Tag Archives: Buddha Purnima
বুদ্ধ পূর্ণিমা: কাহিনী, আচার, বিশেষত্ব একনজরে
বৌদ্ধ ধর্মের প্রবক্তা ভগবান শ্রী বুদ্ধের জন্মতিথি পালিত হয় পূর্ব ও দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে। একে বুদ্ধ পূর্ণিমা বা বুদ্ধ জয়ন্তী নামে অভিহিত করা হয়। নেপালের লুম্বিনী উদ্যানে ৫৬৩-৪৮৩ খ্রিস্ট পূর্বে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। এশিয়ার চন্দ্রমাস অনুযায়ী বুদ্ধের জন্মদিন পালিত হয়। তবে ইংরেজি মতে সেটা এপ্রিল বা মে মাস হতে পারে।যদি লিপ ইয়ার হয় তাহলে এই দিনটি জুন মাসে পালিত হবে।
দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়াতে এই বিশেষ দিনটি বেসাক বলীক্তি উৎসবের অংশ হিসাবে পালিত হয়। এখানে বুদ্ধের জন্ম, তাঁর বোধি লাভ ও মৃত্যু সবটাই যুক্ত থাকে। কিন্তু পূর্ব এশিয়া, ফিলিপিন্স ও ভিয়েতনামে বোধি লাভ ও মৃত্যু আলাদা ভাবে পালিত হয়।
তারিখ
মূলত বৌদ্ধ ক্যালেন্ডারের বৈশাখ মাসে এবং বিক্রম সম্বত মেনে এই দিনটি পালিত হয়। বেসাখ উৎসব এই বৈশাখ নাম থেকেই এসেছে। ভারত এবং নেপালে যেখানে বুদ্ধ জন্মেছেন এবং তাঁর জীবন অতিবাহিত করেছেন সেখানে এই দিনটি পূর্ণিমা তিথিতে বৈশাখ মাসে পালিত হয়।
দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং মঙ্গোলিয়া
ফিলিপাইন ও ভিয়েতনাম ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার দেশেগুলিতে বৈশাখ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে দিনটি পালিত হয়। একে বুদ্ধ জয়ন্তীও বলা হয়। সংস্কৃতে জয়ন্তী শব্দের অর্থ জন্মদিন।
পূর্ব এশিয়া, ভিয়েতনাম ও ফিলিপাইন
উল্লেখিত দেশগুলিতে এই দিনটি চতুর্থ মাসের চতুর্থ দিনে পালিত হয়। সেটা করা হয় চৈনিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী। হংকং , ম্যাকাও ও দক্ষিণ কোরিয়াতে সেইদিন সরকারি ছুটি থাকে।
তাইওয়ান
১৯৯৯ সাল থেকে তাইওয়ান সরকার মে মাসের দ্বিতীয় রবিবারকে বুদ্ধের জন্মদিন হিসাবে ঘোষণা করেছেন। একই দিনে ওখানে মাদারস ডেও পালিত হয়।
জাপান
মেইজি রেসটোরেশনের পর জাপান ১৮৭৩ সালে চৈনিক চন্দ্র ক্যালেন্ডারের বদলে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার গ্রহণ করে। তবে এই ক্যালেন্ডার কার্যকরী হতে অনেক সময় লেগেছিল। এখন জাপানে এপ্রিল মাসের চার তারিখে এই দিনটি পালিত হয়। একমাত্র ওকিনাওয়াতে চৈনিক ক্যালেন্ডার মেনে চতুর্থ চন্দ্রমাসের অষ্টম দিনে এই দিনটি উদযাপন করা হয়ে থাকে।
এশিয়ার অন্যান্য দেশে –
বাংলাদেশ
এটি বাংলাদেশে একটি সরকারি ছুটির দিন। বৌদ্ধ ভিক্ষু এবং পুরোহিতরা বৌদ্ধ মন্দিরগুলিকে রঙিন সাজ-সজ্জা এবং মোমবাতি দিয়ে সাজান। বুদ্ধের কাছে একটি প্রার্থনা করা হয়, এবং ভক্তরা তখন মোমবাতি জ্বালান এবং তিনটি রত্ন এবং পাঁচটি উপদেশ পাঠ করে।
ভুটান
ভুটানে, বুদ্ধ পরিনির্বাণ একটি জাতীয় ছুটির দিন এবং সাগা দাওয়ার (তিব্বতি ক্যালেন্ডারের চতুর্থ মাস) পনেরোতম দিনে সাগা দাওয়া হিসাবেও পালিত হয়। ভক্ত এবং অনুগামীরা সাগা দাওয়া মাস জুড়ে নিরামিষ খাবার খান।
কাম্বোডিয়া
কাম্বোডিয়ায় বুদ্ধের জন্মদিনটি ভিসাক বোচিয়া হিসাবে পালিত হয়। এটি সরকারি ছুটির দিন।
চিন
চিনে, এই উদযাপন বৌদ্ধ মন্দিরে হয়। ভক্তরা ধূপ জ্বালান এবং সন্ন্যাসীদের জন্য খাবারের নৈবেদ্য নিয়ে আসেন।
হংকং
হংকংয়ে বুদ্ধের জন্মদিন সরকারি ছুটির দিন। বুদ্ধের জ্ঞানার্জনের প্রতীক হিসাবে লণ্ঠন জ্বালানো হয় এবং অনেক ভক্ত শ্রদ্ধা জানাতে মন্দিরে যান।
ভারত
ভারতে বুদ্ধ পূর্ণিমার জন্য সরকারি ছুটির সূচনা করেছিলেন বি.আর. আম্বেদকর। এটি বিশেষ করে সিকিম, লাদাখ, অরুণাচল প্রদেশ, বোধগয়া, লাহৌল এবং স্পিতি জেলা, কিন্নর, উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন অংশ যেমন কালিম্পং, দার্জিলিং এবং কার্সিয়াং এবং মহারাষ্ট্রে পালিত হয়।
ভারতের বোধগয়ার মহাবোধি মন্দিরে, বুদ্ধ পূর্ণিমা অত্যন্ত বিশষ ভাবে পালিত হয়। এই মন্দিরটি রঙিন সাজে সজ্জিত হয়। যে বোধিবৃক্ষের নিচে গৌতম বুদ্ধ জ্ঞান লাভ করেছিলেন, সেখানে গৌতম বুদ্ধের ভক্তরা বিশেষ প্রার্থনা করেন। দিল্লির জাতীয় জাদুঘরে, ভগবান বুদ্ধের পবিত্র অবশিষ্টাংশ জনসাধারণের দেখার জন্য সেদিন খুলে দেওয়া হয়।
ইন্দোনেশিয়া ও মালেশিয়া
ইন্দোনেশিয়া ও মালেশিয়াতে বুদ্ধের জন্মদিন ওয়াইসাক হিসাবে পালিত হয় এবং একটি সরকারি ছুটির দিন। ইন্দোনেশিয়াতে একটি বড় শোভাযাত্রা জাভার মেন্ডুতে শুরু হয় এবং বরোবুদুরে শেষ হয়।
জাপান
জাপানে এই দিনটি ৪ এপ্রিল পালিত হয় এবং সেদিন বুদ্ধকে ফুল দিয়ে স্নান করানো হয়।
এছাড়াও মায়ানমার, নেপাল, উত্তর কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, শ্রীলঙ্কা, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামেও এই দিনটি পালিত হয়।
এশিয়ার বাইরে অন্যান্য দেশ
অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, কানাডা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও এই দিনটি পালিত হয়। তবে বিভিন্ন দেশে বৌদ্ধদের ভিন্ন রীতি ও প্রথা অনুযায়ী দিনটি উদযাপিত হয়ে থাকে।