নয়াদিল্লি: আজকের দিনেই মঙ্গুজ ব্যাটের তাণ্ডব দেখেছিল নেভিল গ্রাউন্ড। ২২ গজে লেখা হয়েছিল মহাকাব্য। সময়টা ১৯৮৩ বিশ্বকাপ। জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে অপরাজিত ১৭৫ রানের ইনিংস খেললেন কপিল দেব নিখাঞ্জ। ক্রিকেট বিশ্ব পেল এক নতুন নায়ক।
কপিলের অতিমানবিক সেই ইনিংস সেদিন চাক্ষুষ করেছিলেন স্টেডিয়ামে উপস্থিত দর্শকরাই। রূপকথার সাক্ষী হতে পারেনি বাকি ক্রিকেট বিশ্ব। কারণটা অদ্ভুত। ম্যাচ সম্প্রচারকারী বিবিসি-র কর্মীরা সেদিন ধর্মঘট ডেকেছিলেন। তাই ম্যাচ টেলিকাস্ট হয়নি।
সংবাদপত্রের ম্যাচ রিপোর্ট থেকেই কপিলের দুর্ধর্ষ ব্যাটিংয়ের কথা জানতে পারে দুনিয়া। সেই থেকে আজও ১৮ জুন ক্রিকেটপ্রেমীরা কপিলের ম্যাজিক ইনিংস উদযাপন করেন। অনেকে বলেন, কপিলের ব্যাট সেদিন ভারতীয় ক্রিকেটের গতিপথ বদলে দিয়েছিল।
১৮ জুন ১৯৮৩। রয়্যাল টুনব্রিজ ওয়েলসের নেভিল গ্রাউন্ড স্টেডিয়াম। বিপক্ষে জিম্বাবোয়ে। টসে জিতে প্রথম ব্যাট করতে নামে ভারত। শুরুতেই বিপর্যয়। পরপর আউট সুনীল গাভাসকর, কৃষ্ণমাচারি শ্রীকান্ত এবং মহিন্দর অমরনাথ। ভারতের রান তখন দুই অঙ্কের ঘরেও পৌঁছয়নি।
এরপর ব্যাট করতে নামেন সন্দীপ প্যাটেল। উল্টোদিকে যশপাল শর্মা। কিন্তু পরিস্থিতি যে কে সেই। ১৭ রানে ভারতের টপ অর্ডার খতম। হার শুধু সময়ের অপেক্ষা। বড় রান তোলা স্বপ্ন মাত্র। সেই সময় ব্যাট হাতে নামলেন কপিল দেব।
শুরু হল এক অন্য খেলা। এমন ব্যাটিং দেখার জন্যই তো অপেক্ষা করেছিলেন ভারতীয় ক্রিকেট প্রেমীরা। ৭২ বলে হাফসেঞ্চুরি। লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যান রজার বিনিকে নিয়ে লড়ছেন কপিল। একটা একটা করে রান জুড়ছেন স্কোরবোর্ডে। আর উল্লাসে ফেটে পড়ছে গোটা স্টেডিয়াম।
মধ্যাহ্নভোজের বিরতির পর খোলস ছেড়ে বেরলেন কপিল। আর একটা একটা রানের জন্য সংগ্রাম নয়। এবার ভয়ডরহীন ব্যাটিং। ১০০ বলে সেঞ্চুরি। গোটা স্টেডিয়াম উঠে দাঁড়িয়ে কুর্নিস জানালেন কপিলকে।
এখনও ম্যাচ শেষ হয়নি। রূপকথার জন্ম দিতে কপিলকে করতে হবে আরও ৭৫ রান। সেই সময় টি২০ ক্রিকেট স্বপ্ন। কিন্তু পরের মাত্র ৩৮ বলে কপিল তুলে নেন ৭৫ রান। সেই ঝড়কে টি২০ ব্যাটিংয়ের সঙ্গেই তুলনা করা যায়। ৬০ ওভার শেষে কপিল যখন মাঠ ছাড়ছেন, তখন তাঁর ঝুলিতে দুটি রেকর্ড। সৈয়দ কিরমানির সঙ্গে নবম উইকেটে ১২৬ রানের পার্টনারশিপ (২৭ বছর অটুট ছিল এই রেকর্ড)। আর নিজের ১৩৮ বলে অপরাজিত ১৭৫ রান। ইনিংসে ১৬টি বাউন্ডারি, ৬টি ছক্কা। ভারত এই ম্যাচ জেতে ৩১ রানে।