ভাইরাল বিক্রেতা

Food News: বিমান সংস্থার এঞ্জিনিয়ার থেকে ফুটে পোলাও-মাংস বিক্রি! অভাবকে ছাপিয়ে গেলেন সন্দীপ

উত্তর ২৪ পরগনা: ছিলেন জেট এয়ারওয়েজের এঞ্জিনিয়ার, ভাগ্যের পরিহাসে বেসরকারি ওই বিমান সংস্থা বন্ধ হতেই পথে এসে দাঁড়াতে হয় মাঝবয়সি মধ্যমগ্রামের সন্দীপ দাশগুপ্তকে। আকাশ ছোঁয়া যানের নিয়ন্ত্রণ থেকে বাস্তবের মাটিতে ছিটকে পড়ে শুরু করেন হার না মানার লড়াই। সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে আজ ভাইরাল সন্দীপ। কম খরচে রাস্তার ধারে পোলাও মাংস, আলুর দম খাইয়ে ভোজন রসিকদের মন জয় করেছেন বেসরকারি বিমান সংস্থার কাজ হারানো এই ইঞ্জিনিয়ার। মাত্র ৮ প্যাকেট পোলাও এবং মাংস নিয়ে ২০২৩-এ সংসারের হাল ধরতে মধ্যমগ্রাম সোদপুর রোডের কালিবাড়ি এলাকায় ফুটপাতের ধারে বসেন তিনি।

ছোট্ট টেবিলে গামলা রেখে পোলাও-মাংস বিক্রি করে সেই শুরু ঘুরে দাঁড়ানো লড়াই। পরবর্তীতে সোশ্যাল মিডিয়া এবং ইউটিউবারদের দৌলতে, সন্দীপের এই লড়াইয়ের কথা উঠে আসে প্রকাশ্যে। তারপর থেকেই বদলাতে শুরু করে পরিস্থিতি। এখন চরম ব্যস্ততায় ফুটপাতে দাঁড়িয়ে দোকান সামলাতে হয় পোলাও-মাংস বিক্রেতা সন্দীপ দাশগুপ্তকে। তাঁর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১৩-১৪ সালে বেসরকারি বিমান সংস্থার হয়ে চেন্নাইয়ে পোস্টিং ছিল তাঁর। তখন বাবার বোনম্যারো ক্যানসার ধরা পরে। সেই খবর শোনার পরই কলকাতায় ট্রান্সফার নিয়ে চলে আসেন সন্দীপ। তবে নানা চেষ্টার পরও বাবাকে ধরে রাখতে পারেননি তিনি। বাবার মৃত্যুর শোক সামলাতে না পেরে, না ফেরার দেশে পাড়ি দেন মা-ও। মানসিকভাবে অনেকটাই ভেঙে পড়েন সন্দীপ-সহ গোটা পরিবার।

২০১৯ সালে হঠাৎই বন্ধ হয়ে যায় বেসরকারি ওই বিমান সংস্থা। চাকরি চলে যায় সন্দীপের। আকাশ ভেঙে পড়ে মাথায়। তবুও হেরে না গিয়ে অনেক চেষ্টার পর সৌদি আরবে কন্ট্রাকচুয়াল কাজ যান তিনি। কিন্তু পারিবারিক সমস্যায় স্ত্রী-সন্তান ছেড়ে বিদেশে মন টেকে না তাঁর। ফিরে আসেন। কিন্তু এ বার কী করবেন! একদিন বাড়িতে স্ত্রীর হাতে তৈরি আট প্যাকেট পোলাও মাংস নিয়ে মধ্যমগ্রামের রাস্তায় টেবিল পেতে বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেন। শুরু হল নতুন এক জীবন। আস্তে আস্তে প্যাকেট বাড়ল, পোলাও-এর গামলা বাড়ল, চিকেনের সঙ্গে জুড়ল মাটনয নিরামিষ হলে সঙ্গে আলুর দম। আজ সোশ্যাল মিডিয়ায় এই বাসন্তী পোলাও আর মাংসের যুগলবন্দি কম খরচে মন জিতে নিয়েছে ভোজন রসিকদের। সন্ধ্যার পর থেকেই তাই ভিড় জমছে অস্থায়ী ছাতা দিয়ে টেবিলের উপর পোলাও-মাংসের গামলা রেখে বিক্রি করা সন্দীপের দোকানে।

আরও পড়ুন: হাতে আর ঘণ্টাখানেক! ধেয়ে আসছে বৃষ্টি, প্রবল বজ্রপাত! শক্তিশালী নিম্নচাপের জেরে ভাসবে বঙ্গের ৪ জেলা

আরও পড়ুন: সন্ন্যাসী হওয়ার ইচ্ছেয় গেরুয়া বসনে বাড়ি ছাড়ল একাদশ শ্রেণির ছাত্র!

গরম, কালবৈশাখীর ঝড় মাথায় করেই এখন দিনে ১২ থেকে ১৪ কেজি পোলাও-মাংস বিক্রি করছেন এই বিক্রেতা। ক্রেতাদের ভিড় সামাল দিতে রেখেছেন একজন সহকারীও। তাঁর আবেদন, মধ্যমগ্রামের এই এলাকায় যদি একটি দোকান ভাড়া পেতেন, তবে আরও সুন্দরভাবে পরিষেবা দিতে পারতেন মানুষকে। কিন্তু এই অঞ্চলে এত চরা ভাড়া দিয়ে দোকান নেওয়ার সামর্থ্য তাঁর নেই। তাই এখন ফুটপাতেই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। স্বপ্ন, একদিন বদলাবে সময়। নিজের দোকানেই পোলাও মাংস বিক্রি করবেন সন্দীপ।

রুদ্র নারায়ণ রায়