Narendra Modi Mega exclusive: ঈশ্বর আমাকে দিয়ে এই কাজটি করাতে চান, একান্ত সাক্ষাৎকারে মন খুললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি

লোকসভা নির্বাচন চলছে। ঠিক কী মনে আছে নরেন্দ্র মোদির? তিনি কীভাবে দেখছেন গোটা পরিস্থিতি?

একান্ত সাক্ষাৎকারে মন খুললেন তিনি।

রাহুল জোশি: মোদিজি, নিউজ 18 নেটওয়ার্ককে একান্ত সাক্ষাৎকার দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আপনার ব্যস্ত সূচি থেকে সময় বের করে আমাদের দিয়েছেন। আমরা এই সাক্ষাৎকারটা একটু অন্যভাবে করব। শুরুতে আমরা কিছু বড় ঘটনা সম্পর্কে আপনার কাছে জানতে চাইব। আমার সঙ্গে রয়েছেন, আমার দুই সহকর্মী নিউজ 18 লোকমতের সঞ্চালক বিলাস বড়ে এবং নিউজ 18 কন্নড়ের সম্পাদক হরিপ্রসাদ। এবারের লোকসভা নির্বাচনে মহারাষ্ট্র এবং কর্নাটক দু’টি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য, তাই আমরা ঠিক করেছি, তাঁরাও যাতে আপনাকে কয়েকটা প্রশ্ন করতে পারেন।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি: আপনাকে এবং আপনার দর্শকদের নমস্কার। আপনার সঙ্গে কর্নাটক এবং মহারাষ্ট্রের সাক্ষাৎকারীরা আছে দেখে আমি খুশি। একদিক থেকে আপনি আমাকেই সাহায্যই করেছেন, না হলে আমাকে আলাদা আলাদা তিনটি সাক্ষাৎকারের জন্য আরও বেশি সময় দিতে হত।

প্রশ্ন (রাহুল জোশি): মোদিজি আমরা সারা দেশ ঘুরেছি। দক্ষিণে গিয়েছি, বিহারে ছিলাম আবার মহারাষ্ট্রেও। আমরা বিরোধী দল হোক কিংবা আপনার প্রার্থী, যার সঙ্গেই কথা বলি না কেন, তাঁরা বলেন, “মোদিজি যখন এখানে আসবেন, সব বদলে যাবে”। তাঁরা বলছেন, এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। মোদিজি এখানে এলে হাওয়া ঘুরে যাবে, সব আসনই দখলে আসতে পারে। তাহলে কি ২০২৪-এর নির্বাচন মোদিজির জন্য গণভোট হিসেবে দেখা যায়?

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি: কখন এবং কী ভাবে তাঁরা কোনও বিষয়ের বিশ্লেষণ করবে, এটা সম্পূর্ণ মিডিয়ার উপর নির্ভর করছে। আমি শুধু এটুকুই বলব, নির্বাচন চলাকালীন আমি সরকার পরিচালনা করি না। আমার ১০ বছরের রেকর্ড দেখুন, গড়ে শুক্র, শনি এবং রবিবার দেশের কোথাও না কোথাও গিয়েছি। আমি মানুষের মধ্যে ছিলাম, সেই কারণেই সফর চলছে। আমি বিশ্বাস করি, নির্বাচন গণতন্ত্রের উৎসব, তাই যতটা সম্ভব জনগণের মধ্যে যাওয়া সব রাজনৈতিক দলের কর্তব্য। তাঁদের সঙ্গে আলাপ আলোচনায় যোগ দেওয়া উচিত। নির্বাচন থাকুক আর নাই থাকুক, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে কর্মী হিসেবে জনগণের সঙ্গে দেখা করাকে আমি আমার কর্তব্য মনে করি।

দুই দফার নির্বাচনের কথা বললে, আমি খুব কম ভোটেই এমন জনসমর্থন দেখেছি। একদিক থেকে দেখলে সাধারণ মানুষ এবারের ভোটে লড়ছে। তাঁরা সুশাসনের জন্য লড়াই করছে। আমার মনে হয় আমি হয়ত মাধ্যম। তাই এবার মানুষের কাছে যাওয়ার ব্যাপারে আমি বেশি উৎসাহী কারণ মানুষ যখন এত বড় দায়িত্ব নিয়েছেন, তখন তাঁদের কাছে মাথা নত করে আশীর্বাদ চাওয়াটা আমার কর্তব্য বলে মনে হয়। প্রথম দফা নির্বাচনের পর কয়েকজন বন্ধুকে বলেছিলাম, যাঁরা আমাদের বিরুদ্ধে প্রচার চালাচ্ছিল তাঁরা শেষ। দ্বিতীয় রাউন্ডে তাঁদের চূর্ণবিচূর্ণ করে দিয়েছে মানুষ। প্রথমে মানুষ তাঁদের ধ্বংস করেছে, এখন নিজেরাই নিজেদের শেষ করছে তারা।

প্রশ্ন (রাহুল জোশি): মোদিজি আপনি উচ্চ স্তরে গ্রামে প্রচার শুরু করেছেন। সরকারের কাজের খতিয়ান পেশ করছেন। উন্নয়নের অ্যাজেন্ডা নিয়ে এগোচ্ছেন। দেশের অর্থনীতিকে মানুষের সামনে তুলে ধরছেন, এর উপর অনেক কাজও হয়েছে। কিন্তু দু’দফার পর আপনি রাজস্থানের জনসভা থেকে কংগ্রেসকে ইস্তেহার নিয়ে আক্রমণ করলেন। আপনি এও বলছেন যে, ওরা একটা স্কিমের মাধ্যমে সম্পদের পুনর্বন্টন করতে চায়। তারা জানতে চায় কার কত সঞ্চয় আছে, কার কত টাকা আছে, কার কাছে কত সোনা, রুপো আছে এবং তারা সেই সম্পদ মুসলমান ও অনুপ্রবেশকারীদের মধ্যে ভাগ করে দিতে চায়। এই হুমকির কি আদৌ বাস্তবতা আছে? আপনি কী এটাকে এভাবেই দেখছেন?

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি: আমার মনে হচ্ছে, আপনার টিম হয়তো আমার পুরো প্রচার কভার করেনি। অনেক ভাল উন্নয়নমূলক জিনিস রয়েছে যা থেকে হয়ত ভাল টিআরপি আসে না। যাই হোক, আপনি লক্ষ্য করে থাকবেন, আমার পুরো নির্বাচনী প্রচার দুটো জিনিসের উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে। এক, আমরা সমাজের কল্যাণে কাজ করেছি। এই সরকারের সবচেয়ে বড় পার্থক্য (আগেরগুলোর তুলনায়) শেষ মাইল ডেলিভারি। এটাই আমাদের বিশেষত্ব। দেখুন, খারাপ কাজের জন্য কোনও সরকার তৈরি হয় না। সবাই ভাল করতে চায়। কিছু মানুষ জানে কী ভাবে অন্যের ভাল করতে হয়। কিছু মানুষ ভাল কিছু হওয়ার জন্য অপেক্ষা করে। আমি এমন একজন মানুষ যে কঠোর পরিশ্রম এবং কাজে বিশ্বাসী।

আরও পড়ুন – ‘রাজনীতি নষ্ট করে দিয়েছে কলকাতাকে,’ মহারাষ্ট্র যাতে বাংলার পথে ‘নেমে না যায়’…উদ্বেগপ্রকাশ নরেন্দ্র মোদির

আরও পড়ুন – ‘সংখ্যালঘুদের জন্য ২৭ শতাংশ ওবিসি কোটা লুটের চেষ্টা করছে কংগ্রেস’, নিউজ 18-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিস্ফোরক মন্তব্য মোদির

এখন দেখুন, নির্বাচনে আমি একটানা বলছি, আমরা গরিব মানুষের জন্য চার কোটি বাড়ি তৈরি করেছি। অনেককে বলেছি, আপনারা যখন নির্বাচনী প্রচারে যাবেন, যাঁরা বাড়ি পায়নি তাঁদের তালিকা করে আমাদের পাঠান। আমার তৃতীয় মেয়াদ শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই কাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। আরও তিন কোটি বাড়ি বানাতে চাই। এখন, আয়ুষ্মান ভারত যোজনা হল বিশ্বের বৃহত্তম স্বাস্থ্য বীমা এবং স্বাস্থ্য নিশ্চিতকরণ প্রকল্প। ৫৫ কোটি মানুষের চিকিৎসার নিশ্চয়তা দেয়, যে মোদির সরকার আপনার পাশে আছে। এ বারের ইস্তেহারে আমরা বলেছি, যে কোনও ব্যক্তি, তিনি যে শ্রেণি, বা সমাজ বা যে পটভূমি থেকেই আসুন না কেন, বয়স ৭০ বছরের বেশি – পুরুষ এবং মহিলা উভয়ই – ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনামূল্যে চিকিৎসা পাবেন। আশা কর্মীদেরও এই সুবিধা দেওয়ার কথা ইস্তেহারে বলেছি আমরা। ট্রান্সজেন্ডাররাও এই সুবিধা পাবেন, বয়স যাই হোক না কেন।

এখন আপনারা দেখছেন, দেশের ব্যাঙ্কগুলির জাতীয়করণ করা হয়েছে এবং তারা আত্মসাতের খেলা খেলছে। অতীতেও এমনটা হয়েছে। একটা সময় সব ব্যাঙ্কই বেসরকারি ছিল। তারা লুটপাঠ চালিয়েছে, গরিবদের টাকা নিয়ে নিয়েছে। আমাদের দেশের ব্যাঙ্কগুলোর শোচনীয় অবস্থা ছিল। দেশের অর্ধেকেরও বেশি জনসংখ্যা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলতে টাকা দিয়েছে, কিন্তু ব্যাঙ্ক তাঁদের অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেনি। এরপর মোদি এসে ৫২ কোটি অ্যাকাউন্ট খুলল। সত্যি কথা বলতে, আমিই এর সবচেয়ে বেশি সুবিধা নিয়েছি। জন ধন, মোবাইল এবং আধার, এই তিনটি বিষয়কে এক সুতোয় বেঁধে সরকারি প্রকল্পের টাকা সরাসরি মানুষের অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়েছে। ৩৬ লক্ষ কোটি টাকা… সরাসরি মানুষের অ্যাকাউন্টে চলে গিয়েছে। আমাদের দেশে এই বিশাল আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ঘটেছে (অ্যাকাউন্ট খোলার কারণে)। এই সংখ্যাটা এক বছরে বিশ্বে যত অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে তার চেয়ে বেশি। আমাদের দেশে জলজীবন মিশন প্রকল্প চলছে। ভারতে ৩ থেকে ৪ শতাংশ গ্রামে মানুষের বাড়িতে কলের জল পৌঁছে যাচ্ছে, শহুরে এলাকাযতেও। আজ ১৪ কোটি গ্রামীণ পরিবারে কলের জল পাচ্ছেন।

এই সমস্ত কাজই ২৫ কোটি মানুষকে দারিদ্র্য থেকে বের করে এনেছে। আমরা তাদের ক্ষমতায়ণ করেছি, এবং আমার কৌশল হল, দরিদ্রদের এত শক্তি, এতটা শক্তি দাও যাতে তাঁরা নিজেরাই দারিদ্র্য কাটিয়ে উঠতে পারে। আর দরিদ্ররা যখন কঠোর পরিশ্রমে দারিদ্র্যকে জয় করে, তখন তাঁরা দারিদ্র্যের মধ্যে ফিরতে চান না। এটা একটা অঙ্গীকার। তাঁরা দেশের শক্তিতে পরিণত হয়। আজ ২৫ কোটি মানুষ দারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে এসেছে বলে আমরা উপকৃত হচ্ছি। এটি একটি খুব বড় অর্জন, গোটা বিশ্ব এর প্রশংসা করছে এবং উন্নয়নশীল দেশগুলির জন্য এটা মডেল হয়ে উঠবে।

আপনি নিশ্চয় দেখেছেন, ২০১৪ সালের আগে দেশের কী অবস্থা ছিল? ‘ফ্র্যাজাইল ৫’ শিরোনাম হত। আজ আমরা প্রাণবন্ত অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছি। আইএমএফ-এর বিশ্বের ১৫০টি দেশের একটি গ্রুপ রয়েছে – এর মধ্যে রয়েছে ভারত এবং চিন। যাকে আমরা উন্নয়নশীল দেশ বা উদীয়মান অর্থনীতির দেশ বলতে পারি। ওঁরা এই সমস্ত দেশগুলিকে একটা গোষ্ঠীতে বিশ্লেষণ চালিয়েছে। খুব আকর্ষণীয় বিষয়।

বিশ্লেষণ থেকে কী পাওয়া গেল দেখুন। ১৯৯৮ সালে ভারতের মাথাপিছু জিডিপি ছিল প্রায় ৩০ শতাংশ, পিয়ার গ্রুপের অন্যদের তুলনায়। সেই সময় কেন্দ্রে অটলজির সরকার। ১৯৯৮ থেকে ২০০৪ পর্যন্ত, অটলজি এই সংখ্যাটাকে ৩০ শতাংশ থেকে ৩৫ শতাংশে নিয়ে গিয়েছিলেন। দুর্দান্ত অগ্রগতি। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ২০০৪ সালে এই খিচড়ি কোম্পানি আসে এবং অটলজির কাজে জল ঢেলে দেয়। তারা সংখ্যাটাকে ৩৫ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশে নামিয়ে আনে। অন্যান্য দেশ [পিয়ার গ্রুপে] ভারতের চেয়ে ভাল পারফর্ম করেছে। ইউপিএ জমানায় উন্নয়নশীল বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় ভারত দরিদ্র রাষ্ট্রে পরিণত হয়, আমাদের চেয়ে যারা গরিব ছিল তারা এগিয়ে যায়।

২০১৪ সালে সরকার গঠনের পর ২০১৯ পর্যন্ত, আপনি জেনে খুশি হবেন যে আমরা এই সংখ্যাটি ৩৭ শতাংশে নিয়ে গিয়েছি, এবং ২০২৪ সালে এই সংখ্যাটা দাঁড়িয়েছে ৪২ শতাংশে। অর্থাৎ বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের আয় খুব দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। দশ বছরের মূল্যস্ফীতির হারের কথা বললে, সেটাও এই দশ বছরে সর্বনিম্ন। যা বলছি বাস্তবতার ভিত্তিতে বলছি। অনেক পরিশ্রমের পর আমরা এই অর্জন করেছি। আমরা পুরো সরকারকে একত্রিত করেছি এবং লক্ষ্য অর্জনের জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়েছি। তা সত্ত্বেও মোদি কী বলছেন? মোদি বলেছেন এটা শুধু ট্রেলার, আরও অনেকটা পথ যেতে হবে। দেশকে সঙ্গে নিয়ে খুব দ্রুত এগোতে হবে।

কংগ্রেসের ইস্তেহারের ব্যাপারে বলা যাক। নির্বাচনের সময় রাজনৈতিক দলগুলোর ইস্তেহার কী নিছক শো-পিস? প্রতিটা রাজনৈতিক দলের ইস্তেহার পড়াই মিডিয়ার কাজ। এই বিষয়ে মিডিয়া কী বলে দেখার অপেক্ষায় ছিলাম। প্রথম দিনেই ইস্তেহার দেখে মন্তব্য করেছিলাম। আমার মনে হয়েছে এতে মুসলিম লিগের ছাপ রয়েছে। ভেবেছিলাম মিডিয়া অবাক হয়ে যাবে। যাঁরা বিশ্লেষণ করবেন, তাঁরা হতবাক হয়ে পড়বেন… কিন্তু কংগ্রেস যা দেখিয়েছে, ওঁরা সেটাই বলে চলেছে। আমার মনে হল, এভাবে চললে দেশের রাজনৈতিক ইকোসিস্টেমে কেলেঙ্কারি হতে পারে। তাই আমাকেই সত্যিটা সামনে আনতে হল। আমি ১০ দিন অপেক্ষা করেছিলাম যে ইস্তেহারের মন্দ দিকগুলো কেউ নিরপেক্ষভাবে কিছু বলবে। সেটাই ভাল হত। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে আমাকেই সত্যিটা সামনে আনতে হল।

আরও পড়ুন – ‘নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা-সহ স্থিতিশীল সরকার চায় সবাই’, ইন্ডিয়া জোটকে কটাক্ষ মোদির

আরও পড়ুন –‘দুর্নীতিকে স্বাভাবিক ভাবলে চলবে না, দেশের বড় ক্ষতি হয়ে যাবে’, বিরোধীদের একহাত নিলেন মোদি

আপনি দেখুন, তাঁদের এক মহাশয় আমেরিকা থেকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে উত্তরাধিকার করের প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন, একজনের সম্পত্তির উপর ৫৫ শতাংশ কর। আমি যখন উন্নয়ন ও উত্তরাধিকারের কথা বলছি, ওরা তখন উত্তরাধিকার লুটের কথা বলছে। ইস্তেহারে যা বলেছে, ইতিহাসে সেটাই ওঁরা করে এসেছে। দেশকে ওই দিকেই নিয়ে যেতে চাইছে, দেশবাসীকে এটা জানানো আমার কর্তব্য। পাশাপাশি এটাও আমার দায়িত্ব যে তথ্য এবং গুরুত্বের ভিত্তিতে আমি সত্যিটা বলব।

প্রশ্ন (রাহুল জোশি): স্যাম পিত্রোদাজি পরিবারের জন্য সঞ্চয় করা সম্পদের উপর উত্তরাধিকার কর সম্পর্কে বলেছেন, যেটা আমরা পরবর্তী প্রজন্মকে দিয়ে যাই। এই ট্যাক্স খুব বেশি হতে পারে। আপনি কি বলবেন, বিজেপি ক্ষমতায় এলে এই কর কখনওই কার্যকর করবে না?

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি: ভারতীয় জনতা পার্টি কী করবে সেটা আমাদের ইস্তেহারে লেখা আছে। ওঁদের পরিকল্পনা আমরা কার্যকর করব, এমন ভাবনা আপনার মাথায় এল কী করে? বিজেপির আদর্শ খুব স্পষ্ট। আমরা আমাদের কাজ এবং ইস্তেহার নিয়ে দেশবাসীর কাছে যাই। দয়া করে তাঁদের মহান চিন্তা আমাদের ঘাড়ে চাপাবেন না।

প্রশ্ন (রাহুল জোশি): রাহুল গান্ধি জাতিগত সুমারির পাশাপাশি জাতীয় এক্স-রে বা আর্থ সামাজিক সমীক্ষার কথা বলছেন। এ থেকে কারা পিছিয়ে রয়েছে এবং সেই অনুযায়ী সম্পদ পুনর্বন্টন করা হবে…

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি: যারা নিজেদের রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেন, তাঁদের উচিত এই সব লোকেদের প্রশ্ন করা যে আপনি যে সব কথা বলছেন তা যদি বাস্তব হয়, তাহলে আপনি কী করে ৫০-৬০ বছর ধরে ক্ষমতায় রয়েছেন। আপনিই তো এটা করেছেন। কীভাবে করলেন? দ্বিতীয়ত, এক্স-রে মানে প্রতিটি বাড়িতে অভিযান চালানো। যদি কোনও মহিলা চালের ঝাঁপিতে সোনা লুকিয়ে রাখেন, সেটারও এক্স রে করা হবে। গয়নাগাটি বাজেয়াপ্ত করা হবে। জমির দলিল যাচাই-বাছাই করা হবে। এবং সেই সম্পদ পুনরায় বিতরণ করা হবে। এটা সম্পূর্ণ আরবান নকশাল চিন্তাধারা। এমন মাওবাদী মতাদর্শ থেকে বিশ্বের কোনও লাভ হয়নি। এই কারণেই জামাত, যারা সাধারণত লেখালিখির মাধ্যমে এঁদের সমর্থন দেয়, এই কারণেই ইস্তেহার প্রকাশের দশ দিন পরেও তাঁরা চুপ। ওঁদের বাঁচানোর জন্যই এঁরা চুপ করে রয়েছে। এখন আমার দায়িত্ব দেশকে জাগিয়ে তোলা যে ওঁরা আপনার সম্পদ লুটের পরিকল্পনা করছে। ড. মনমোহন সিং তো আগেই স্পষ্ট করে বলেছেন, দেশের সম্পদের উপর কাদের প্রথম অধিকার। ওঁদের উদ্দেশ্য স্পষ্ট।

প্রশ্ন (রাহুল জোশি): ২০০৬ সালের একটি ভিডিও ভাইরাল হচ্ছে যেখানে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংজি বলেছিলেন, দেশের সম্পদের উপর মুসলিমদের প্রথম অধিকার। এ কথা তিনি স্পষ্ট বলেছেন। আপনি এও বলেছেন যে ওরা ওবিসি কোটার একটা অংশ মুসলিমদের দিতে চায়। এবং ২০০৪-২০১৪-র মধ্যে চার-পাঁচবার সেই চেষ্টাও হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি: আপনি খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেছেন। এর উত্তরে অনেক কথা বলতে হবে। দেশের সবার্থে সেটা আমি বলব।
আপনি কংগ্রেসের ইতিহাস দেখুন; এই দাবি (সংরক্ষণের জন্য) ১৯৯০ সাল থেকে উঠছে। সমাজের একটি বিশাল অংশ অনুভব করেছিল যে তাদের জন্য কিছু করা উচিত, এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হয়। ১৯৯০-এর আগে কংগ্রেস এর সম্পূর্ণ বিরোধিতা করেছিল। শুধু তাই নয়, দমন করেছিল। তারপর থেকে তারা যে কমিশনই গঠন করুক, যে কমিটিই তৈরি করুক না কেন, প্রত্যেকের রিপোর্টই ওবিসিদের পক্ষে আসতে শুরু করে। প্রথমদিকে তাঁরা এসব অস্বীকার, প্রত্যাখ্যান এবং দমন করতে থাকে। কিন্তু নব্বই দশকের পর ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতির কারণে ওঁদের মনে হয়, কিছু একটা করা উচিত।

তাহলে প্রথমে ওরা ভুল করেছিল? নব্বয়ের দশকে, তারা কর্নাটকে মুসলমানদের ওবিসি কোটায় ঢোকানোর সিদ্ধান্ত নেয়। তা হলে আগে ওবিসিদের প্রত্যাখ্যান এবং দমন, কিন্তু রাজনৈতিক লাভের জন্য পরবর্তীকালে মুসলমানদের ওবিসি হিসাবে চিহ্নিতকরণ। কেন্দ্র থেকে বিতাড়িত হল কংগ্রেস। এই পরিকল্পনা ২০০৪ সাল পর্যন্ত স্থগিত হয়ে যায়, ২০০৪ সালে কংগ্রেস ফের ক্ষমতায় এল। ফিরেই অন্ধ্রপ্রদেশে মুসলমানদের ওবিসি কোটা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। বিষয়টি আদালতে জটিল আকার ধারণ করে। ভারতের সংসদ সংবিধানের মূল চেতনার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ওবিসিদের ২৭ শতাংশ সংরক্ষণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এখন তারা এই ২৭ শতাংশ কোটা লুট করার চেষ্টা করেছে।

আরও পড়ুন – পশ্চিমবঙ্গে কটা আসন পেতে চলেছে বিজেপি? Network 18 স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন নরেন্দ্র মোদি! ‘বড়’ পূর্বাভাস

আরও পড়ুন – ভারত রত্ন, পদ্ম সম্মান দিতে গিয়ে ভেদাভেদ করেনি তাঁর সরকার, দাবি প্রধানমন্ত্রী মোদির

২০০৬ সালে জাতীয় উন্নয়ন পরিষদের সভা হয়। সেখানে মনমোহন সিং-এর বক্তব্য নিয়ে ব্যাপক হইচই হল। ওঁরা দুই বছর চুপচাপ রইল। ২০০৯ সালের ঘোষনাপত্রে, তারা আবার সেই জিনিস টেনে আনল। ২০১১ সালে এই বিষয়ে একটি ক্যাবিনেট নোট রয়েছে যেখানে তারা মুসলিমদের ওবিসি কোটা থেকে একটি অংশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ইউপি নির্বাচনেও তারা এই চেষ্টা করেছিল কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। ২০১২ সালে, অন্ধ্র হাই কোর্ট এটা বাতিল করে দেয়। তারা সুপ্রিম কোর্টে যায়, কিন্তু সেখানেও সুবিধা করতে পারেনি। ২০১৪ সালের ইস্তেহারের ধর্মের ভিত্তিতে সংরক্ষণের কথা বলেছিল। ভারতে যখন সংবিধান তৈরি হচ্ছে, তখন আরএসএস বিজেপির কেউ উপস্থিত ছিল না। বাবাসাহেব আম্বেদকর, পণ্ডিত নেহেরু, সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল এবং দেশের গ্ণ্যমান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন। দীর্ঘ চিন্তাভাবনার পর তাঁরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে ভারতের মতো দেশে ধর্মের ভিত্তিতে সংরক্ষণ দেওয়া যাবে না।

২০২৪ সালের নির্বাচনে ওঁদের ইস্তেহার দেখুন। এতে মুসলিম লিগের স্পষ্ট ছাপ রয়েছে। তারা যেভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করছে, যেভাবে আম্বেদকরের অপমান করছে… এসসি এবং এসটিদের সংরক্ষণের উপর বিপদের খাঁড়া ঝুলছে। ওঁরা ওবিসিদের জীবন কঠিন করে তুলবে। আমি কি দেশের মানুষকে এ বিষয়ে জানাব না? আমি বিশ্বাস করি যে এই দেশকে শিক্ষিত করা, সঠিক জিনিসগুলি জানানোর সমস্ত জ্ঞানী মানুষের দায়িত্ব, যারা শিক্ষিত, যারা নিরপেক্ষ।

প্রশ্ন(রাহুল জোশি): কংগ্রেস বলছে, ওরা নির্দিষ্ট করে এই কথা বলেনি। ইস্তেহারে তারা বলেছে, সংখ্যালঘু ছাত্রদের উৎসাহ এবং সহায়তা দেওয়া হবে। সংখ্যালঘুরা যাতে ন্যায্য অংশ পায়, তা নিশ্চিত করবে। তারা যদি এই কথাটাই বলে, তাহলে সেটাকে কীভাবে দেখছেন?

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি: আমার দেখার দরকার নেই। আমি আপনাকে ১৯৯০ সাল থেকে যা হয়েছে বললাম। এখন সেই সব দেখে আপনি আমাকে কী বলবেন? আমার এসব বিশ্লেষণ করার দরকার নেই। আপনি যদি ১৯৯০ সাল থেকে ২০০৯ সালে মনমোহন সিংজির বিবৃতি পর্যন্ত দেখেন, তাহলে ঠিক কোন উপসংহারে পৌছবেন? আমি কোনও উপসংহারে যাচ্ছি না, যারা করতে চাইবে তারা দেখবে।

প্রশ্ন (রাহুল জোশি): ওঁরা প্রতিষ্ঠানে অংশীদারিত্বের কথা বলছে। ওবিসি বিচারক বা মিডিয়াতে ওবিসি প্রতিনিধিত্ব নেই। আপনি এটা কীভাবে দেখছেন?

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি: আমাকে বলুন, ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর আমরা কি এমন কোনও পলিসি নিয়ে এসেছি, যাতে কাউকে আটকানো হচ্ছে? এসব ওদের পাপ। সেই পাপের মাশুল দিচ্ছে গোটা দেশ। ওরা যদি সত্যিই ধর্মনিরপেক্ষ হয়, প্রকৃত অর্থে সামাজিক ন্যায়বিচার করত, ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি না করত, তাহলে আজ ভুয়ো কাগজ নিয়ে ঘুরে বেড়াতে হত না। আমি বিশ্বাস করি গত দশ বছরে যা করেছি, তার ফলাফল যাই হোক না কেন, যে প্রশ্নই উঠুক না কেন, কাজের ভিত্তিতে তার উত্তরও আমরা দিতে পারব। আমরা সবাইকে ন্যায়বিচার দেব। দেশ কীভাবে প্রথম আদিবাসী রাষ্ট্রপতি পেল? আমাদের চিন্তা চেতনার মাধ্যমে। আমরা ভারতের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তিনটি সুযোগ পেয়েছি। একবার অটলজির সময়ে, দু’বার আমার আমলে। আমরা প্রথমবার কাকে নির্বাচিত করেছি? এপিজে আব্দুল কালামকে, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্য। তারপর আমি একজন দলিত (রামনাথ কোবিন্দ), এবং পরের বার একজন আদিবাসী মহিলাকে (দ্রৌপদী মুর্মু) রাষ্ট্রপতি করেছি। কাজই আমাদের ভাবনার প্রতিফলন।

প্রশ্ন (রাহুল জোশি): মোদিজি আপনি আরও একটা কথা বলেছেন, আমি সেটাকেও দীর্ঘ প্রশ্নে যোগ করতে চাই। আপনি বলেছেন, জোট সরকার ক্ষমতায় এলে রোটেশনের ভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রী হবে। ওঁরা ঠিক করতে পারছে না, কাকে প্রধানমন্ত্রী করা উচিত, তাই সবাই এক বছরের জন্য প্রধানমন্ত্রী হবেন। আমার প্রশ্নটা একটু বড়, আপনি কি মনে করেন, ভারত উন্নয়নের যে পর্যায়ে রয়েছে সেখানে জোট সরকার না কি স্থিতিশীল সরকার, কোনটা বেশি কার্যকর হবে?

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি: দু’টো সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়। কংগ্রেসের চরিত্র দেখুন। রাজস্থানে দলীয় কোন্দল ছিল। ওঁরা তখন একটা ফর্মুলা সামনে আনল যে, আড়াই বছর করে একজন মুখ্যমন্ত্রী সরকার চালাবেন। অর্থাৎ, একজন আড়াই বছর মুখ্যমন্ত্রীর পদ সামলাবেন, পরের আড়াই বছর আরেকজন মুখ্যমন্ত্রী হবেন। এটা পরিচিত সুত্র। ছত্তীশগড়েও দলের মধ্যে মারামারি হয়েছে। তারা সেখানেও একই ফর্মুলা নিয়ে এল। আড়াই বছর করে একজন মুখ্যমন্ত্রীর পদ সামলাবেন। কোনওভাবে বিষয়টার নিষ্পত্তি করতে চেয়েছিল। কিন্তু এটাও সত্য আড়াই বছর পর তারা পাল্টি খেল। নিজের দলের সঙ্গেই বিশ্বাসঘাতকতা। তবে কংগ্রেস যে এই ফর্মুলা নিয়ে ভাবে সেটা প্রমাণ হয়ে গেল।

মিডিয়া থেকে জেনেছিলাম, ওরা একটা ছোট বৈঠক করেছিল। সেখানে সংবাদমাধ্যম জিজ্ঞেস করে, মোদি বারবার প্রশ্ন তুলছেন, দেশ যার হাতে থাকবে, জনগণের তার নাম জানা উচিত। ভারত একটা বিশাল দেশ। সেখানে একটা নাম তো দিতে হবে। এমনকী ক্রিকেট দলেও একজন অধিনায়ক থাকে। কবাডি দলেও অধিনায়ক হিসেবে একজনের নাম দেওয়া হয়। এত বড় দেশ কে সামলাবে সেটাই আপনি বলছেন না। তখনই ওরা ‘এক বছর এক প্রধানমন্ত্রী’ ফরমুলা নিয়ে এল। প্রতি বছর একজন নতুন নেতা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন, নতুন সরকার ও নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করবেন। পাঁচ বছর তারা ব্যস্ত থাকবে শপথ অনুষ্ঠানে, দেশ ব্যস্ত থাকবে কঠিন আয়োজনে।

একটা দেশ কী এভাবে চালানো যায়? বিশেষ করে ভারতের মতো বৃহৎ একটা দেশ। তাঁর কথায়, “জোট সরকারের যুগে ৩০ বছরের অস্থিতিশীলতা দেখেছে দেশবাসী”। প্রধানমন্ত্রী জানান, বিজেপি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও আঞ্চলিক দলগুলিকে সর্বদা সম্মান করেছে। এটা এনডিএ-র চরিত্র। বিজেপি এই মনোভাব নিয়েই চলে। আজ বিশ্বে ভারতের মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে। কারণ ১৪০ কোটি মানুষ একটি স্থিতিশীল, শক্তিশালী এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকার গঠন করেছে। তাই যে কেউ এই সরকারকে বিশ্বাস করতে পারেন, কারণ এই সরকারের কাছে সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। জোট সরকারকে কেউ বিশ্বাস করে না। এত বড় দেশ এভাবে চলতে পারে না। কিন্তু আজ দেশের রাজনীতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে একটা দল যতই বড় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করুক না কেন আঞ্চলিক দলগুলিকে সম্মান করতেই হবে।

সেই কারণেই আমরা নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও জোট সঙ্গীদের নিয়েই সরকার গঠন করেছে এনডিএ। দেশের রাজনীতির উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ ও দেশের জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার জন্য আঞ্চলিক আকাঙ্ক্ষাকে সমান সম্মান ও ভাগ দিতে হবে। এনডিএ সবাইকে নিয়ে এই চরিত্র গঠন করেছে। এবং বিজেপি দেখিয়েছে, বাস্তবেও তারা এই কাজ করতে পারে।

প্রশ্ন (রাহুল জোশি): বিরোধী দল, রাহুল গান্ধি, কংগ্রেস এবং অন্যরা বলছেন, মোদিজি ম্যাচ ফিক্সিং করছেন। এই নির্বাচনেও তাঁরা বলছে, ইডি, সিবিআই এবং ইভিএম ছাড়া নির্বাচনে জিততে পারবেন না। আপনি কী বলবেন?

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি: দেশের সর্বোচ্চ আদালতই ইভিএম নিয়ে সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দিয়েছে। ২০১৪ সালে তো ওঁদের হাতে ইডি, সিবিআই ছিল। তাহলে ওঁরা হেরে গেল কেন? ওঁরা তো আমার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকেও জেলে ঢুকিয়েছিল। তারপরেও কেন হারল?

ইডি, সিবিআই যদি নির্বাচনে জেতাতে পারত, তাহলে কংগ্রেস বহু বছর ধরে সেই কাজ করেছে, ওঁরাও জিতত। আপনি এত বড় দেশের নির্বাচন ঠিক করতে পারবেন না, এমনকি পুরসভার নির্বাচনও নয়। চেষ্টা করে দেখুন। এই ফিক্সিং সম্ভব? ওঁরা শুধু দেশকে বোকা বানাচ্ছে। দুঃখের বিষয়, মিডিয়া তাঁদের জিজ্ঞাসা না করে আমাদের প্রশ্ন করছে।

কয়েকদিন ধরে ইন্ডিয়া জোটের নেতারা এতটাই হতাশ হয়ে পড়েছে যে এখন অজুহাত খুঁজতে হচ্ছে। কারণ হারলেও জনগণের সামনে যেতে হবে। আমার মনে হয়, সেজন্যই এই সমস্ত অজুহাত খুঁজছে। এটি সম্ভবত ওঁদের অভ্যন্তরীণ অনুশীলন।

প্রশ্ন (রাহুল জোশি): এই নির্বাচনে দুটি রাজ্য গুরুত্বপূর্ণ – একটি কর্নাটক এবং অন্যটি মহারাষ্ট্র৷ কর্নাটকে, আপনি সম্প্রতি বিধানসভা নির্বাচনে হেরেছেন, এবং মহারাষ্ট্রে দুটি দলের ভাঙনের ফলে সেখানে অদ্ভুত গণ্ডগোল চলছে। আমার দুই সহকর্মী রয়েছেন, প্রথমে কর্নাটক দিয়ে শুরু করা যাক। হরিপ্রসাদজি, সেখানে আমাদের সম্পাদক, তিনি আপনাকে কিছু প্রশ্ন করতে চান।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি: হরিপ্রসাদজি স্বাগতম, শুরু করুন।

প্রশ্ন (হরিপ্রসাদ): বহুল আলোচিত নেহা হিরেমঠ হত্যা মামলার কথা বলা যাক। ফায়াজ নামের এক যুবক কলেজ ক্যাম্পাসের মধ্যে তাঁকে হত্যা করে। বিজেপি সভাপতি জে পি নাড্ডা তাঁর বাড়িতে ছুটে যান। আপনি কী মনে করেন, কর্নাটক নির্বাচনের ফোকাস এই ধরনের ইস্যুতে সরে যাচ্ছে?

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি: নাড্ডাজি কর্নাটকের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন, সেই সময়ই ঘটনাটা ঘটে। কে কোন দলের, কংগ্রেসের নেতার মেয়ে খুন হয়েছে, এমন কথা বলার মতো মানসিকতা বা মূল্যবোধ আমার নয়। এটা মানবিক অনুভূতির বিষয়। আমি বিশ্বাস করি, নির্বাচনী ব্যস্ততার মধ্যেও তিনি যা করেছেন তা মানবিক কাজ। কোনও নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে করেননি। রাহুলজির (রাহুল গান্ধি) বিমানে গোলযোগ দেখা দিয়েছিল। আমি তৎক্ষণাৎ ফোন করে জানতে চেয়েছিলাম, কোনও সমস্যা আছে কি না। আমি তখন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী। দমনে সনিয়াজি, আহমেদ প্যাটেলের হেলিকপ্টার ক্র্যাশ করে। আমি সঙ্গে সঙ্গে বলেছিলাম, এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পাঠাচ্ছি। আহমেদ প্যাটেল বলেছিলেন, সব ঠিক আছে। জরুরি পরিস্থিতি নয়। একবার সনিয়াজি কাশীতে নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। সঙ্গে সঙ্গে লোক পাঠিয়েছিলাম। প্রয়োজনে তাঁকে নিয়ে আসার জন্য বিমানও পাঠাই। তাই আমার মতে, পরিবারে কোনও সমস্যা দেখা দিলে রাজনীতির উর্ধে উঠে সমাধান করা উচিত।

প্রশ্ন (হরিপ্রসাদ): কর্নাটকের কংগ্রেস পাঁচ গ্যারান্টির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। ক্ষমতায় আসার পরে, তারা প্রতিশ্রুতি পালনও করেছে। সেখানে গত নির্বাচনে বিজেপি হেরেছে। এখন আবার বিএস ইয়েদুরাপ্পা এবং তাঁর ছেলের নেতৃত্বের উপর সব ফোকাস রয়েছে যার কারণে দলের মধ্যেও কেউ কেউ বিরক্ত। কর্নাটকে বিজেপি কয়টি আসনে জিততে পারে বলে আপনি মনে করেন?

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি: কংগ্রেসকে জিতিয়ে কর্নাটকের মানুষ এখন আফসোস করছেন যে বড় ভুল হয়ে গিয়েছে। আমাদের জনসমর্থন কমেনি, বরং বেড়েছে। এত অল্প সময়ে মুখ্যমন্ত্রী পদের মতো অমীংসিত সমস্যা এখনও তাঁদের রয়েছে। একজন মুখ্যমন্ত্রী শপথ নিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু রাজ্য কে চালাচ্ছে তা কেউ জানে না। অনেকেই নিজেকে মুখ্যমন্ত্রী মনে করেন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দিকে তাকালে দেখা যাবে, দাঙ্গাহাঙ্গামা, খুনখারাবির মতো ঘটনা বেড়েছে। অর্থনীতি দেউলিয়া হতে বসেছে। এর মধ্যেও বড় বড় প্রতিশ্রুতি দিয়ে চলেছে। এমনটা হলে এটা দেব, সেটা হলে ওটা পাবেন। এর মানে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করছেন।

যখন আমরা বলেছিলাম, নির্দিষ্ট কিছু মানুষকে আয়ুষ্মান কার্ড দেব, তখন আমরা সেটা দেব। এর মধ্যে কোনও অসততা নেই। এখন, যদি আমরা বলি, ৭০ বছরের বেশি বয়সী সবাইকে আয়ুষ্মান কার্ড দেব, তাহলে আমরা দেব। আপনার সেই সাহস থাকা উচিত। তারা কৃষকদের জন্য প্রকল্প বাতিল করেছে, এবং এর কোনও কারণ ছিল না। বেঙ্গালুরুকে দেখুন, এটি সারা বিশ্বে ভারতের সুনাম বাড়াতে একটি বড় ভূমিকা পালন করেছে। বেঙ্গালুরু আগে টেক হাব হিসাবে পরিচিত ছিল আর এখন অল্প সময়ের মধ্যেই ট্যাঙ্কার হাবে পরিণত হয়েছে। সেটাও মাফিয়ারা চালাচ্ছে। মানুষ জলকষ্টে ভুগছে। তরুণদের বৃত্তির কথা বললে, ওঁরা পরিমাণের পাশাপাশি সংখ্যাও কমিয়েছে। একের পর এক এমন নেতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যে ইস্যুতে ভোট চাইছে, সেগুলোও দিতে পারছে না। ডেপুটি সিএমের দিকে তাকান। ডেপুটি সিএম তাঁর ভাইয়ের জন্য ভোট চাইছেন, যাতে তিনি মুখ্যমন্ত্রী হতে পারেন। সবাই গেম খেলছে।

বিজেপি সম্পর্কে বললে, আমার দল হেরেছে, কিন্তু আমরা দলগত মনোভাব নিয়ে কাজ করেছি। আমার দল হয়তো আমাকে নেতা হিসেবে প্রজেক্ট করেছে কিন্তু আমরা সবাই একসঙ্গে কাজ করছি। ঠিক তেমনই, ইয়েদুরাপ্পা আমাদের বড় নেতা, কিন্তু পুরো দল একসঙ্গে কাজ করছে এবং এগিয়ে যাওয়ার জন্য কঠোর পরিশ্রম করছে।

প্রশ্ন (হরিপ্রসাদ): দেশে তৃতীয় দফার লোকসভা নির্বাচন হতে চলেছে। কিন্তু কর্নাটকে ১৪ আসনে দ্বিতীয় দফার ভোট হবে। মূলত কর্নাটকের উত্তর অংশে যা প্রধানত খরা-বিধ্বস্ত। এখন, এই খরার বিষয়ে, কংগ্রেস দাবি করছে যে তারা সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছে এবং এখন কেন্দ্রীয় সরকার ন্যায্য ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য হয়েছে। যে বিষয়ে আপনার মতামত কী?

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি: সিদ্দারামাইয়ার নেতৃত্বাধীন আগের সরকারের কথাই ধরা যাক। তখন খরা হয়েছিল, আমি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাদের পুরো দলকে ডেকে দীর্ঘ আলোচনা করি। আমরা একসঙ্গে বসে ঠিক করেছিলাম যে আমাদের প্রথমে জল সংরক্ষণের জন্য পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। এখন যতদূর রাজ্য দুর্যোগ ত্রাণ তহবিল সম্পর্কিত, আমাদের সরকার ইতিমধ্যেই তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে কেন্দ্রের অংশ রাজ্যকে দিয়েছে। আমাদের আন্তঃমন্ত্রণালয় টিমও পূর্বে নির্ধারিত নিয়ম ও নীতি মেনে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন এবং একটি জরিপ করেছে। প্রতিবার তাই হয়।

গুজরাতে যখন ভূমিকম্প হয়েছিল, তখন আমি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে স্মারকলিপি পাঠিয়েছিলাম। তারা পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য সমীক্ষা দল পাঠিয়েছিল। এখন এই প্রক্রিয়ার মাঝখানে আদর্শ আচরণবিধি কার্যকর হয়েছে। তাই নির্বাচন কমিশনকে বিষয়টি জানিয়ে অনুমতি চেয়েছি। এনডিআরএফ-এর মতে, আমরা রেশনও ছেড়ে দিয়েছি।

(রাহুল জোশি): মোদিজি, নিউজ 18 লোকমতের সঞ্চালক বিলাস বড়ে মহারাষ্ট্র থেকে আমাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। রাজ্যের বিষয়ে আপনার সঙ্গে কথা বলতে চান।

প্রশ্ন (বিলাস বড়ে): মোদিজি মহারাষ্ট্র থেকে আপনাকে নমস্কার। এবার, বিজেপিকে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে মহারাষ্ট্রে জয়ী ২৩ আসন ধরে রাখতে হবে। কিন্তু মহারাষ্ট্রে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি। শিবসেনা এবং এনসিপি ভাগ হয়ে গিয়েছে, তাদের দুই শরিক আপনার সঙ্গে রয়েছে। আপনি কি উদ্ধব ঠাকরে এবং শরদ পওয়ারের প্রতি সহানুভূতির ঢেউ দেখতে পাচ্ছেন?

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি: মহারাষ্ট্রের সমস্ত মানুষকে নমস্কার। আমি আপনার সঙ্গে আলাদাভাবে মহারাষ্ট্র নিয়ে আলোচনা করতে পেরে আনন্দিত। এটা সত্য যে রাজ্যটি এখন যথেষ্ট সময় ধরে জোট সরকার দেখছে। এটা সত্য যে দীর্ঘদিন যাবত রাজ্যের মানুষ জোট সরকার দেখছে। একসময় বিলাসরাও দেশমুখ ছিলেন… শরদ পওয়ার যখন মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন, তখন তিনিও নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাননি। দ্বিতীয়ত মহারাষ্ট্রের দুর্ভাগ্য যে দেবেন্দ্র ফডনবীশ ছাড়া কোনও মুখ্যমন্ত্রীই পাঁচ বছর টানা সরকার চালাতে পারেননি। ফডনবীশই একমাত্র মুখ্যমন্ত্রী যিনি পুরো মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেছেন। স্বচ্ছ ভাবে সরকার চালিয়েছেন। গায়ে কোনও দাগ লাগতে দেননি। এমন একটা সরকার যা জনগণের কল্যাণে কাজ করেছে।

এখন আমাদের প্রতি সহানুভূতি থাকা উচিত। যাঁরা আমাদের সঙ্গে নির্বাচনে লড়েছেন, যাঁরা আমাদের সঙ্গে মহারাষ্ট্রের জনগণের কাছে ভোট চেয়েছেন, তাঁরা মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার ব্যক্তিগত উচ্চাকাঙ্ক্ষার কারণে অহঙ্কারের বশবর্তী হয়ে (উদ্ধব ঠাকরে) এই অংশীদারের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন যা বালাসাহেব ঠাকরের সময় থেকে ছিল। জনগণ এতে ক্ষুব্ধ এবং এই কারণে বিজেপির প্রতি সহানুভূতি রয়েছে। দ্বিতীয়ত, শিবসেনা এবং এনসিপির মধ্যে যে ঝড় উঠেছে তা থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, অন্য নেতাদের চেয়ে শুধু পরিবারের সদস্যদের বেশি গুরুত্ব দিলে শুধু সমস্যাই তৈরি হয়, আর কিছু নয়। শরদ পওয়ারের সমস্যা একেবারে পারিবারিক বিবাদ। দলের লাগাম মেয়ের হাতে থাকবে না কি ভাইপোর হাতে? শিবসেনার কোন্দলও কংগ্রেসের মতো, যোগ্য নেতাকে পদোন্নতি দেওয়া উচিত না কি ছেলেকে”?

সব ওদের ঝগড়া বিবাদ। আমি বিশ্বাস করি, দেশ এই ধরনের পারিবারিক রাজনীতিকে ঘৃণা করে। যদি কেউ ‘সহানুভূতি’ শব্দ ব্যবহার করে মানুষের মধ্যে সহানুভূতি জাগানোর চেষ্টা করে, আমি বলব, সেই চেষ্টাও ব্যর্থ হবে। মানুষ এই ধরনের রাজনীতিকে ঘৃণা করে। এই ধরনের আচরণ মেনে নিতে পারে না। এসব আপনাদের পারিবারিক বিবাদ, আপনারা ঘরেই এর সমাধান করুন। এর জন্য মহারাষ্ট্র ভুগবে কেন?

আরও একটা বিষয়, বিজেপি মহারাষ্ট্রের জন্য আত্মত্যাগ করেছে। কিছু লোক ভেবেছিল, আমরা বোধহয় মুখ্যমন্ত্রীর পদ চাই। না। আমরা মুখ্যমন্ত্রীর পদ নিতে পারতাম, কিন্তু নিইনি। আমরা মহারাষ্ট্রের মানুষকে বোঝাতে চেয়েছি, বিজেপি মহারাষ্ট্রের জন্য আত্মত্যাগ করতে প্রস্তুত। আমরা নিজেদের জন্য বাঁচি না। এই নির্বাচনে মানুষের সহানুভূতি বিজেপির দিকে ছিল। তাঁরা দেখছেন, এত বড় দলের একজন সফল মুখ্যমন্ত্রী, যিনি মহারাষ্ট্রের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য আত্মত্যাগ করে উপমুখ্যমন্ত্রী হলেন। দেশের মধ্যে বাংলা প্রায় ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। কলকাতা একসময় অর্থনীতিতে গোটা দেশকে নেতৃত্ব দিত। কিন্তু রাজনীতি সব নষ্ট করে দিয়েছে। একটা সময় বিহার এবং উত্তরপ্রদেশেরও অস্থির অবস্থা ছিল। মহারাষ্ট্রকে সেই পথে যেতে দেওয়া উচিত নয়। মুম্বই দেশের অর্থনৈতিক রাজধানী। দেশের স্বার্থেই মহারাষ্ট্রকে দৃঢ়তার সঙ্গে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। আমরা এটাই মহারাষ্ট্রের মানুষকে বলছি, বোঝানোর চেষ্টা করছি। তাঁরাও ইতিবাচক সাড়া দিচ্ছেন।

প্রশ্ন (বিলাস বড়ে): মহারাষ্ট্রে বিজেপি, শিবসেনা এবং এনসিপি-র মহাজোট (মহাজোট) হয়েছে। কিন্তু এই নির্বাচনে শেষ মুহূর্তে আসন নিয়ে রীতিমতো দড়ি টানাটানির পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। টিকিটের বণ্টন বহু জায়গায় এখনও হয়নি। এটা কী মহাজোটের ক্ষেত্রে বড় প্রশ্নচিহ্ন নয়?

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি: আমার মনে হয়, আপনি যে সমস্যার কথা বললেন, তা বিরোধীদের জন্য প্রযোজ্য। তাঁরা আসন নির্ধারণ করতে পারছেন না। তাঁরা সিদ্ধান্ত নিতে অক্ষম, সমান্তরাল নির্বাচন লড়াই হচ্ছে সেখানে। আমাদের দিক থেকে তেমন কিছুই নেই। আমরা একে অপরের হাত ধরে একসঙ্গে লড়াই করতে নেমেছি। আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়েছি। শিবসেনা, বিজেপি এবং এনসিপি সেটাই করেছে। বিরোধীপক্ষের নকল পার্টিগুলির মধ্যে কোনও সম্প্রীতিই নেই।

প্রশ্ন (রাহুল জোশি): মহারাষ্ট্র থেকে আপনি কতগুলি আসন আশা করছেন?
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি: আমরা প্রচুর শক্তি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। ভোটও বাড়বে আর আমাদের আসনও।

প্রশ্ন (বিলাস বড়ে): ২০১৭ সালে আপনার সরকার সরকার শরদ পওয়ারকে পদ্মবিভূষণ অর্থাৎ দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নাগরিক সম্মানে ভূষিত করেছিল। কিন্তু গত মঙ্গলবার শরদ পওয়ার বলেন, “এই দেশের নতুন পুতিন হয়ে উঠছেন মোদি।” এই মন্তব্যকে কীভাবে নিচ্ছেন আপনি?

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি: আমি তাঁকে প্রচুর শ্রদ্ধা করি। যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে জনজীবনে আছেন, তাঁরা আমাদের সঙ্গে আছেন না কি বিপক্ষে, তাতে কিছু যায়-আসে না। আমরা তাঁদের সম্মান করি। কিন্তু এর অর্থ হল, তিনি এমন এক সরকারের থেকে পুরস্কার নিয়ে গর্বিত, যে সরকার যিনি চালাচ্ছেন, তাঁকে তিনি পুতিনের মতো দেখছেন। এটা তো বড় অসঙ্গতি হয়ে গেল। আমার দল এবং আমার মতের বিষয়ে বলতে গেলে আমরা প্রণব মুখোপাধ্যায়, নরসিমহা রাও, চৌধুরি চরণ সিং, কর্পূরি ঠাকুরকেও ভারতরত্নে ভূষিত করেছি। দেশের কেউ তো আমাদের পছন্দ নিয়ে প্রশ্ন করেননি। আসলে প্রত্যেকেই বুঝতে পেরেছেন, এটা তাঁদের প্রাপ্য। তাঁরা তো বিরোধী দলের সদস্য।

যাঁরা অতীতে আমাদের সমালোচনাও করেছেন। কিন্তু আমাদের সিদ্ধান্ত তো এইসব বিষয়ের উপর নির্ভর করেনি। আবার পদ্ম সম্মান যাঁরা পেয়েছেন, তাঁরা হলেন মুলায়ম সিং, তরুণ গগৈ, পিএ সাঙ্গমা, এসএম কৃষ্ণা… তাঁরা সকলেই অন্যান্য দলের সদস্য। কিন্তু আমরা তাঁদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে অবদানের জন্য পদ্ম পুরস্কারে ভূষিত করেছি। এটা তো দেশের পুরস্কার, পার্টির তো পুরস্কার নয়। এমনকী এটা মোদির ব্যক্তিগত সম্পত্তিও নয়। আবার বিজেপি-রও এর উপর কপিরাইট নেই।

আপনার যদি আগ্রহ থাকে, তাহলে একটা বিষয় দেখতে পারেন। সেটা হল কীভাবে পদ্ম পুরস্কার কীভাবে দেশে পরিবর্তিত হয়েছে। আমরা এই রূপান্তর করেছি। আর কাকে পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে, তা বেছে নেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন না তুলে এই ধরনের সিদ্ধান্তের পিছনের চিন্তাধারাকেই আমাদের কুর্নিশ করা উচিত।

বিলাস বড়ে: কিন্তু এই পুরস্কার পাওয়ার পরেও শরদ পওয়ার এমন বিবৃতি দিলেন…

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি: কিন্তু এই পুরস্কার দেওয়ার ক্ষেত্রে তো কোনও শর্ত আরোপ করা হয়নি যে, তাঁরা আমার বিরুদ্ধে কিছু বলতে পারবেন না। সেরকম কোনও চুক্তি তো হয়নি। এটা তো আর দেওয়া-নেওয়ার কোনও সূত্র নয়।

প্রশ্ন (রাহুল জোশি): মোদিজি, এবার উত্তরপ্রদেশ নিয়ে কথা বলা যাক। ৮০টি লোকসভা আসন-সহ এটাই সবথেকে বড় রাজ্য। আপনি কি ২০১৪-র রেকর্ড ভাঙতে সক্ষম হবেন? সেই সময় বিজেপি ৭১টি আসনে জিতেছিল আর এনডিএ ৭৩টি আসনে। এই বার তো অখিলেশ যাদব এবং রাহুল গান্ধি একসঙ্গে নির্বাচনে লড়াই করছেন। অখিলেশজি নিজের পুরো পরিবারকে ভোটযুদ্ধে নামিয়েছেন। তিনি নিজে কনৌজ থেকে লড়ছেন, ডিম্পল লড়ছেন মইনপুরি থেকে। ফিরোজাবাদ থেকে আজমগড় পর্যন্ত লড়াই করছেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। আবার জল্পনা চলছে যে, গান্ধিরা অমেঠি এবং রায়বরেলি থেকে লড়বেন। বিষয়টাকে কীভাবে দেখছেন আপনি?

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি: রাহুল জি, যদিও আপনি গর্ব করে বারবার বলছেন যে সবাই নির্বাচনী মাঠে, এটা কি বাধ্যতামূলক না কি? তাঁরা নিজেদের পরিবারের সদস্যদের ভোটের ময়দানে নামাতে বাধ্য হচ্ছেন। এটা তাঁদের কাছে বাধ্যতামূলক। এটাই তাঁদের মূল চরিত্র। অন্য কিছু আর নেই তাঁদের। ভোটে পরিবারের সদস্যদের জন্য লড়াই এবং পরিবারের সদস্যদের লড়াইয়ে নামানো: এটা একটা খেলা।

এর পাশাপাশি আগে তাঁরা জোটশক্তিতে যোগ দেননি? এর আগেও বহুবার তাঁরা এক হয়েছেন। কিন্তু উত্তরপ্রদেশের মানুষ বোঝেন যে, কোনটা তাঁদের জন্য ভাল। আমি সংসদে বলেছিলাম, আজ উত্তরপ্রদেশ এবং দেশের পরিস্থিতি এমন যে, বড় নেতারা লোকসভার দৌড় থেকে সরে এসে রাজ্যসভার পথ নেওয়ার চেষ্টা করছেন। আর এটাই হল বিষয়। বড় নেতারা নির্বাচনে লড়াই করতে প্রস্তুত নন। কিন্তু আমরা দায়িত্ব নিয়ে কাজ করে চলেছি। সকলকে সঙ্গে নিয়ে নিজেদের কর্তব্য পালন করছি। আর আমি মনে করি, এই সময় তাঁদের কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। কিছুই নয়।

প্রশ্ন (রাহুল জোশি): আরও একটা প্রশ্ন। যদিও আপনি আংশিক ভাবে উত্তর দিয়েও দিয়েছেন। তাই বিষয়টাকে সংক্ষিপ্তই রাখছি। বিরোধী কংগ্রেস বলছে যে, সরকার ইডি, সিবিআই এবং ইন্টেলিজেন্স এজেন্সিগুলির অপব্যবহার করছে। আপনি বলেছেন যে, ইডি স্বাধীন। এক সংবাদপত্র একটি বিশ্লেষণ করেছে যে, ২৫ জন বিরোধী নেতা যখন বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন, তখন তাঁদের মধ্যে ২৩ জনের বিরুদ্ধে থাকা মামলা বাতিল অথবা খারিজ হয়ে গিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি: প্রথমত, একটাও মামলা বাতিল হয়নি। আদালতগুলি যা সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, সেটাই ঘটবে। তারা স্বাধীন। দ্বিতীয়ত রাজনৈতিক নেতৃত্ব সম্পর্কিত এ ধরনের মামলা কতগুলি? মাত্র ৩%। এমনকী বড় আমলারাও জেলে রয়েছেন। সর্বোপরি কেন এই সংস্থাগুলি গঠন করা হয়েছে? যদি ওই সংস্থাগুলি একটি উদ্দেশ্য নিয়ে গঠিত হয়, তবে তারা কি সেটা পূরণ করবে না? আমাদের আদালত যেভাবেই হোক সবার উপরে… আদালত অবশ্যই এটি পরীক্ষা করবে। আর দুর্নীতির বিষয়টাকে হালকা ভাবে নেওয়া উচিত নয়। এটা নিয়ে একটা বিতর্ক হওয়া উচিত।

একটা সময় ছিল যখন অভিযোগও সমস্ত কিছুকে নাড়িয়ে দিতে পারত। আর আজ দোষী সাব্যস্ত হওয়া এবং শাস্তি পাওয়ার পরেও কেউ কেউ হাত নেড়ে নিজেদের ছবি তোলেন। তাঁরা কি দুর্নীতিকে মহিমান্বিত করছেন? এই সমালোচনা করা উচিত। দুর্নীতিকে স্বাভাবিক হিসাবে বিবেচনা করা উচিত নয়। নাহলে দেশের অনেক ক্ষতি হবে। এটা কিন্তু বিজেপি বনাম অন্যদের বিষয় নয়। আমি দেখছি যে, ধীরে ধীরে এমন একটি পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে, যেখানে এটি ভাবা হচ্ছে: ‘ওহ, ঠিক আছে। এটাই হয়।’ [কিন্তু] গরিব মানুষ মারা যাচ্ছেন। দেশকে আমাদের দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে। এটাই দেশের সংকল্প হওয়া উচিত। আমি এই ব্যবস্থাকে নীতির মাধ্যমে পরিচালনা করায় বিশ্বাস করি। প্রযুক্তি ব্যবহার করুন।

আগে একজন প্রধানমন্ত্রী বলতেন এক টাকা যায় [জনগণের দিকে], কিন্তু তাঁদের কাছে পৌঁছয় মাত্র ১৫ পয়সা। আজ আমি বলি যে, যখন এক টাকা বেরোয়, তখন পুরো ১০০ পয়সাই পৌঁছয় – ডিরেক্ট বেনিফিট ট্রান্সফার। কীভাবে? ব্যবস্থার উন্নতি ঘটিয়ে। আমরা GeM পোর্টাল চালু করেছি। যা দুর্নীতি হ্রাস করার বড় পদক্ষেপ। দ্বিতীয়ত সমাজকে আমাদের জাগ্রত করতে হবে। সেই সঙ্গে সমাজকে সচেতন করতে হবে যে, যে কোনও পর্যায়ে দুর্নীতি বরদাস্ত করা হবে না। সেই পরিবেশই দেশে গড়ে তোলা হচ্ছে। কিন্তু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা ভীত নন। কেউ তাঁদের [দুর্নীতিগ্রস্ত] সমর্থন করবেন। কারণ তাঁরা আমাদের বিরোধিতা করতে চান। সেটা কিন্তু ঠিক নয়।

প্রশ্ন (রাহুল জোশি): আপনার শেষ মেয়াদে আপনি অনেক বড় কৃতিত্ব অর্জন করেছেন। আপনি আর্টিকেল ৩৭০ বাতিল করেছেন, আপনি CAA এনেছেন। তবে প্রচারে বিরোধী নেতারা বলছেন যে, তাঁরা সরকার গঠন করলে সিএএ বাতিল করবেন। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো বলেছেন যে, তিনি সিএএ কার্যকর হতে দেবেন না। আপনি এটা কীভাবে দেখছেন?

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি: প্রথমত, যিনি ভারতের সংবিধান বোঝেন, যিনি ভারতের ফেডেরাল কাঠামো জানেন, এবং যিনি জানেন যে, কার এক্তিয়ারে কী রয়েছে, তিনি কখনও এই ধরনের কথা বলবেন না। কারণ এটা তাঁদের এক্তিয়ারে নেই। মোদি যদি কোনও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হন, তিনি এমন কাজ করতে পারতেন না। যা তাদের পরিধির মধ্যে রয়েছে, সেটাই করবে কেন্দ্রীয় সরকার। আবার রাজ্য সরকারও তার নিজের পরিধিতে যা আছে, তা-ই করবে। কিন্তু জনগণকে বোকা বানানো আজকাল একটা ট্রেন্ড – তাঁদের অন্ধকারে রাখা। সেজন্য তাঁরা এই সব কিছু বলতে থাকেন।

দ্বিতীয়ত আমি কংগ্রেস পার্টিকে একটি সাংবাদিক সম্মেলন করার জন্য চ্যালেঞ্জ জানিয়েছি এবং বলেছি যে, তারা ৩৭০ পুনরুদ্ধার করুক। তারা তো সংবিধান নিয়ে বড় বড় কথা বলে। আবার বাবাসাহেব অম্বেডকরের কথাও বলে। এমনকী তারা আমাদেরও অনেক গালমন্দ করে। কিন্তু বাবাসাহেব অম্বেডকরের সংবিধান সমগ্র দেশের জন্য প্রযোজ্য ছিল না। প্রায় ৭০ বছর ধরে জম্মু ও কাশ্মীরে তো ভারতীয় সংবিধান প্রযোজ্য ছিল না। সেখানে দলিতরা প্রথমবার [আর্টিকেল ৩৭০-এর পরে] সংরক্ষণ পাচ্ছে। আবার প্রথমবারের জন্য বাল্মীকি সম্প্রদায়ও সংরক্ষণ পাচ্ছে। তারা কি সম্পর্কে কথা বলছে? তাদের কি সাহস আছে সাংবাদিক সম্মেলন করে ‘আমরা আর্টিকেল ৩৭০ ফিরিয়ে আনব’ বলার? কোনও দল কি তা বলতে পারবে?

প্রশ্ন (রাহুল জোশি): মোদিজি, এবার বাংলার দিকে এগোনো যাক। সেখানে পুরোদমে নির্বাচন হচ্ছে। গতবার ২০১৯ সালে যখন আপনি সেখানে ৪২টি আসনের মধ্যে ১৮টি আসনে জিতেছিলেন, মানুষ তখন অবাক হয়েছিলেন। এবার আপনাদের একজন নেতা বলেছেন, আপনারা ৩৬টি আসনে জয়ী হবেন। রাজনাথ সিংজি একটি সাক্ষাৎকারে আমায় বলেছিলেন যে, বিজেপি ৩৬টি আসন জিততে পারে। আপনি কীভাবে পরিস্থিতির মূল্যায়ন করবেন?

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি: এঁদের নিয়েই সমস্যা, যাঁদের বিষয়ে আপনি বলছেন তাঁরা অবাক হয়েছেন। আসলে এঁরা ১০ বছর পরেও এটা বিশ্বাস করতে চান না যে, দেশের নাগরিকরা নিজেদের প্রধানমন্ত্রী বলে মোদি নামে একজনকে নির্বাচন করেছেন। একদল মানুষ রয়েছেন, যাঁরা দেশের আজ্ঞা মানতে নারাজ। এটাই বাস্তব – দেশের মানুষ আমাদের পাশে আছেন। আপনারা ভেবেছিলেন, এমনটা হবে না। সেটা আপনাদের ভুল। আমি সম্প্রতি মালদা গিয়েছিলাম। সেখানকার উত্তেজনাপূর্ণ পরিবেশ দেখে আমি অবাক হয়েছি। সেখানকার মানুষ বিশ্বাস করেন যে, কেন্দ্রে স্থিতিশীল

এবং বলিষ্ঠ সরকার রয়েছে। আর তার থেকে বাংলারও সুবিধা পাওয়া উচিত। তৃণমূলের শাসনে নারীরা অত্যাচারের শিকার হচ্ছেন। সন্দেশখালির ঘটনা গোটা দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছে। জনগণের ভোট দেওয়ার অধিকার রয়েছে এবং তাঁরা এই প্রক্রিয়ায় নিজেদের ক্ষোভ প্রকাশ করবেন। সুতরাং ক্ষোভ হওয়াটা স্বাভাবিক। নোটের বান্ডিল বাজেয়াপ্ত করতেও দেখেছেন আপনারা। এর আগে এত পরিমাণ টাকা জমা হতে দেখেছে? সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ৫০ কোটি টাকা, ৩০০ কোটি টাকা, ২৫০ কোটি টাকা, ২০০ কোটি টাকা জমা হতে দেখেছেন। গোটা দেশই হতবাক। যতই আড়াল করার চেষ্টা করা হোক না কেন, দেশের মানুষ এখন বোঝেন যে, এরাই লুটেরা।

রাহুল জোশি: তাহলে, এবার (বাংলায়) বড় জয়ের আশা করছেন?
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি: অবশ্যই, এটি পরিষ্কার হতে চলেছে।

প্রশ্ন (রাহুল জোশি): ওড়িশাকে কীভাবে দেখছেন? আপনি তো বিজেডি (বিজু জনতা দল)-র সঙ্গে যাননি।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি: ভারতীয় জনতা পার্টি সেখানে আলাদা ভাবে কাজ করেছে। বিজেডি আমাদের কেন্দ্রে ইস্যু-ভিত্তিক সমর্থন দিয়েছে, যেমনটা করেছে অন্য অনেক দল। আর এটাই বিজেডি-র সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক। রাজ্যস্তরে ওড়িশা নিজের আত্মসম্মান হারাচ্ছে। ওড়িয়া ভাষাও আশঙ্কার মুখে। আমি মনে করি না যে, ওড়িশার মানুষ এটা বেশিদিন সহ্য করতে পারবেন। আসলে এখানকার এত সম্পদ রয়েছে যে, আজ ওড়িশা ভারতের সবচেয়ে ধনী রাজ্য হতে পারত। কিন্তু কী ধরনের অবস্থা তৈরি হয়েছে? ওড়িশার সাধারণ মানুষের উচ্চাকাঙ্ক্ষা রয়েছে। আর আমি মনে করি যে, আমাদের (বিজেপি) কাজ করার সুযোগ পাওয়া উচিত। আমরা ওড়িশাকে অনেক উঁচুতে নিয়ে যাব।

প্রশ্ন (রাহুল জোশি): বিহারের বিষয়ে কথা বলা যাক। বিহারে আপনি আবার নীতীশজি [নীতীশ কুমার]-র সঙ্গে জোট গঠন করেছেন এবং একসঙ্গে লড়াইও করছেন। আপনি এই বিষয়টাকে কীভাবে দেখছেন? গতবার আপনি ৪০টির মধ্যে ৩৯টি আসন জিতেছিলেন। আপনি কি সেই পারফরম্যান্সের পুনরাবৃত্তি করতে পারেন?

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি: প্রথমত আমরা একসঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনে লড়েছি। পরে তারা কোথাও চলে যায় এবং এরপর আবার ফিরেও আসে। তাই একপ্রকার জনগণের নির্দেশেই আমরা একসঙ্গে রয়েছি। জনসমর্থনের কথা বলতে গেলে আমি সম্প্রতি বিহারে ছিলাম এবং আমি বিষয়টা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। এই গরমে কোনও তাঁবু বা কিছুই নেই, তা সত্ত্বেও লক্ষ লক্ষ মানুষ আমাদের সঙ্গে যুক্ত। আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। আগে আমরা বিহারে এক বিজোড় আসন হারতাম, কিন্তু এবার হয়তো একটাও হারব না।

রাহুল জোশি: ৪০টির মধ্যে ৪০টিতেই?

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি: আমরা একটাতেও হারব না।

রাহুল জোশি: এটা তো খুবই বড় বিবৃতি।

প্রশ্ন (রাহুল জোশি): মোদিজি, আমি আপনাকে একটি ব্যক্তিগত প্রশ্ন করতে চাই। আপনি অনেক নির্বাচন দেখেছেন। আপনি অনেক দিন ধরে গুজরাতে রয়েছেন। কেন্দ্রে এটি আপনার তৃতীয় নির্বাচন। আমি দেখেছি, সময়ে সময়ে বিশেষ করে নির্বাচনের সময় আপনার বিরুদ্ধে প্রায়ই ব্যক্তিগত আক্রমণ করা হয়। কখনও কখনও তো প্রধানমন্ত্রী মোদিকে গুলি করে মারার কথাও বলা হয়, আবার কখনও বা বলা হয় মাথা ভেঙে দেওয়ার কথাও। সম্প্রতি রাহুল গান্ধিও এমন কিছু কথা বলেছেন, যা ব্যক্তিগত আক্রমণ বলে মনে করা যেতে পারে। কেন এমন হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে?

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি: আমার কাছে এর কোনও উত্তর নেই। কিন্তু মোদিকে কেন এই প্রশ্ন করা হবে? এই প্রশ্ন তো দেশ এবং জনজীবনে আলোচনা হওয়া উচিত। সর্বোপরি মোদির অপরাধ কী? তিনি প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন, এটাই তাঁর অপরাধ, তাই না? তার মানে আপনি যা-ই গালি দিন না কেন, সেটা আপনি প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যেই দিচ্ছেন। আমরা প্রধানমন্ত্রীর মাথা ভেঙে দেব বলা কিংবা আমার মাকে গালমন্দ করা… আমি হতবাক যে, ভারতের রাষ্ট্রপতিকেও অপমান করা হয়েছ। এতে আমি লজ্জিত। আমি সব সময় ভোটার এবং দেশকে আমার পরিবার মনে করেছি। আমি একটি ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। তবে আমি আপনার মতো মানুষদের এবং ভোটারদের উপর এই ধরনের মানুষদের সঙ্গে মোকাবিলা করার দায়িত্ব ছেড়ে দিচ্ছি।

প্রশ্ন (রাহুল জোশি): মোদিজি, আমি জিজ্ঞাসা করতে চাই, কিভাবে আপনার তৃতীয় মেয়াদ প্রথম এবং দ্বিতীয় মেয়াদের তুলনায় আলাদা হবে?

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি: আমার প্রথম মেয়াদ কেমন ছিল? আমি সাধারণ মানুষের মৌলিক চাহিদার বিষয়টাকে তুলে ধরতে চেয়েছি। আমি সেটা নিয়েই কাজ করেছি। সেই সময় দেশে ছিল হতাশার পরিবেশ, সরকারের প্রতি বিদ্বেষের পরিবেশ। আমাকে আত্মবিশ্বাসটা তৈরি করতে হয়েছিল। আমি সেটাই করেছি। আবার দ্বিতীয় মেয়াদে, আমি কিছু ফলাফল দেখিয়েছি এবং জনগণকে আত্মবিশ্বাসে ভরিয়ে দিয়েছি, যে আমরা এগিয়ে যেতে পারি। দেশে আত্মবিশ্বাসের একটা পর্যায় এসেছে। সেই আত্মবিশ্বাস অনেক বড় শক্তি।

এখন প্রত্যাশা যখন আত্মবিশ্বাস এবং আকাঙ্ক্ষায় রূপান্তরিত হয়েছে, তখন আমি আমার তৃতীয় মেয়াদে দেশকে তৃতীয় অর্থনৈতিক সুপারপাওয়ারে রূপান্তরিত করতে চাই। দেশকে ১১-তম থেকে পঞ্চম স্থানে আনার পর [বিশ্বের অর্থনীতির আকার নিরিখে] এর একটা ধারাবাহিকতা থাকবে। মনমোহন সিংয়ের আমলে আমরা ১১-য় ছিলাম, অনেক চেষ্টার পরে আমরা এটিকে পাঁচে নিয়ে এসেছি। আর এখন আমরা আরও কিছু প্রচেষ্টা করব এবং দেশকে তৃতীয় স্থানে নিয়ে যাব। তাই আমরা প্রতিটি সেক্টরে ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে চাই।

উদাহরণস্বরূপ, আমরা বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য একটি বড় প্রচারাভিযান শুরু করেছি — এবং সফল ভাবে তা সরবরাহও করেছি। এখন আমার লক্ষ্য, পিএম সূর্য ঘর যোজনা এবং জিরো ইলেকট্রিসিটি বিল। আমি প্রতিটি বাড়িতে সোলার প্যানেল চাই। বিদ্যুৎ বিল শূন্য হোক, শুধু সেটাই চাই না, আরও তিনটি জিনিস আমি চাই। এক, প্রতিটি পরিবারের বিদ্যুৎ বিল শূন্য হওয়া উচিত। দুই, আমাদের উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করা উচিত এবং তিন, বৈদ্যুতিক গাড়ির যুগ আসবে বলে জ্বালানি খাতে আত্মনির্ভর হতে চাই। এই কারণেই আমি চাই যে, যাঁর কাছে স্কুটার বা গাড়ি আছে, তিনি যেন সৌরশক্তির মাধ্যমেই তা বাড়িতে চার্জ করতে পারেন। এর অর্থ হল, ওই ব্যক্তির জন্য প্রতি মাসের ১০০০-২০০০ টাকা যাতায়াত খরচও শূন্য হয়ে যাবে। এতে নাগরিকরা উপকৃত হবেন এবং দেশ পরিচ্ছন্ন পরিবেশের সুফল পাবে।

পেট্রোলিয়াম আমদানিতে যে কোটি কোটি ডলার খরচ হচ্ছে, তা বন্ধ হয়ে যাবে। সুতরাং এটি একাধিক সুবিধা-সহ একটি স্কিম। এর পাশাপাশি একটি স্টার্ট-আপ হাব, ম্যানুফ্যাকচারিং হাব, ইনোভেশন হাব করতে চাই আমি। আত্মবিশ্বাসে ভরপুর হয়ে দেশকে সম্পূর্ণ নতুন এক উচ্চতায় নিয়ে যেতে চাই। আমার লক্ষ্য পরিষ্কার, এমনকী আমার কোনও সন্দেহও নেই। আগামী ৪ জুনের পর আমি স্পষ্ট ভাবে জানি যে, আগামী ১০০ দিনের মধ্যে এমনকী ২০৪৭ সালের মধ্যে আমাকে কী কী করতে হবে। আমি ২০৪৭ সালের মধ্যে বিকশিত ভারত সম্পর্কে আমি স্পষ্ট ধারণা রাখি। সেই কারণেই আমি বলি ২০৪৭ সালের জন্য ৭ দিনে ২৪ ঘণ্টা।

প্রশ্ন (বিলাস বড়ে): আপনি আপনার এই যাত্রায় অনেক অসুবিধার সম্মুখীন হয়েছেন। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতেও আপনি কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কীভাবে এটা করতে পেরেছেন?

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি: আমি কঠিন সিদ্ধান্ত নিই না, আমি সঠিক সিদ্ধান্ত নিই। সিদ্ধান্ত কঠিন নয়, সিদ্ধান্ত সঠিক হওয়া উচিত; যদিও কেউ কেউ তা কঠিন বলে মনে করেন। কিন্তু মাঝে মাঝে, আমি ভাবি কীভাবে এইসব সম্ভব। আপনি যেমন অবাক হচ্ছেন, আমিও অবাক হচ্ছি, কীভাবে মোদি এটা করেন। তখন ভাবি, না, হয়তো ঈশ্বর আমায় এই কাজের জন্যই পাঠিয়েছেন। আমি যা করছি, তা একটি ঐশ্বরিক শক্তি দ্বারা অনুপ্রাণিত। এটা ঈশ্বরের উপহার হতে পারে। ঈশ্বর আমাকে দিয়ে এই কাজটি করাতে চান এবং আমাকে এখানে একটি উদ্দেশ্য নিয়েই পাঠিয়েছেন। আর সেই কারণেই আমি ঝড় থেকে দূরে থাকি।

বিলাস বড়ে: কিন্তু এই ঝড়েও শান্ত থাকেন কীভাবে?

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি: আমি এর থেকে দূরে থাকি। ঈশ্বর আমায় এই পথ দেখিয়েছেন যে, তুমি অন্য কিছুতে জড়িও না। কারণ তোমায় কিছু বড় কাজ করতে হবে এবং তাতেই নিয়োজিত থাকতে হবে। সুতরাং, এটা ঈশ্বরের নির্দেশ, ঈশ্বরের ইচ্ছা, ঈশ্বরের পরিকল্পনা এবং সম্ভবত তাঁরই প্রভাব। আমি একটি যন্ত্র মাত্র।

প্রশ্ন (রাহুল জোশি): আমি আপনাকে কিছু জিজ্ঞাসা করতে চাই। আমরা আপনাকে দেখছি, আমরা আপনার সময়সূচিও পেয়েছি। আপনি জায়গায় যাচ্ছেন, এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে প্রায় পাঁচ থেকে ছয়টি করে সমাবেশ করছেন। এই সবের মধ্যে আপনি কীভাবে ফিট বা সুস্থ থাকেন? এমন কোন শক্তি রয়েছে, যা আপনাকে এগিয়ে যাওয়ার এই দৃঢ় সংকল্প প্রদান করছে?

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি: প্রথমত, আমি যেমনটা বলেছি, আমি কিছুই করছি না। স্বয়ং ঈশ্বর এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এব সম্ভবত তিনিই এই কাজের জন্য আমায় পাঠিয়েছেন। আমি এমন একটি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছি, যেখানে আমার মায়ের অক্ষরজ্ঞান নেই, এমনকী তিনি স্কুলের মুখ পর্যন্ত দেখেননি। আমার কোনও রাজনৈতিক পটভূমি নেই আর এটা এত বড় দেশ। তাহলে এটা যদি ঈশ্বরের ইচ্ছা না হয়, তাহলে এটা আসলে কী? আর আমার জন্য দুটি ঈশ্বর রয়েছেন – একটি যা আমরা দেখতে পাই না এবং অন্যটি হল জনসাধারণ।

আমি সাধারণ মানুষকে ঈশ্বরের রূপ বলে মনে করি। আমি সর্বশক্তিমানে বিশ্বাস রাখি, যিনি আমাকে এই কাজের জন্য পাঠিয়েছেন। আর জনসাধারণও আমায় আশীর্বাদ করেছেন। আমি কীভাবে এত কাজ করতে পারি সেই প্রশ্নের উত্তরে জানাই যে, আমি নিজের জন্য বাঁচি না। আমি সব সময় মনে রাখি যে, আমার হাতে যতটুকু সময় আছে, আমি যেন তার প্রতিটি মুহূর্তে দেশের জন্য কাজ করি। যত দূর দৌড়াচ্ছি, এটা একটা বড় উৎসব, বা একটা উৎসবের মতো। এটি জনসাধারণের কাছে পৌঁছনোর, তাঁদের সঙ্গে দেখা করার এবং তাঁদের সঙ্গে কথা বলার একটি সুযোগ। এটিকে সেভাবে দেখা এবং এর সুবিধা নেওয়াই আমাদের উচিত।

এটি গণতন্ত্রের একটি উদযাপন, যেখানে আমাদের যুক্ত হওয়া উচিত। আসলে যখন বাড়িতে কোনও গুরুত্বপূর্ণ পূজা হয় এবং আমরা যেভাবে এতে যুক্ত থাকি, সেভাবেই এক্ষেত্রেও যোগ দেওয়া উচিত। আর এটা আমার জন্য প্রার্থনার সময়, কারণ আমি ১৪০ কোটি দেবতার পূজা করছি। আমি এই মনোভাব নিয়ে চলি, যা আমাকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে। আমি কখনওই ক্লান্ত হই না, কারণ আমি ঈশ্বরের দর্শন করেই বাড়ি ফিরি।

রাহুল জোশি: মোদিজি, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আপনি আমাদের জন্য এত সময় বার করেছেন। আপনার স্লোগানের মতো, আমাদেরও এবার একটি স্লোগান রয়েছে – ‘আগলি বার, সির্ফ নিউজ 18 পর আর পার’। আমাদের আপনার সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি: অনেক অনেক ধন্যবাদ। নমস্কার। সকলকে আমার শুভেচ্ছা।