মথুরাপুর: জল, জঙ্গলে ঘেরা লোকসভা কেন্দ্র হল মথুরাপুর লোকসভা কেন্দ্র। এই লোকসভা কেন্দ্রের বহু এলাকা এখনও সামাজিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে অনুন্নত। এই আসনটি সংরক্ষিত (এসসি) লোকসভা কেন্দ্র।
নদীর ধারে বাস, দুঃখ বারোমাস, এই উপমা যথার্থ দক্ষিণ ২৪ পরগনার মথুরাপুর লোকসভা কেন্দ্রের জন্য।
২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সপ্তম দফা ভোটগ্রহণ
এই কেন্দ্রের অধিকাংশ এলাকা জল-জঙ্গলে ঘেরা। নদীবাঁধ ভাঙনের সমস্যা, পরিযায়ী শ্রমিক ও অর্থনৈতিক বঞ্চনায় জর্জরিত এই এলাকা। তবে এই এলাকায় রয়েছে একাধিক পর্যটন কেন্দ্র ও দর্শনীয় স্থান। গঙ্গাসাগরের কপিলমুনির আশ্রম ও রায়দিঘির জটার দেউল ঐতিহাসিক স্থান। রয়েছে বকখালি, মৌসুনী, গোবর্ধনপুরের মতো সমুদ্র সৈকত ও পর্যটনকেন্দ্র। রয়েছে ভগবৎপুর কুমির প্রকল্প ও মৎস্যবন্দর।
লোকসভা নির্বাচন ২০২৪ বুথ ফেরত সমীক্ষা
আরও পড়ুন: হাওড়া স্টেশনের কোন খাবার ভারত-বিখ্যাত জানেন? জানুন দেশের আরও ৭ স্টেশনের জনপ্রিয় পদের নাম
বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনভূমি সুন্দরবনের কিছু অংশ এই লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে পড়ে। এত বৈচিত্র্য থাকা সত্ত্বেও এই এলাকা এখনও অনেক পিছিয়ে। আয়ের একটা বড় অংশ আসে মৎস্য শিকার করে। এখানে গ্রামাঞ্চলের ভোটারই সিংহভাগ প্রায় ৯৪ শতাংশ। সত্তর দশকের লাল দুর্গ মথুরাপুর এখন পুরোটাই ঘাসফুলে ঢাকা। এই লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত বিধানসভা কেন্দ্রগুলি হল পাথরপ্রতিমা, কাকদ্বীপ, সাগর, কুলপি, রায়দিঘি, মন্দিরবাজার, মগরাহাট পশ্চিম।
মোট ভোটদাতার সংখ্যা ১৮,১৭,০৬৮, মহিলা ভোটার ৮,৮৩,৪৫০ জন ও পুরুষ ভোটার ৯,৩৩,৫৮৫ জন, তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছে ৩৩ জন। মোট ভোটগ্রহণ কেন্দ্র রয়েছে ১,৮৯৮ টি। ২০১৪ সালের ষোড়শ লোকসভা ভোটে এই কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়েছিলেন ঘাসফুল শিবিরের চৌধুরী মোহন জাতুয়া। ২০১৯ সালের সপ্তদশ লোকসভাতেও তিনিই জয়ী হন। ২০০৯ সাল থেকে তিন বার সাংসদ ছিলেন তিনি।
বর্তমানে এই কেন্দ্রে ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১২ জন প্রতিযোগী। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রার্থীগুলি হলেন, তৃণমূল কংগ্রেসের বাপী হালদার, বিজেপির অশোক পুরকাইত, সিপিআইএম-এর শরৎচন্দ্র হালদার, আইএসএফ এর অজয় কুমার দাস। ২০০৯ সালের আগে এই লোকসভা কেন্দ্রে বামেদের আধিপত্য ছিল। ১৯৮৯ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত এই কেন্দ্রে জিতে এসেছে সিপিআইএম। ১৯৬২ সাল থেকে একাত্তর পর্যন্ত এই লোকসভা কেন্দ্র কংগ্রেসের দখলে থাকলেও ১৯৭১ থেকে তা চলে যায় বামেদের দখলে। যদিও ১৯৮৪ থেকে ১৯৮৯ পর্যন্ত ফের ক্ষমতায় ফিরেছিল কংগ্রেস।
২০১১ সালের আদমশুমারি অনুসারে মথুরাপুর (এসসি) লোকসভা কেন্দ্রে সাক্ষরতার হার প্রায় ৬৮ শতাংশ। ২০১১-এর জনগণনা অনুযায়ী, এই কেন্দ্রে তফসিলি জাতির ভোটার প্রায় ২৯%। তফসিলি উপজাতি সম্প্রদায়ের ভোটারের সংখ্যা ০.৫ শতাংশ। এই কেন্দ্রে সংখ্যালঘু ভোটার প্রায় ২৪.১ শতাংশ। পান ও সবজি এবং মাছচাষ, সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়াই পেশা এই লোকসভার বেশিরভাগ মানুষের।
তবে অনেকেই এখন বেশি রোজগারের আশায় পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে ভিনরাজ্যে পাড়ি দিচ্ছেন। এবারের লোকসভা নির্বাচনে জল জঙ্গলে ঘেরা এই এলাকায় নির্বাচনে নিরাপত্তার জন্য, সুন্দরবন পুলিশ জেলায় থাকছে ১১৪ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী। ১ জুন এই কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ। একাধিক সমস্যার মধ্যে থেকেও এই কেন্দ্রের মানুষজন অংশ নিতে যাবেন দেশের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক উৎসবে। এখন দেখার তাদের জনমত কোনদিকে যায়।
নবাব মল্লিক