Tag Archives: Cerebral Palsy

World Cerebral Palsy Day: সেরিব্রাল পালসি নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ; আলোচনা করছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক

কলকাতাঃ সেরিব্রাল পালসি হল সাধারণ ভাবে একগুচ্ছ স্নায়বিক সমস্যা। এই রোগ আসলে রোগীর নড়াচড়া বা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সঞ্চালন, পেশি সঞ্চালন এবং মোটর স্নায়ুর কার্যকারিতার উপর ব্যাপক ভাবে প্রভাব ফেলে। কিন্তু এটা হয় কেন? কারণ মস্তিষ্কের অস্বাভাবিক বিকাশ অথবা মস্তিষ্কের বিকাশের সময় ক্ষতি হওয়ার ফলেই এমনটা হয়ে থাকে। সাধারণ ভাবে এটা হয় জন্মের একদম পরে পরেই কিংবা জন্মের কিছু সময় পরেই। এই অবস্থার কারণে রোগীর নিজের পেশি নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতার উপর প্রভাব পড়ে। এর ফলে নড়াচড়া এবং হাঁটাচলার ক্ষেত্রেও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারেন রোগী।

আরও পড়ুনঃ মহৌষধ! এই ‘দুই সস্তার ভেষজ’ নিংড়ে নেবে ইউরিক অ্যাসিড! ৭ দিনেই ধরাশায়ী ব্যথা-যন্ত্রণা-ফোলাভাব

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়ে গেল বিশ্ব সেরিব্রাল পালসি দিবস। আসলে প্রতি বছর ৬ অক্টোবর দিনটিতে গোটা বিশ্ব জুড়ে ওয়ার্ল্ড সেরিব্রাল পালসি ডে পালিত হয়। আর এই বিশেষ দিন উপলক্ষে সেরিব্রাল পালসির নানা বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করছেন বারাসত নারায়ণা হাসপাতালের নিউরোলজিস্ট ডা. অম্লান দত্ত। তিনি বলেন যে, সেরিব্রাল পালসি সাধারণত বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। তবে প্রধান ভাবে একে মূল ৪টি ভাগে বিভক্ত করা হয়। যথা – স্প্যাসটিক সেরিব্রাল পালসি, ডিসকাইনেটিক সেরিব্রাল পালসি, অ্যাটাক্সিক সেরিব্রাল পালসি এবং মিক্সড সেরিব্রাল পালসি।

বারাসত নারায়ণা হাসপাতালের নিউরোলজিস্ট ডা. অম্লান দত্ত
বারাসত নারায়ণা হাসপাতালের নিউরোলজিস্ট ডা. অম্লান দত্ত

এর মধ্যে সবথেকে সাধারণ ধরন হল স্প্যাসটিক সেরিব্রাল পালসি। যার জেরে রোগীর পেশি শক্ত এবং দৃঢ় হয়ে যায়। যার ফলে রোগী নড়াচড়া করতেও সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকেন। আর ডিসকাইনেটিক সেরিব্রাল পালসির কারণে রোগী আবার এমন ভাবে নড়াচড়া করতে থাকেন, যেটা তাঁর সম্পূর্ণ অনিচ্ছাতেই হয়ে থাকে। অন্যদিকে অ্যাটাক্সিক সেরিব্রাল পালসি আবার রোগীর ভারসাম্য রক্ষা এবং সমন্বয়ের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। আর মনে রাখা দরকার যে, প্রত্যেক ধরনের সেরিব্রাল পালসির তীব্রতা উল্লেখযোগ্য ভাবে পরিবর্তিত হতে পারে। আর এক্ষেত্রে রোগীর অন্য কারও অল্পস্বল্প সাহায্যের প্রয়োজনও হতে পারে।

ডা. অম্লান দত্ত আবার বলেন যে, সেরিব্রাল পালসির কারণগুলি কিন্তু আলাদা আলাদা হতে পারে। যেমন – প্রিম্যাচিওর বার্থ, জন্মের সময় অক্সিজেনের ঘাটতি, গর্ভাবস্থায় সংক্রমণ এবং জিনগত বিষয়গুলি কিন্তু এর জন্য দায়ী হতে পারে। যদিও এই সমস্যা পুরোপুরি ভাবে নিরাময় হওয়া সম্ভব নয়। তবে সময়ের আগে রোগ নির্ণয় করা গেলে ভাল। আর সেরিব্রাল পালসির ক্ষেত্রে থেরাপির মাধ্যমেও উল্লেখযোগ্য ভাবে জীবনের মান উন্নত করা সম্ভব। এই রোগের চিকিৎসার মধ্যে অন্যতম হল – ফিজিক্যাল থেরাপি, অক্যুপেশনাল থেরাপি এবং স্পিচ থেরাপি। মূলত এক-এক রোগীর চাহিদার উপর নির্ভর করেই এই থেরাপি করা হয়।

যাঁদের সেরিব্রাল পালসি রয়েছে, তাঁদের সাধারণত বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়। এর মধ্যে অন্যতম হল – নড়াচড়া করার সমস্যা, কারও সঙ্গে কথাবার্তা বলতে অসুবিধা এবং সম্ভাব্য জ্ঞানসম্বন্ধীয় প্রতিবন্ধকতা। যদিও সেরিব্রাল পালসির বহু রোগীই কিন্তু সুন্দর ভাবে স্বচ্ছন্দে জীবনযাপন করতে পারেন। এমনকী অনেক সময় দৃঢ় সঙ্কল্পের মাধ্যমে তাঁদের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতেও দেখা যায়। আর রোগীরা যাতে স্বাধীন ভাবে জীবনযাপন করতে পারেন এবং নিজেদের দৈনিক কাজ নিজে নিজেই করতে পারেন, তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে অ্যাসিস্টিভ টেকনোলজি এবং অ্যাডাপ্টিভ ইক্যুইপমেন্টস।

আরও পড়ুনঃ ‘মোটা’দের মহাশত্রু! হার্টের প্রিয়বন্ধু! জোয়ানের সঙ্গে মিশিয়ে খান এই ‘জিনিস’! পুরো জীবনের ভোলবদল

সেই সঙ্গে সচেতনতার বিষয়টির উপরেও জোর দিয়েছেন ডা. অম্লান দত্ত। তাঁর বক্তব্য, সেরিব্রাল পালসি সম্পর্কে সাধারণ মানুষের সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি। সেই সঙ্গে এই সমস্যাটাকে বোঝাটাও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। আসলে এই অবস্থার বিষয়ে শিক্ষা কিংবা পড়াশোনা থাকলে তা সামাজিক কলঙ্ক হ্রাস করতে সহায়ক হয়ে ওঠে। সেই সঙ্গে সমাজে রোগীর গ্রহণযোগ্যতাও বৃদ্ধি পায়। যাঁরা সেরিব্রাল পালসির সমস্যায় ভুগছেন, তাঁদের জীবনের মান উন্নত করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে উন্নত স্বাস্থ্য পরিষেবা, অ্যাক্সেসিবিলিটি এবং সাপোর্ট সার্ভিস।

সহজ ভাবে সরল ভাষায় বলতে গেলে সেরিব্রাল পালসি হল অত্যন্ত জটিল একটি সমস্যা। এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে একাধিক ধরনের চ্যালেঞ্জ। সেরিব্রাল পালসির মতো রোগ মোটর স্নায়ুর কার্যকারিতার উপর প্রভাব বিস্তার করে। এমনকী জীবনের অন্যান্য দিকগুলির উপর এর প্রভাব পড়তে পারে। তবে সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় এবং সমাজের থেকে পর্যাপ্ত সমর্থন পাওয়া গেলে সেরিব্রাল পালসি রোগীরা সুন্দর ভাবে জীবনযাপন করতে পারবেন। এমনকী সেই রোগীরা সমাজ এবং সম্প্রদায়ের উপর অর্থবহ ভাবে নিজেদের অবদান রাখতে পারেন। যেহেতু আমরা সেরিব্রাল পালসি রোগীদের সুস্থ আর স্বাভাবিক জীবনে দেখতে চাই, তাই তাঁদের মধ্যে থাকা ক্ষমতা এবং সম্ভাবনাকে স্বীকৃতি দেওয়া অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। আর এর মাধ্যমেই আমরা আরও ন্যায়সঙ্গত এক বিশ্ব গড়ে তুলতে সক্ষম হব।