বিজয় মণ্ডল ও বাবা 

Purba Bardhaman News: চরম অভাবে কেটেছে দিন! কৃষকের ছেলে আজ ইসরোর বিজ্ঞানী, ছবিকেও হার মানাবে তাঁর জীবন

পূর্ব বর্ধমান: মাত্র ২৩ বছর বয়সে ইসরোর বিজ্ঞানী হয়ে এক অনন্য নজির সৃষ্টি করলেন পূর্ব বর্ধমানের প্রত্যন্ত গ্রামের এক গরীব চাষির ছেলে। চাষির ছেলে আজ ইসরোর বিজ্ঞানী।কেতুগ্রামের প্রত্যন্ত গ্রাম শান্তিনগরের ছেলে বিজয় মণ্ডল বর্তমানে ইসরোর বিজ্ঞানী। কয়েকমাস আগেই সে ইসরোর গ্রুপে গেজেটেড অফিসার বিজ্ঞানী হিসাবে যোগদান করেছেন। তবে বিজয়ের জীবনযাত্রাটা খুব সহজ ছিল না। রীতিমতো লড়াই করে আজ গ্রামের ছেলে হয়ে উঠেছে ইসরোর বিজ্ঞানী। বিজয়কে অল্প বয়স থেকে যে ভাবে পরিশ্রম করতে হয়েছে, সেই গল্প শুনলে চোখে জল আসবে সকলের।

বিজয়ের দাদা সুজয় বলেন, “ভাই তখন সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে, বোন সবে স্কুলে যাওয়া শুরু করেছে। দিদির বিয়ে হয়ে গিয়েছিল এবং আমি বিশ্বভারতীতে ভর্তি হয়েছি। মায়ের শরীর খারাপ ছিল এবং চিকিৎসার জন্য টাকা ধার করে জমি বন্ধক দিয়ে মাকে ব্যাঙ্গালোরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তবে এতটাই আর্থিক অবস্থা খারাপ ছিল ব্যাঙ্গালোর থেকে মাকে নিয়ে আসা হয়নি। মাকে শেষ দেখা দেখতে পাইনি আমরা। তারপর থেকেই বাড়ির সব কাজ ভাই একাই সামলাত। ও অনেকে পরিশ্রম করত।সংসার সামলানোর পরে নিজের পড়াশোনার সময় পেত। এমনও দিন গিয়েছে যে, বিজয়কে ধান সিদ্ধও করতে হয়েছে আবার মাঠেও কাজে যেতে হয়েছে।”

২০১৭ সালে কেতুগ্রামের খাটুন্দি বিদ্যালয় থেকে ৯০ শতাংশ নম্বর পেয়ে মাধ্যমিক এবং কাটোয়া ভারতী ভবন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ২০১৯ সালে ৮২ শতাংশ নম্বর পেয়ে পাশ করে বিজয়৷ পরবর্তিতে বিজয় সেই বছরেই জেইই অ্যাডভান্স পরীক্ষায় কোনও কোচিং ছাড়াই পাশ করে৷ তারপর সেখান থেকে ইণ্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অব স্পেস সায়েন্স অব টেকনোলজি থেকে ইলেট্রনিক্স অ্যাণ্ড কমিউনিকেশন বিভাগে পড়াশুনা করার সুযোগ পায়৷ আর সেখান থেকেই কয়েকমাস আগে চাকরি পেয়ে চাষির ছেলে হয়ে ওঠে বিজ্ঞানী। বর্তমানে বিজয় সতীশ ধাওয়ান স্পেস সেন্টার শ্রীহরিকোটা তে কাজ করছে।

আরও পড়ুন: ফের গরমে হাঁসফাঁস! ঠিক কবে থেকে দক্ষিণবঙ্গে ধেয়ে আসবে বৃষ্টি? বর্ষা নিয়ে বড় খবর জানাল IMD

আরও পড়ুন: ৭ দিন কোনও খোঁজ নেই! হঠাৎ মাঝসমুদ্রে… গায়ে কাঁটা দেওয়া ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ১৩ মৎস্যজীবী

বিজয়ের বাবা সন্তোষ কুমার মণ্ডল জানিয়েছেন, “ছেলে বিজ্ঞানী হয়েছে সেটা জেনে খুব ভাল লাগছে। কিন্তু ইসরো যে কী জিনিস আমি এখনও তা জানি না। তবে আমার এই ছেলে অনেক পরিশ্রম করেছে। আজ ওর মা থাকলে তার আনন্দ দেখার মত হত।”

পরিশ্রম করলে যে সাফল্য পাওয়া যায়, তা আবার একবার প্রমাণ করলেন বিজয় মণ্ডল। প্রত্যন্ত গ্রামের চাষির ছেলে আজ ইসরোর বিজ্ঞানী। বিজয়ের এই বিজ্ঞানী হয়ে ওঠার গল্প হার মানাবে সিনেমার কাহিনীকেও। বর্তমানে এই চাষির ছেলের জন্যই গর্বিত গ্রামবাসী থেকে জেলাবাসী সকলেই।

বনোয়ারীলাল চৌধুরী