পুরুলিয়া: প্রযুক্তির উন্নতি হচ্ছে প্রতিনিয়ত কিন্তু মানুষের মধ্যে অন্ধবিশ্বাসের অস্তিত্ব রয়েছে। বিজ্ঞানের এই যুগেও আজও বহু মানুষ অন্ধবিশ্বাসে আচ্ছন্ন হয়ে একের পর এক ‘অসামাজিক’ কাজ করছে। গ্রামেগঞ্জে এমন ঘটনার কথা শোনা যায়, তবে এবার শহরেই ঘটল এমন ঘটনা।
এবার শহর পুরুলিয়াতে ডাইনি অপবাদে এক মহিলাকে হেনস্থার অভিযোগ উঠল। ডাকা হয়েছিল ওঝা, চলেছে ঝাড়ফুঁক। অবশেষে পুরুলিয়ার একটি বিজ্ঞানমনস্ক সংগঠনের হস্তক্ষেপে ওই ওঝাকে নিয়ে যাওয়া হয় থানায়। দিনভর চলে তার কাউন্সিলিং। বেগতিক দেখে অবশেষে মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পান ওই ওঝা। ওই গৃহবধুর চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে।
জানা গিয়েছে , পুরুলিয়া পুর শহরের দু’নম্বর ওয়ার্ডের এক বিধবা মহিলা কয়েকদিন ধরে অসুস্থ। আর সেই অসুস্থতা থেকে অসংলগ্ন কথা বলে যাচ্ছেন। এই অসংলগ্ন কথার মধ্য দিয়েই পাশের বাড়ির এক মহিলা তার ওপর ভর করেছে এমন আজগুবি কথা বলতে থাকেন। আর তারপরেই মোটা টাকার বিনিময়ে ওঝা উপস্থিত হয়। শুরু করেন তার ঝাড়ফুঁক।
তখনই এই ঘটনার খবর পায় বিজ্ঞান মনস্ক সংগঠন ব্রেকথ্রু সায়েন্স সোসাইটি। প্রথমেই সোসাইটির পক্ষ থেকে অসুস্থ মহিলাকে চিকিৎসা করানোর আবেদন জানানো হয়। কিন্তু ওই মহিলার পরিবার চিকিৎসার ব্যাপারে কোনও আগ্রহ দেখায়নি।
সোসাইটির সদস্যরা বোঝানোর চেষ্টা করলেও তাদের কথা শোনা হয়নি। উল্টোদিকে সোসাইটি সদস্যদের সঙ্গে রীতিমত তর্ক হয় ওঝার। সোসাইটির সদস্যদের কথায় কান না দিয়ে তিনি ঝাড়ফুঁক-সহ নানা কার্যকলাপ শুরু করেন। বাধ্য হয়ে ব্রেকথ্রু সায়েন্স সোসাইটির সদস্যরা এই ঘটনা পুরুলিয়া (সদর) মহকুমাশাসক উৎপলকুমার ঘোষকে এবং পুরুলিয়া সদর থানায় জানায়।
এরপর পুরুলিয়া সদর থানার পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে ওঝাকে থানায় নিয়ে আসে। ধারাবাহিকভাবে চলে তার কাউন্সেলিং। এরপরে মুচলেকা দিয়ে ওই ওঝা ছাড়া পায়। তিনি পুলিশকে জানিয়েছেন, আর ডাইনি-ভূত নিয়ে তিনি কোন ওঝগিরি করবেন না। পুলিশ পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে, এরপরে যদি তিনি কোনও ঝাড়ফুঁক করে থাকেন তাহলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা হবে।
এ বিষয়ে বিজ্ঞানমনস্ক সোসাইটির পুরুলিয়া জেলা শাখার সভাপতি শ্রী প্রহ্লাদ মাহাতো বলেন, আধুনিক বিজ্ঞানের যুগে এই ধরনের ঘটনা আমরা মেনে নিতে পারি না। আমরা অতীতেও এই ধরনের ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছি। এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। পাশাপাশি মানুষকে কুসংস্কার মুক্ত মন নিয়ে চলার আবেদন করছি। ওঝা-গুনিন- তান্ত্রিকদের ফাঁদে পা দেবেন না।
বারংবার বিজ্ঞানমনস্ক সংগঠন গুলি ‘ডাইনি’-‘ভূত’-র মত কুসংস্কারের বিরুদ্ধে প্রায় ধারাবাহিক প্রচার চালালেও আজও বহু মানুষ কুসংস্কারে আচ্ছন্ন। আর তারই প্রমাণ মিলল পুরুলিয়া শহরের। টেকনোলজির এই যুগেও মানুষ পিছিয়ে পড়ছে এই সমস্ত কারণে।
শর্মিষ্ঠা ব্যানার্জি