অসুস্থ বাবার জন্য কলকাতায় আসাই কাল, মৃত্যু নিশ্চিত বুঝে বাকিদের বাঁচিয়ে গেলেন সৌরভ?

Cyclone Dana Kolkata: অসুস্থ বাবার জন্য কলকাতায় আসাই কাল, মৃত্যু নিশ্চিত বুঝে বাকিদের বাঁচিয়ে গেলেন সৌরভ?

কলকাতা: ভবানীপুর জাস্টিস দ্বারকানাথ রোডে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু সৌরভ প্রসাদ গুপ্তার। মৃতের বাবার নাম গণেশ প্রসাদ গুপ্তা। আদতে এলাহাবাদের বাসিন্দা এবং সৌরভ বিএ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিল। বাবা গনেশ প্রসাদের ভুজিয়া এবং ভাজা ভুজির দোকান ছিল এই দুর্ঘটনার স্থলে ঠিক পাশেই জাস্টিস দ্বারকানাথ রোডে। বাবার শরীর খারাপের জন্য এলাহাবাদ থেকে কলকাতায় এসে বাবার ব্যবসা সামলাতে শুরু করে ২২ বছর বয়সী সৌরভ।

গত শুক্রবার প্রবল দুর্যোগ শুরু হয়েছিল এবং তার ফলে গোটা কলকাতার মতো এই জাস্টিস দ্বারকানাথ রোড হাঁটু সমান জলমগ্ন হয়ে পড়েছিল। স্থানীয়দের বক্তব্য বিকেল চারটে নাগাদ দুপুরের খাওয়া-দাওয়া করতে বেরিয়েছিলেন সৌরভ। বিকেল ৪:৪৫ নাগাদ সে যখন তার দোকানের দিকে ফিরে আসে তখনই ঘটে বিপত্তি। দোকানের ঠিক আগেই ‘জাস্টিস কোর্ট’ নামে একটি বহুতল রয়েছে।

আরও পড়ুন: ল‍্যাপটপ, কম্পিউটারের কি-বোর্ডে F এবং J অক্ষরের উপর দাগ থাকে কেন বলুন তো? কারণটা জানলে মাথা ঘুরে যাবে

সেই বহুতলের পাঁচিলে লাগানো লোহার রেলিংয়ের সঙ্গে লোহার শিকল দিয়ে বাধা ছিল একটি ঠেলাগাড়ি। জলমগ্ন অবস্থায় রাস্তা দিয়ে গাড়ি যাতায়াত করছিল। গাড়ির থেকে ছিটকে আসা জল থেকে বাঁচতে সৌরভ ফুটপাত ঘেঁষে আসছিল এবং সেই সময় সামাল দেবার জন্য তার হাত পড়ে যায় ওই ঠেলাগাড়ির উপর। জলমগ্ন অবস্থায় তার উপরে পাঁচিলে থাকা লাইটের বিদ্যুৎ সংযোগ চালু ছিল। সেই অবস্থায় পাঁচিলের লোহার রেলিং-সহ সেখানে বাঁধা ঠেলাগাড়ি সবটাতেই কোনও কারনে বিদ্যুৎ ছড়িয়ে পড়ে।

ঠেলাগাড়িতে হাত পড়তেই বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে পড়েন সৌরভ। মরণ যন্ত্রনায় চিৎকার করে ওঠেন। তার চিৎকার শুনে তড়িঘড়ি ছুটে আসেন স্থানীয় দুই কিশোর নিখিল প্রসাদ এবং শিবা প্রসাদ। কিন্তু নিজের মৃত্যু আসন্ন জেনেও সৌরভ বাঁচাবার জন্য তাদেরকে তার কাছে আসতে বারণ করেন। প্রত্যক্ষদর্শী কিশোরের মতে তখন লোহার রেলিং এবং শিকলের একটা অংশ পুরো উত্তপ্ত হয়ে লাল হয়ে গিয়েছিল।

আরও পড়ুন: কুকারের সিটি বাজার সঙ্গে সঙ্গেই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ছে জল, চাল, ডাল! ঢাকা লাগানোর আগে শুধু করুন ছোট্ট কাজ…ঝামেলা থেকে মুক্তি

তারা তৎক্ষণাৎ ফ্ল্যাটের সামনে থাকা দোকানদার এবং সিকিউরিটি গার্ডকে ডেকে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার জন্য চেঁচাতে থাকেন কিন্তু কেউ তখনও সাড়া দেয়নি বলে অভিযোগ। প্রায় মিনিট ১৫-২০ পরে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয় বলে অভিযোগ। সে সময় জলমগ্ন থাকা অবস্থাতে প্রথম দফাতে সৌরভের শরীরটিকে খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে বাঁশ দিয়ে ঠেলে কোনওমতে স্থানীয় যুবকরা তাকে খুঁজে উদ্ধার করে শম্ভুনাথ পন্ডিত হসপিটালে নিয়ে গেলে সেখানেই তাকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়।

মৃতের বাবা-মা খবর পেয়ে এলাহাবাদ থেকে পরিবার পরিজনের সঙ্গে রওনা দিয়েছেন কলকাতার উদ্দেশ্যে। বহুতলটির মেনটেনেন্স-এর গাফিলতির অভিযোগ তুলে ভবানীপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মৃতের ভাই নীতিশ প্রসাদ গুপ্তা।

বিবেক দাস