প্রতীকী ছবি৷

Wife kills husband: জিম ট্রেনারের সঙ্গে প্রেম, স্বামীকে খুন করে মানালিতে ফূর্তি! তিন বছর পর কীভাবে পুলিশের জালে স্ত্রী?

চণ্ডীগড়:  জিম করতে গিয়ে সেখানকার প্রশিক্ষকের সঙ্গেই সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন৷ ধীরে ধীরে বাড়ে ঘনিষ্ঠতা৷ স্বামী এই বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের প্রতিবাদ করতেই প্রেমিকের সঙ্গে মিলে তাঁকে খুন করার ফন্দি আঁটেন স্ত্রী৷ সেই মতো এক ট্রাক চালককে দিয়ে নিখুঁত ছক কষে স্বামীকে খুনও করান স্ত্রী৷ এর পর পরিকল্পনা মতো গোটা ঘটনাই ধামাচাপা পড়ে গিয়েছিল৷ ২০২১ সালের এই ঘটনা পুলিশ কর্তাদের মাথা থেকেও বেরিয়ে গিয়েছিল৷

কিন্তু তিন বছর পর ছোট্ট একটি হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ এবং এক পুলিশ আধিকারিকের কৌতূহলী মনের সৌজন্যে শেষ পর্যন্ত ওই মহিলা এবং তাঁর প্রেমিকের কুকীর্তি ফাঁস হয়েছে৷ গ্রেফতার হয়েছেন অভিযুক্ত দু জনেই৷ চাঞ্চল্যকর এই ঘটনা ঘটেছে হরিয়ানার পানিপথে৷

কী ঘটেছিল ২০২১ সালের ১৫ ডিসেম্বর?

জানা গিয়েছে, ২০২১ সালের ১৫ ডিসেম্বর বিনোদ ভারারা নামে এক ব্যবসায়ীকে তার পানিপথের বাড়িতে গুলি করে খুন করেন দেব সুনার নামে এক ট্রাক চালক৷ এই ঘটনায় ওই ট্রাক চালককে গ্রেফতার করে পুলিশ৷ ওই ট্রাক চালক পুলিশকে জানায়, ওই ব্যবসায়ীর গাড়ির সঙ্গে তাঁর ট্রাকের দুর্ঘটনা হয়েছিল৷ ওই ব্যবসায়ী আদালতের বাইরে বিষয়টি মিটিয়ে নিতে রাজি হননি বলেই তিনি বিনোদ ভারারাকে গুলি করে খুন করেন৷ এর পর ওই ট্রাক চালককে গ্রেফতার করে পুলিশ৷ মামলাটিও ধামাচাপা পড়ে যায়৷

তদন্তের মোড় ঘুরিয়ে দিল হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ

এর পর প্রায় তিন বছর কেটে যায়৷ হাজারো মামলার ভিড়ে ওই খুনের ঘটনা ভুলতে বসেছিলেন পুলিশকর্তারাও৷ হঠাৎই একদিন জেলা পুলিশ সুপার আইপিএস অফিসার অজিত সিং শেখাওয়াতের ফোনে অস্ট্রেলিয়া থেকে একটি হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ আসে৷ সেই মেসেজে দাবি করা হয়, বিনোদ ভারারা নামে ওই ব্যবসায়ীকে খুনের ছক কষেছিল তাঁরই খুব কাছের কোনও মানুষ৷ পুলিশ কর্তাকে ওই মেসেজটি পাঠিয়েছিলেন খুন হওয়া ব্যবসায়ীর ভাই প্রমোদ, যিনি অস্ট্রেলিয়ায় থাকেন৷ এই মেসেজ পেয়েই ওই পুলিশকর্তার মনে সন্দেহ দানা বাঁধে৷ ওই মামলা সংক্রান্ত পুরনো ফাইল ঘেঁটে দেখা তাঁর সন্দেহ দৃঢ় হয়৷ ওই পুলিশকর্তার কথায়, আমিও ভেবে দেখলাম, সামান্য দুর্ঘটনার মামলা আদালতের বাইরে না মেটানোয় কেন কেউ একজনকে খুন করে ফেলবে? কারণ বেপরোয়া গাড়ি দুর্ঘটনার শাস্তি জামিনযোগ্য এবং খুব বেশি হলে জরিমানা হবে৷ সেখানে খুনের শাস্তি অনেক বেশি কঠোর৷

আরও পড়ুন: নীচে রূপনারায়ণ, ট্রেন থামিয়ে কোলাঘাটে সেতুর মাথায় যুবক! দাবি শুনে থ পুলিশ

এর পরই খুনে অভিযুক্ত ওই ট্রাক চালককে নতুন করে জেরা শুরু করে পুলিশ৷ জেরায় নিহত ব্যবসায়ীর স্ত্রী নিধি এবং সুমিত নামে দু জনের নাম উঠে আসে৷ নিধি যে জিমে যেতেন, সুমিত সেখানকার ট্রেনার ছিলেন৷ সুমিতের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন নিধি৷ স্ত্রীর এই পরকীয়া সম্পর্ক ধরে ফেলেছিলেন বিনোদ৷ তাঁদের একটি কন্যাসন্তানও ছিল৷ সুমিতের সঙ্গে নিধির সম্পর্ক নিয়েই দম্পতির মধ্যে অশান্তি শুরু হয়৷ শেষ পর্যন্ত প্রেমিকের সঙ্গে মিলে স্বামীকে খুন করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন নিধি৷

দু বারের চেষ্টায় নৃশংস হত্যা

বিনোদকে খুন করতে পঞ্জাবের বাসিন্দা দেব সুনার নামে ওই ট্রাক চালককে ১০ লক্ষ টাকা দেন সুমিত ও নিধি৷ ২০২১ সালের ৫ জানুয়ারি একটি পিক আপ ভ্যান নিয়ে বিনোদের গাড়িতে ধাক্কা মেরে তাঁকে প্রাণে মারার চেষ্টা করেন ওই ট্রাক চালক৷ কিন্তু গুরুতর আহত হলেও প্রাণে বাঁচেন বিনোদ৷ এই পরিকল্পনা ভেস্তে যাওয়ার পর ফের নতুন ছক কষেন সুমিত, নিধি এবং ওই ট্রাক চালক৷ ওই বছরই ডিসেম্বর মাসে বিনোদ ভারারার বাড়িতে এসে তাঁকে গুলি করে খুন করেন ওই ট্রাক চালক৷ এই ঘটনার কয়েকদিন পরই সুমিতের সঙ্গে মানালি ঘুরতে চলে যান নিধি৷ নিজের সন্তানকেও অস্ট্রেলিয়ায় বিনোদের ভাইয়ের কাছে পাঠিয়ে দেন তিনি৷

এই সমস্ত তথ্য হাতে পেয়ে নিধি এবং সুমিতকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে পুলিশ৷ তখনই পুলিশের চাপের মুখে নিজেদের অপরাধ স্বীকার করে নেয় ওই দু জন৷ পুলিশ জানতে পারে, দেব সুনার নামে ওই ট্রাক চালকের জেল হওয়ায় তাঁর পরিবারের সমস্ত খরচ চালাচ্ছিলেন নিধি এবং সুমিত৷ বিনোদের মৃত্যুর পর পাওয়া বিমার টাকা থেকেই এই সমস্ত খরচ জোগাচ্ছিলেন নিধি৷ আরও জানা যায়, স্বামীর হত্যাকাণ্ডের সাক্ষী হিসেবে নিজের দেওয়া বয়ানও পরে প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন নিধি৷ ফলে ওই মামলাটিও দুর্বল হয়ে পড়ে৷ সব তথ্য হাতে পেয়ে নিধি এবং সুমিতকে গ্রেফতার করে পুলিশ৷ তাঁদের আদালতে পেশ করা হয়েছে৷