তৃণমূল কংগ্রেস

Manoranjan Bapari: ‘রাজনীতিতে আসাই ভুল হয়েছে!’ তিন বছরেই মোহভঙ্গ তৃণমূল বিধায়কের, ফেসবুকে বিস্ফোরক পোস্ট

বলাগড়: এর আগেও একাধিকবার সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা পোস্ট তিনি করেছেন৷ নানা সময়ে তাঁর পোস্টের জন্য বিব্রত হতে হয়েছে শাসক দলকে। নির্বাচনের ফল প্রকাশের পরেই বলাগড়ের বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারির এই পোস্ট নিয়ে ফের নতুন করে চর্চা শুরু হয়েছে।।

বলাগড়ের তৃণমূল বিধায়ক সমাজমাধ্যমে লিখেছেন, ‘আমার প্রিয় পরিচিত বন্ধু বর্গের অনেকের অভিমত, রাজনীতিতে আসা আমার ভুল হয়েছে। আজ আমারও তাই মনে হয়। এই তিন বছরে যেটা আমার নিজের জগত-লেখালিখির জগত, সেখান থেকে বিচ্যুত হয়ে অনেকটা পিছিয়ে পড়েছি। বইমেলা আসছে! অনেকের অনেক বই বের হবে, আমার হবে না। এ আমার কাছে এক দুঃসহ যন্ত্রণা !  দেখতে গেলে আমার গোটা জীবনটাই তো মহা মহা ভুলের সমাহার। এক দুবার নয়- শত শতবার ভুল করেছি। ভুল করা আবার সংশোধন করা, এই করতে করতে কেটে গেছে ব্যর্থ অসফল একটা জীবন।রাজনীতিতে এসে ভুল হয়ে থাকলে এটাকেও শুধরে নেবো।শুধরে নিতে কতক্ষণ? মন চাইলেই বেরিয়ে পড়বো ঝোলাঝুলি কাঁধে নিয়ে।’

আরও পড়ুন: ভোটের ফলে শিক্ষা হয়েছে, ভুল স্বীকার করে মুখ খুললেন প্রশান্ত কিশোর!

তৃণমূল বিধায়ক মনে করিয়ে দিয়েছেন, ২০১৯ সালের লোকসভা ফলের নিরিখে বলাগড় বিধানসভায় তৃণমূল বিজেপির তুলনায় অনেকটা পিছিয়ে থাকলেও ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে তিনি জয়ী হয়েছিলেন৷ মনোরঞ্জন ব্যাপারি লিখেছেন, ‘আমার নির্বাচনী বক্তব্যে মানুষকে বলেছিলাম, আমি জিতলে বলাগড়ের মাটি ,বালি মাফিয়াদের জঙ্গলের রাজত্ব চলতে দেব না।গাঁজা পাচার, জুয়ার ঠেক, গরু পাচার, রেশনের মাল পাচার, সবুজ দ্বীপের অরণ্য ধ্বংস বন্ধ করে দেবো। কোনও দল  দেখব, না নেতা দেখব না, যে অপরাধী দুষ্কৃতী কেউ আমার হাত থেকে রেহাই পাবে না। আমার এই কথায় বলাগড়ের সাধারণ মানুষ আমাকে বিশ্বাস করে ছিলেন, ভোট দিয়েছিলেন।’

এর পরেই দলের অস্বস্তি বাড়িয়ে তিনি আরও লিখেছেন, ‘আমি জয়ী হয়ে আমার প্রতিজ্ঞা মতো ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম সামাজিক আবর্জনা সাফাইয়ের কাজে। এতে বলাগড়ের মাটি মাফিয়া, বালি মাফিয়া সহ সমস্ত ধরনের দুষ্কৃতী তটস্থ হয়ে গিয়েছিল। মজার কথা, আমি যেখানে যে অপরাধীকে রাত দুপুরে হানা দিয়ে হাতেনাতে ধরে ফেলতাম, দেখতাম তাদের পিছনে আছে তৃণমূলেরই কোনও না কোনও নেতা। তাঁরা আমার উপরে খুব ক্ষুব্ধ হচ্ছিল বটে তবে গোটা বলাগড় জুড়ে  আমার জনসমর্থন ব্যাপক বেড়ে যাচ্ছিল।শত্রু বেড়ে যাচ্ছিল, কয়েকটি হামলাও হয়েছিল আমার উপর, এমন কি, প্রাণহানির আশঙ্কা দেখা দিচ্ছিল তবু আমি জনগণের ভালোবাসার লোভে নিজের মতপথ থেকে সরে আসতে পারছিলাম না।   এইভাবেই কেটে গেছে তিন তিনটে বছর। এসে গিয়েছে ২৪-এর  লোকসভার  ভোট।তখন বলাগড়ের নেতারা একযোগে গিয়ে নালিশ করেছে-জেলার নেতাদের কাছে, যে আমাদের ভাতে মারছে, জলে মারছে, এই লোকটা যদি লোকসভার প্রচারে থাকে আমরা থাকবো না। তাঁরা আবার গিয়ে নালিশ করেছে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে,  মনোরঞ্জন ব্যাপারীকে সরিয়ে না দিলে বলাগড়ের কোনও নেতাই রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রচারে থাকবে না। বাধ্য হয়ে দিদি ভেবেছেন একজনকে সরিয়ে দিলে যদি চারজন আর তাদের চল্লিশজন চেলা চামুণ্ডা একসঙ্গে থাকে সেটাই করা উচিৎ। তাই তিনি আমাকে লোকসভার নির্বাচন থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছেন।’

সরাসরি দলনেত্রীর উপরেই অভিমান করে মনোরঞ্জন ব্যাপারি লিখেছেন, ‘বলাগড়ের এক সভায় হাজার হাজার মানুষের সামনে অত্যন্ত কঠোর ভাষায় আমাকে বলেছিলেন, আপনাকে আর নির্বাচনের প্রচার করতে হবে না। সেদিন যেন  অপমানে মাটির মধ্যে সেঁধিয়ে গিয়েছিলাম আমি।দেখেছিলাম তখন ওই  চল্লিশজনের চোখে মুখে কী পরিতৃপ্তির হাসি, কী দন্ত বিকসিত উল্লাস! ওঁরা যেমন আমার সঙ্গে চলতে চায় না, আমিও ওদের সঙ্গে চলতে চাই না।’

সবশেষে অভিমানী তৃণমূল বিধায়ক লিখেছেন, ‘ভোটপর্ব মিটে গিয়েছে, দেখা যাক মাননীয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক  বন্দ্যোপাধ্যায় আমার বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেন।দলে থাকি বা না থাকি, ওনারা রাখেন বা না রাখেন, মানুষের মনের মণিকোঠায় আমি অমলিন একটা ছবি রেখে যেতে পারছি , এটাই আমার সবচেয়ে বড় সার্থকতা।”তবে বলাগড়ের বিধায়কের এই পোস্ট নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি নয় শাসক দল।’