নরেন্দ্র মোদি জি ৭ সামিটে শীর্ষ রাষ্ট্রনেতাদের দ্বিপাক্ষিক বৈঠক

G7 শীর্ষ সম্মেলনের পাওয়ার করিডর, বাইডেন, জেলেনেস্কি, পোপ, মেলোনিদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক মোদির

আপুলিয়া: শুক্রবার চূড়ান্ত ব্যস্ততার মধ্যে কাটল G7 শীর্ষ সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন। একাধিক রাষ্ট্রনেতার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। দক্ষিণ ইতালি থেকে রওনা দেওয়ার আগে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে তিনি লেখেন, “আমরা একসঙ্গে এমন সমাধান নিয়ে আসব যাতে বিশ্ববাসীর উপকার হবে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য তৈরি হবে উন্নত বিশ্ব”। শনিবার সকাল ১০টা নাগাদ নয়াদিল্লিতে অবতরণ করে প্রধানমন্ত্রীর বিমান। এখানে রইল G7 শীর্ষ সম্মেলনে রাষ্ট্রনেতাদের সঙ্গে মোদির বৈঠকের কিছু ঝলক।

ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ: ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গে এই নিয়ে একবছরে চতুর্থবার বৈঠকে বসলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তৃতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নেওয়ার পর কোনও আন্তর্জাতিক নেতার সঙ্গে মোদির প্রথম আনুষ্ঠানিক দ্বিপাক্ষিক বৈঠক এটাই। প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, চমৎকার বৈঠক হয়েছে। স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ জোরদার করা নিয়ে আলোচনা হয়েছে দু’পক্ষের।

ঋষি সুনাক: G7 শীর্ষ সম্মেলনে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির। এনডিএ সরকারের তৃতীয় মেয়াদে ভারত-ইউকে স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ আরও জোরদার করা নিয়ে আলোচনা হয়। মোদি লিখেছেন, “সেমিকন্ডাক্টর, প্রযুক্তি এবং বাণিজ্য খাতে সম্পর্ক আরও গভীর করার সুযোগ রয়েছে। প্রতিরক্ষা নিয়েও আলোচনা হয়েছে আমাদের”। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল দুই নেতার বৈঠককে ‘ফলদায়ক’ আখ্যা দিয়েছেন।

আরও পড়ুন – Texas Event: টেক্সাসে বন্দুকবাজের হামলা, কনসার্টে ২ দলের মধ্যে কোন্দল, বেরিয়ে এল বন্দুক, চলল এলোপাথাড়ি গুলি

ভলোদিমির জেলেনিস্কি: বৈঠকে ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি ভলোদিমির জেলেনেস্কিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জানিয়েছেন, ইউক্রেন সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য ভারত সবকিছু করতে প্রস্তুত। ‘সংলাপ এবং কূটনীতি’-ই শান্তির একমাত্র পথ। G7 শীর্ষ সম্মেলনে জেলেনেস্কির সঙ্গে বৈঠকে আসন্ন সুইস শান্তি সম্মেলন নিয়েও আলোচনা হয় মোদির। সুইজারল্যান্ডে উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল পাঠানোর জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন জেলেনেস্কি। বৈঠকে মোদি বলেছেন, ইউক্রেন সংঘাতের সমাধান খুঁজতে ভারত ‘মানবকেন্দ্রিক’ পথে বিশ্বাস করে।

জর্জিয়া মেলোনি: ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির সঙ্গে প্রতিরক্ষা এবং নিরাপত্তা সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করেন মোদি। প্রতিরক্ষা শিল্পে সহযোগিতা বৃদ্ধির আশা করেছেন দু’পক্ষই। বিদেশ মন্ত্রকের জারি করা বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “দুই পক্ষ দ্বিপাক্ষিক প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করেছে এবং প্রতিরক্ষা শিল্প সহযোগিতা আরও বাড়ানোর আশা করছে”।

পোপ ফ্রান্সিস: পোপ ফ্রান্সিসকে শুক্রবার ভারত সফরে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। পাশাপাশি মানুষের সেবা করার জন্য পোপের ভূয়সী প্রশংসাও করেন তিনি। দক্ষিণ ইতালির আপুলিয়াতে G7 শীর্ষ সম্মেলনের আউটরিচ অধিবেশনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, এনার্জি, আফ্রিকা এবং ভূমধ্যসাগর নিয়ে আলোচনায় অন্যান্য বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন মোদি। সেখানে পোপকে দেখেই বুকে টেনে নেন তিনি। প্রসঙ্গত, লোকসভা ভোটের আগে ভারতের খ্রিস্টান সম্প্রদায়কে বেশ কিছু প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী এবং বিজেপি।

জো বাইডেন: G7 শীর্ষ সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গেও দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। নিউইয়র্কে শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী গুরপতবন্ত সিং পান্নুনকে হত্যার চেষ্টার পিছনে ভারতের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ করেছিল ওয়াশিংটন। উত্তপ্ত হয়ে ওঠে দুই দেশের সম্পর্ক। তার প্রায় ৭ মাস পর দুই রাষ্ট্রনেতা মুখোমুখি হলেন। প্রধানমন্ত্রী এক্সে লিখেছেন, “@POTUS @JoeBiden-এর সঙ্গে দেখা করাটা সবসময়ই আনন্দের। ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের ভালর জন্য একসঙ্গে কাজ করবে”।

জাস্টিন ট্রুডো: গত বছর খালিস্তানি সন্ত্রাসবাদী হরদীপ সিং নিজ্জরের হত্যার পর থেকেই ভারত-কানাডা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে চিড় ধরে। এখনও পর্যন্ত কোনও উন্নতি দেখা যায়নি। G7 শীর্ষ সম্মেলনে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সংক্ষিপ্ত কথোপকথন হয়েছে। এই নিয়ে এক্স প্ল্যাটফর্মে তিনি শুধু লিখেছেন, “G7 শীর্ষ সম্মেলনে কানাডার প্রধানমন্ত্রী @JustinTrudeau এর সঙ্গে দেখা হল”। সম্মেলনে দেখা গিয়েছে, মোদি এবং ট্রুডো একে অপরকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। তবে তাঁদের মধ্যে কী কথা হয়েছে তা জানা যায়নি।

ফুমিও কিশিদা: জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে “শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ এবং সমৃদ্ধ ইন্দো-প্যাসিফিক” এর গুরুত্ব নিয়ে মোদির আলোচনা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, “প্রতিরক্ষা, প্রযুক্তি, সেমিকন্ডাক্টর, ক্লিন এনার্জি এবং ডিজিটাল প্রযুক্তিতে একসঙ্গে কাজ করার জন্য উন্মুখ। আমরা অবকাঠামো এবং সাংস্কৃতিক সংযোগের ক্ষেত্রেও সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই”।

ওলাফ স্কোলজ: জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ স্কোলজের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভারত-জার্মানি কৌশলগত অংশীদারিত্ব এবং কীভাবে উভয় পক্ষ বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা করেন। এক্সে মোদি লিখেছেন, “চ্যান্সেলর স্কোলজের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। ভারত-জার্মানি স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে বড় ভূমিকা পালন করতে পারে”।

জাতিসংঘের প্রধান গুতেরেস এবং জর্ডানের রাজা আবদুল্লাহ: শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে প্রধানমন্ত্রী মোদি জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এবং জর্ডানের রাজা দ্বিতীয় আবদুল্লাহর সঙ্গেও দেখা করেন।

ব্রাজিল, তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরশাহির রাষ্ট্রপতি: প্রধানমন্ত্রীকে ব্রাজিলের লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা, তুরস্কের রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহির শেখ মহম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের সঙ্গেও আলোচনা করতে দেখা গিয়েছে। এক্সে তিনি লিখেছেন, “ইতালিতে আলোচনা চলতে থাকে…রাষ্ট্রপতিদের সঙ্গে আনন্দদায়ক কথোপকথন”।

মোদির বক্তৃতা – টেক মনোপলি: ইতালির আপুলিয়ায় G7-এর আউটরিচ অধিবেশনের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেছেন, অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজের ভিত্তি স্থাপন এবং সামাজিক বৈষম্য দূরীকরণের প্রযুক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। তিনি আরও বলেছেন যে ভারত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে স্বচ্ছ, ন্যায্য, সুরক্ষিত, অ্যাক্সেসযোগ্য এবং দায়িত্বশীল করতে সমস্ত দেশের সঙ্গে কাজ করবে। বলেছিলেন যে শক্তির ক্ষেত্রে ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি চারটি নীতির উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে বলেও জানান তিনি। সেগুলি হল- প্রাপ্যতা, অ্যাক্সেসযোগ্যতা, সামর্থ্য এবং গ্রহণযোগ্যতা। গ্লোবাল সাউথের দেশগুলির উদ্দেশ্যে মোদি বলেন, বিশ্বজুড়ে অনিশ্চয়তা এবং উত্তেজনার ধাক্কা সইতে হচ্ছে তাদের।

গণতন্ত্রের জয়: প্রধানমন্ত্রী জি 7 শীর্ষ সম্মেলনের আউটরিচ অধিবেশনে ভারতের লোকসভা নির্বাচনের প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, ভোটে ঐতিহাসিক জয়ের রূপে ভারতের জনগণ যে “আশীর্বাদ” দিয়েছে তা “গণতন্ত্রের জয়”। এই নিয়ে বেশ কিছু পরিসংখ্যানো তুলে ধরেন তিনি। মোদি বলেন, “এটা সমগ্র গণতান্ত্রিক বিশ্বের জয়”।