বিনোদন Amar Singh Chamkila: চলতি মাসেই ওটিটি-তে মুক্তি পাচ্ছে ‘অমর সিং চমকিলা’; জনপ্রিয় এই সঙ্গীতশিল্পীর মৃত্যু যেন আজও রহস্য! Gallery April 1, 2024 Bangla Digital Desk পঞ্জাবি গায়ক অমর সিং চমকিলার অকথিত গল্পের সাক্ষী থাকতে চলেছে গোটা বিশ্ব। জনপ্রিয় চিত্রপরিচালক ইমতিয়াজ আলি পরিচালিত ‘অমর সিং চমকিলা’ মুক্তি পাচ্ছে চলতি মাসেই। স্বাভাবিক ভাবেই এই ছবিকে ঘিরে ভক্তদের প্রত্যাশা তুঙ্গে! আসলে ২০২২ সালে পঞ্জাবি গায়ক সিধু মুসেওয়ালাকে হত্যা করা হয়েছিল। সেই ধাক্কা এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি গোটা দেশ। আর এহেন পরিস্থিতিতে ‘অমর সিং চমকিলা’ ছবির মুক্তি যেন ভক্তদের মধ্যে আরও প্রত্যাশা তৈরি করেছে। আসলে সিধু মুসেওয়ালার মতোই পরিণতি হয়েছিল অমর সিং চমকিলার। সিধুর ঘটনার কয়েক দশক আগে পঞ্জাবিদের মনে রীতিমতো রাজত্ব করতেন লোকসঙ্গীত শিল্পী অমর সিং চমকিলা। পঞ্জাবের মেহসামপুরে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য গাড়ি থেকে বেরোতেই তাঁকে গুলি করে খুন করা হয়েছিল। আগামী ১২ এপ্রিল ওটিটি প্ল্যাটফর্ম নেটফ্লিক্সে আসছে ‘অমর সিং চমকিলা’। ওই ছবিতে অমর সিং চমকিলার ভূমিকায় দেখা যাবে দিলজিৎ দোসাঞ্জকে। অন্যদিকে ওই সঙ্গীতশিল্পীর স্ত্রী অমরজ্যোতের ভূমিকায় অভিনয় করবেন পরিণীতি চোপড়া। আর এই ছবির গীতিকার কিংবদন্তি এআর রহমান। গত ২৮ মার্চ প্রকাশ্যে এসেছিল এই বহু প্রতীক্ষিত এই ছবির ট্রেলার। কিন্তু কে এই অমর সিং চমকিলা? ১৯৬০ সালের ২১ জুলাই জন্ম এই পঞ্জাবি গায়কের। ধন্নি রাম হিসেবে জন্মগ্রহণ করেছিলেন তিনি। ভারতের পঞ্জাবের লুধিয়ানার নিকটবর্তী দুগরি গ্রামে জন্মগ্রহণ করা এই গায়ক ‘পঞ্জাবের এলভিস’ নামে প্রসিদ্ধ ছিলেন। শৈশব থেকেই গানের প্রতি টান ছিল করতার কৌর এবং হরি সিং সান্ডিলার কনিষ্ঠ সন্তান অমর সিং চমকিলার। যদিও প্রথম দিকে ইলেকট্রিশিয়ান হওয়ার ইচ্ছা ছিল তাঁর। তবে কাপড়ের কারখানায় কাজ নিয়ে মোজা তৈরি করতেন তিনি। কিন্তু গানের প্রতি গভীর অনুরাগ থেকেই তিনি মঞ্চে গান গাইতে শুরু করেন। ধীরে ধীরে আঞ্চলিক সঙ্গীত জগতে জনপ্রিয়তা লাভ করতে থাকেন। Photo: Social Media হারমোনিয়াম আর ঢোলকি সহযোগে খুব ছোট বয়সেই শুরু হয় অমরের সঙ্গীতের কেরিয়ার। বড় শিল্পী হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। একবার তিনি বাইসাইকেলে চেপে পঞ্জাবি গায়ক সুরিন্দর শিন্ডার পিছু নিয়েছিলেন। মাত্র ১৮ বছর বয়সে শিন্ডা, কে দীপ এবং মহম্মদ সাদিকের মতো জনপ্রিয় গায়কদের সঙ্গে পারফর্ম করতে শুরু করেন অমর। মহিলা গায়িকা সুরিন্দর সোনিয়ার সঙ্গে প্রথম তাঁর প্রথম পার্টনারশিপ। আশির দশকে তাঁরা একসঙ্গে প্রচুর গান গেয়েছেন। আর অ্যালবামেও কাজ করেছেন। ওই সময়েই অমরেরপ্রথম রেকর্ড করা গান ‘তাকু তে তাকুয়া’ সঙ্গে সঙ্গেই হিট হয়। আর পঞ্জাব জুড়ে রাতারাতি তারকা হয়ে যান অমর। মঞ্চে পরিচিত হন ‘অমর সিং চমকিলা’ হিসেবে। এরপর পঞ্জাব ছাড়িয়ে তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে দেশ-বিদেশেও। এরপর সোলো কেরিয়ারের পথে এগোন অমর। নিজের ব্যান্ড তৈরি করেন। গায়িকা অমরজ্যোতের সঙ্গে আলাপ হয়। তাঁকেই বিয়ে করেন জনপ্রিয় গায়ক। চমকিলা এবং অমরজ্যোতের গান অচিরেই মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে নেয়। গ্রাম-শহর মিলিয়ে একের পর এক শো চলতে থাকে এই জুটির। এমনকী, গুলজার সিং শৌঙ্কির লেখা চমকিলার জীবনী ‘আওয়াজ মর্দি নেহি’ থেকে জানা গিয়েছে যে, একটা সময় ছিল, যখন বছরের ৩৬৫ দিনে ৩৬৬টি শো থাকত অমর সিং চমকিলার। পঞ্জাবি পপ সংস্কৃতির প্রথম সুপারস্টার হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছিলেন জনপ্রিয় এই গায়ক। তবে তাঁকে নিয়ে বিতর্কও কম হয়নি। পঞ্জাবি পুরুষদের মধ্যে মাদক সেবন, বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক এবং রাগ-আক্রোশের বিষয়গুলি গানের মাধ্যমে তুলে ধরতেন অমর সিং চমকিলা। যার জেরে পঞ্জাবিদের ক্ষোভের মুখেও পড়তে হয়েছিল তাঁকে। এমনকী এর জন্য খুনের হুমকিও আসতে শুরু করে। বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে আরও জানা গিয়েছে যে, অমর সিং চমকিলার জনপ্রিয়তা এবং সাফল্য খুব একটা ভাল চোখে দেখেনি খলিস্তানি জঙ্গিরাও। ফলে তারা ওই সঙ্গীতশিল্পীর কাছ থেকে টাকা দাবি করতে শুরু করে। তবে ১৯৮৮ সালের ৮ মার্চ অমর সিং চমকিলার জীবনে এক দুর্ভাগ্যজনক মোড় আসে। পঞ্জাবের মেহসামপুরে অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য গাড়ি থেকে নেমেছিলেন সাতাশ বছর বয়সী অমর সিং চমকিলা। সেই সময় সঙ্গে ছিলেন তাঁর স্ত্রী অমরজ্যোত এবং তাঁদের ব্যান্ডের আরও দুই সদস্যও। দুপুর ২টো নাগাদ গাড়ি থেকে নামতে না নামতেই গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যান তাঁরা। সেই ঘটনার পরে কেটে গিয়েছে কয়েক দশক। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পিছনে থাকা রহস্যের আজও সমাধান হয়নি। এমনকী সেই ঘটনায় অপরাধীরাও কেউ ধরা পড়েনি। অমর সিং চমকিলার মৃত্যু রহস্য নিয়ে একাধিক তত্ত্ব রয়েছে। কেউ কেউ বলেন যে, খলিস্তানি জঙ্গিদের হাতেই নিহত হয়েছিলেন অমর সিং চমকিলা। আবার কারও কারও দাবি, গায়কের শত্রুরাই এই নৃশংস হত্যালীলা চালিয়েছিল।