদের আন্দোলনকে দমাতে নানা পদক্ষেপ করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য ভবনের কর্তাদের ‘মস্তিষ্ক উপহার’ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। এক জুনিয়র চিকিৎসকের কথায়, “এ বার অন্তত মাথা খাটিয়ে কাজ করুক স্বাস্থ্য ভবন।”

আরজি করে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার এক মাস হয়ে গিয়েছে। বিচারের দাবিতে লাগাতার কর্মবিরতির ডাক দিয়েছিলেন জুনিয়র ডাক্তাররা। এ দিকে, সোমবার দুপুরেই আন্দোলনরত চিকিৎসকদের অবিলম্বে কাজে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। সেই নির্দেশ অমান্য করে কর্মবিরতি জারি রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন চিকিৎসকরা। তাঁদের দাবি না মানলে কিছুতেই কাজে যোগ দেবেন না, এমনই জানিয়েছে ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্ট।

পাঁচ দফা দাবি নিয়েই মঙ্গলবার ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্ট-এর ডাকে স্বাস্থ্য ভবন অভিযান। করুণাময়ী থেকে স্বাস্থ্য ভবন পর্যন্ত পাঁচ দফা দাবি-সহ স্বাস্থ্য সচিব এবং স্বাস্থ্য অধিকর্তার পদত্যাগের দাবিতে আজ মিছিল করবেন জুনিয়র ডাক্তাররা। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। বিচারের দাবিতে অনড় জুনিয়র ডাক্তাররা। জানা গিয়েছে মোট পাঁচটি ট্রাকে করে যাবেন ডাক্তাররা।

আরও পড়ুন- ‘ডাক্তারবাবু মিথ্যা কথা বলছেন!’ সন্তান হারিয়ে ফের RG kar নিয়ে বিস্ফোরক কোন্নগরের সেই মা

অন্য দিকে, মঙ্গলের সকাল থেকেই আরজিকর হাসপাতালে নিরাপত্তার কড়াকড়ি। কেন্দ্রীয় বাহিনী, পুলিশ ও হাসপাতালের নিরাপত্তারক্ষী রয়েছে গেটে। আরজি কর মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চ স্পষ্ট জানিয়েছে, মঙ্গলবার বিকেল ৫টার মধ্যে কাজে যোগ দিতে হবে জুনিয়র চিকিৎসকদের।

সোমবার রাতে জুনিয়র চিকিৎসকরা সাংবাদিক বৈঠকে জুনিয়র চিকিৎসকদের কাজে যোগ দেওয়ার নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁরা বলেন, ‘‘শুধুমাত্র জুনিয়র চিকিৎসকরা স্বাস্থ্যব্যবস্থার অংশ নয়। জুনিয়র চিকিৎসকদের কর্মবিরতির ফলে স্বাস্থ্যব্যবস্থা যদি ভেঙে পড়ে, তবে তা রাজ্যের সরকারি হাসপাতালগুলিতে যথেষ্ট সংখ্যায় সিনিয়র ডাক্তার-নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীর অভাবের দিকে ইঙ্গিত করছে।” তাঁদের অভিযোগ, ‘‘পুলিশি গাফিলতির ব্যাপারে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। স্বাস্থ্য দুর্নীতির বিষয়েও বাস্তবে কোনও পদক্ষেপ হয়নি। সন্দীপ ঘোষ, অভিক দে বা বিরূপাক্ষ বিশ্বাসকে সাসপেন্ড করা অনেকটা শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মতো হল।”

আরও পড়ুন- কোনও দিন বুড়ো হয় না, বয়স বাড়লেও আবার কমে যায়! জানেন কোন প্রাণী?

ইতিমধ্যেই বিনা চিকিৎসায় বহু রোগীর মৃত্যু হয়েছে রাজ্যে, এমনই খবর। সেই পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য পরিষেবার হাল ফেরাতে জেলাশাসকদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছেন স্বাস্থ্য সচিব ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কাজে ফেরার জন্য সময়ও বেঁধে দেওয়া হয় জুনিয়র ডাক্তারদের।

এদিকে, পাঁচ দফা দাবিতে অনড় আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা। সেই তালিকায় যুক্ত হয়েছে স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা, স্বাস্থ্য অধিকর্তা এবং প্রিন্সিপাল সেক্রেটারির পদত্যাগ। পাশাপাশি স্বাস্থ্যব্যবস্থার ‘দুষ্ট’চক্র নিয়েও স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বিবৃতিও দাবি করেছেন। এই সমস্ত দাবি নিয়ে মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় করুণাময়ী থেকে স্বাস্থ্যভবন অভিযানের ডাক দিয়েছেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। বিকেল ৫টার মধ্যে দাবিপূরণ না হলে স্বাস্থ্যভবনের সামনেই অনির্দিষ্টকালের জন্য অবস্থানে বসবেন চিকিৎসকরা। পাঁচ দফা দাবি কী কী?

এক, আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় দোষীদের দ্রুত খুঁজে বের করা, অপরাধের উদ্দেশ্য সামনে আনা এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি।

দুই, তথ্যপ্রমাণ লোপাটের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িতদের চিহ্নিত করে শাস্তির ব্যবস্থা।

তিন, কলকাতা পুলিশের কমিশনার বিনীত গোয়েলের ইস্তফা।

চার, রাজ্যের সব মেডিক্যাল কলেজ, হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

পাঁচ, রাজ্যের সব মেডিক্যাল কলেজ, হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

 চিকিৎসকদের দাবি, বিকেল পাঁচটার মধ্যে রাজ্য সরকার উপরোক্ত দাবিগুলি মেনে নিলে তবেই কাজে ফেরার প্রস্তাব ভাবনাচিন্তার পথে হাঁটবেন। অন্যথায় মনে করা হবে, রাজ্যের এই অচলাবস্থা কাটাতে সরকার আগ্রহী নয়।