কলকাতা: ৯ অগাস্ট। খাস কলকাতার বুকে আরজি কর হাসপাতালে ঘটে যাওয়া নারকীয় ঘটনার রেশ এখনও কাটেনি। বরং গাঢ় হয়েছে সময়ের সঙ্গে। তরুণী চিকিৎসকের নির্মম হত্যার প্রতিবাদের হাত ধরেই কর্মক্ষেত্রে নারী সুরক্ষা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন ওঠে। তার এক মাস কাটতেই আরও এক দুর্ঘটনা। এবার কাঠগড়ায় টলিউড।
হেয়ার ড্রেসার গিল্ড এবং ফেডারেশনের ‘আঁতাতে’ একের পর এক কাজ হারানোর অভিযোগ তোলেন মহিলা কেশসজ্জা শিল্পী। অভিযোগ বার্তায় নিজের দুরবস্থার কথা জানিয়ে আত্মহননের পথ বেছে নেন। গায়ে আগুন লাগিয়ে নিজেকে শেষ করে দেওয়ার চেষ্টা করেন বলে দাবি করা হয়। তড়িঘড়ি তাঁকে ভর্তি করানো হয় দক্ষিণ কলকাতার এক হাসপাতালে। প্রাণে বেঁচে যান তিনি। আপাতত সকলে স্বস্তির শ্বাস ফেললেও টলিউডের নানা বিভাগে কর্মরত মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসছে জমা ক্ষোভ।
অভিনেত্রী সুদীপ্তা চক্রবর্তী একটি ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে বিষয়টি প্রকাশ্যে আনেন। দুঃসংবাদ পাওয়া মাত্রই হাসপাতালেও ছুটে যান। সুদীপ্তার সেই পোস্ট শেয়ার করে অভিযোগকারিণীর পাশে থাকার বার্তা দেন গায়িকা ইমন চক্রবর্তী। আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে একাধিক মিছিলে পা মেলানো গায়িকা এবার যেন বিধ্বস্ত। নিউজ18 বাংলাকে তিনি বলেন, “একদম আর পারছি না এসব সহ্য করতে। তাই আর কিছু বলারও ক্ষমতা নেই।”
সেই কেশসজ্জা শিল্পীর অভিযোগের ভিত্তিতে ফেডারেশনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সংগঠনের সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস জানান, ‘সুরক্ষা বন্ধু’ কমিটির সদস্যদের অভিযোগকারিণীর সঙ্গে যোগাযোগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাঁর সমস্যাগুলি জেনে গিল্ডের সঙ্গে দ্রুত আলোচনা করে সেগুলি মেটানোর চেষ্টা করা হবে বলেও আশ্বাস দেন তিনি।
অভিযোগকারিণী কি আদৌ সুবিচার পাবেন? ইন্ডাস্ট্রিতে মহিলাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আরও সক্রিয় হওয়ার সময় কি আসেনি? নিউজ18 বাংলার পক্ষ থেকে প্রশ্ন রাখা হয় মেদিনীপুরের তৃণমূল সাংসদ তথা অভিনেত্রী জুন মালিয়ার কাছে। তাঁর সংক্ষিপ্ত উত্তর, “আমি একটি কাজের মধ্যে আছি। ফলে এই বিষয়ে সম্যক ধারণা নেই। সবটা জেনেই মন্তব্য করা উচিত বলে মনে করি।”
অভিযোগকারিণীর সঙ্গে দীর্ঘ দিনের আলাপ শোলাঙ্কি রায়ের। স্বাভাবিক ভাবেই এই দুর্ঘটনা গভীর ক্ষত তৈরি করেছে তাঁর মনে। অভিনেত্রীর কথায়, “কতিপয় মানুষের হাতে প্রচুর ক্ষমতা থাকলে তার অপব্যবহার হয় সবচেয়ে বেশি। এই ক্ষেত্রেও হয়তো তাই-ই হয়েছে। যে ব্যবহার অভিযোগকারিণীর সঙ্গে করা হয়েছে, তা মানবিক দিক থেকে কখনওই সমর্থনযোগ্য নয়। কিন্তু আইনি ভাবেও এমনটা করা যায় কি? আমার জানা নেই।”
এখানেই থামেননি শোলাঙ্কি। তাঁর বক্তব্য, “কে বা কারা এই ধরনের কাজগুলো করছেন, সেটা প্রত্যেকেরই জানা। কিন্তু অনেক সময় পেশার তাগিদে চুপ করে থাকতে হয়। আসলে কান টানলেই মাথা আসে। সমবেত হয়ে প্রতিবাদের সময় এসেছে। তা হলে যদি এই চিত্র কিছুটা বদলায়…”
আরও পড়ুন: ননদ শ্বেতার জন্যই ভাঙছে বিয়ে? ঐশ্বর্যকে নিয়ে ‘বিস্ফোরক’ মন্তব্য অভিষেকের দিদির
আরও পড়ুন: সলমনের বাড়ির জিমে ঐশ্বর্য…! ‘প্রেমটা অনেক দূর গড়াবে’, কোন গোপন কথা এবার ফাঁস
শোলাঙ্কির মতোই নারী সুরক্ষা নিয়ে সোচ্চার ঊষসী রায়। আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে দিন-রাত এক করে নানা মিছিলে হেঁটেছেন নায়িকা। গলা ফাটিয়েছেন বিচার চেয়ে। অভিযোগকারিণীর সঙ্গে তাঁরও বহু দিনের পরিচয়। নিউজ18 বাংলার তরফে যোগাযোগ নায়িকার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। ঊষসীর সাফ বক্তব্য, “আরজি করের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বহু মানুষ রাস্তায় নেমেছেন। তাঁদের প্রতিবাদের স্বরে কিন্তু প্রচুর দুঃখ-কষ্ট-যন্ত্রণাও মিশেছিল। সহজাত ভাবেই বিরাট অসুবিধায় না পড়লে আমরা মুখ খুলতে চাই না। খুব ভয়ঙ্কর কিছু ঘটলে নিজেদের জীবনের ক্ষতগুলোও বেরিয়ে আসে।”
ঊষসী মনে করেন, শুধু টলিউডই নয়, সব ধরনের কাজের ক্ষেত্রেই ‘থ্রেট কালচার’ রয়েছে। রাজনীতির শিকার হতে হয় অনেককে। শোলাঙ্কির মতোই অভিযোগকারিণীর প্রতি গিল্ড-ফেডারেশনের আচরণ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। ঊষসীর কথায়, “শোষিতদের বুঝিয়ে দিতে হবে যে, তাঁরা একা নন। আমরাও আছি তাঁদের সঙ্গে। আজ থেকে তিন-চার মাস আগে এই ঘটনা ঘটলেও হয়তো এত জোর দিয়ে এই কথাগুলো বলতে পারতাম না। কিন্তু একটা নির্মম ঘটনা আমাদের অনেকটা সাহসী করে দিয়েছে। প্রয়োজনে সুবিচার পেতে আইনি সাহায্য নিতে হবে। নিজেদের শিক্ষিত করে প্রতিবাদের পথে হাঁটতে হবে।”