বিল পাসেই কি ধরা পড়বে ধর্ষক? কতটুকু বদলাল আইন? জেনে নিন 'অপরাজিতা' ইতিবৃত্ত

Anti Rape Bill: বিল পাসেই কি ধরা পড়বে ধর্ষক? কতটা সুরক্ষিত হল মেয়েরা? জানুন ‘অপরাজিতা’ ইতিবৃত্ত

কলকাতা:  ধর্ষণ রুখতে মঙ্গলবার বিধানসভায় পাস হল ‘অপরাজিতা বিল ২০২৪’। অপরাজিতা বিল প্রসঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘‘এই বিল একটা ইতিহাস! প্রধানমন্ত্রী পারেননি। আমরা পারলাম। করে দেখালাম। প্রধানমন্ত্রী দেশের লজ্জা! উনি মেয়েদের রক্ষা করতে পারেননি। আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করছি। ’’

আরজি কর-কাণ্ডের আবহে ধর্ষণ, মহিলা নির্যাতন রুখতে কড়া আইন আনার দাবি উঠেছে। তৃণমূলের তরফে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম ওই দাবি জানান সমাজ মাধ্যমে একটি পোস্ট করে। রাজ্য সরকারকে এ ব্যাপারে কেন্দ্রের উপর চাপ দেওয়ার পরামর্শও দেন। পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখে ওই আইন আনার দাবি জানান।  কেন্দ্রের তরফে শুরুতে তেমন উদ্যোগ দেখা না গেলেও, অবশেষে মঙ্গলবার পাস হল সেই আইন। এ বার থেকে এ রাজ্যে ধর্ষণের সাজা হবে জরিমানা-সহ যাবজ্জীবন কারাবাস, নয়তো মৃত্যু।

আরও পড়ুন- দিনে খরচ হচ্ছে ৬ কোটি! জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতির জেরে বেসামাল ‘স্বাস্থ্যসাথী’?

অপরাজিতা বিলের ৩ বৈশিষ্ট্যের উল্লেখ করেন মমতা। মমতা জানান, ‘অপরাজিতা’ টাস্ক ফোর্স ভারতীয় দণ্ডবিধিকে না বদলেই তৈরি। শুধু আইনের ‘ফাঁক’ সংশোধন করা হল বলেই জানান মুখ্যমন্ত্রী।  এই আইনের ৩ বৈশিষ্ট্য। বর্ধিত শাস্তি, দ্রুত তদন্ত, দ্রুত ন্যায় বিচার।

আরও পড়ুন- পটলের ইংরেজি কী? বলতে পারবেন না বেশিরভাগই…! চ্যালেঞ্জ নেবেন নাকি? মেলান উত্তর

ভারতীয় ন্যায় সংহিতা ও ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতার, যৌন নির্যাতন, ধর্ষণ ও গণধর্ষণ সংক্রান্ত যে আইন রয়েছে, বাংলার ক্ষেত্রে তার কিছু সংশোধন আনা হচ্ছে। চটজলদি বিচারের জন্য শুধুমাত্র বাংলার ক্ষেত্রে কয়েকটি ধারা যোগ করা হচ্ছে। নারী ও শিশুদের ক্ষেত্রে নিরাপদ পরিবেশ তৈরির জন্য। তাই বেশ কিছু বিধি যোগ হচ্ছে নতুন বিলে। এই আইন প্রনয়ণের পর দোষীকে সাজা দিতে দেরি হওয়ার জায়গা নেই। শাস্তিও সর্বোচ্চ। যাবজ্জীবন কারাবাস বা ফাঁসি হবে ধর্ষকের, দাবি মমতার।

কী কী আছে ‘অপরাজিতা বিল ২০২৪’-এর প্রস্তাবে?

১। ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৪ ধারায় ধর্ষণের সাজা অন্তত ১০ বছর কারাদণ্ড, যা যাবজ্জীবনও হতে পারে। সঙ্গে জরিমানার বিধান রয়েছে। কিন্তু রাজ্যের সংশোধনী বিলে ধর্ষণের সাজা আমৃত্যু কারাদণ্ড। সঙ্গে জরিমানা। এমনকি, মৃত্যুদণ্ডও হতে পারে বলে জানানো হয়েছে।

২। জরিমানার টাকায় নির্যাতিতার চিকিৎসা, পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। বিশেষ আদালতের নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সেই জরিমানার টাকা দিতে হবে, যেমনটা ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা ২০২৩-এর ৪৬১ ধারায় উল্লেখ করা রয়েছে।

৩। ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৫ ধারা মুছে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে ‘অপরাজিতা মহিলা এবং শিশু (পশ্চিমবঙ্গ অপরাধ আইন সংশোধনী) বিল ২০২৪’-এ। ওই ধারায় ধর্ষণের কিছু মামলায় সাজার উল্লেখ রয়েছে। ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৬, ৭০, ৭১, ৭২, ৭৩, ১২৪ ধারাতেও বদল আনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বিলে।

৪। ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা ২০২৩-এর আইনে নতুন ধারা যোগের প্রস্তাবও আনা হয়েছে বিলে। ৪৬ নম্বর ধারার ৩এ উপধারায় নতুন ধারা যোগ করে ‘বিশেষ আদালত’ প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে। প্রতি জেলায় তৈরি করতে হবে এই আদালত, যেখানে ধর্ষণের মামলার বিচার হবে।

৫। বিচার করবেন রাজ্যের দায়রা বিচারক বা অতিরিক্ত দায়রা বিচারক। কলকাতা হাই কোর্টের সম্মতি নিয়েই চলবে বিচার। সরকার নির্যাতিতার হয়ে মামলা লড়ার জন্য স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর নিয়োগ করবে। সেই  ব্যক্তির কমপক্ষে সাত বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।