বাজার দর অগ্নিমূল্য

শৌচালয় তৈরিতে দুর্নীতি আটকাতে নিয়ম বদলাল পঞ্চায়েত দফতর! স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে বড় দায়িত্ব রাজ্যের

কলকাতা: বিতর্ক এড়িয়ে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা পঞ্চায়েত স্তরে সঠিকভাবে খরচ করতে রাজ্য পাশে পেতে চাইছে স্বনির্ভর গোষ্ঠী, বিশেষ করে গ্রামীণ মহিলাদের। প্রতিটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীই মহিলা পরিচালিত হওয়ায় এই সুবিধা পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। এতদিন এই প্রকল্পের সমস্ত কাজই গ্রাম পঞ্চায়েত দেখত। তারাই স্থির করে দিত কার বাড়িতে শৌচালয়  হবে।  এমনকি গ্রামে গ্রামে কমউনিটি শৌচালয় তৈরির জন্য স্থান নির্বাচন করা থেকে নির্মাণ- সবটাই গ্রাম পঞ্চায়েতের দায়িত্বে ছিল। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা নয়ছয়-সহ একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন সময় সিএজি রিপোর্টে এই অনিয়মের কথা ও বলা হয়েছে।

বহু ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, টাকা পেয়েছে কিন্তু বাড়িতে শৌচালয়  তৈরি করেনি। কমিউনিটি টয়লেট নিয়েও অভিযোগের শেষ নেই। ফলে স্বচ্ছ ভারত মিশনে বাড়ি বাড়ি শৌচালয় তৈরি করার কাজে পশ্চিমবঙ্গ পিছিয়ে পড়েছে। সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে মুর্শিদাবাদ। এই প্রকল্পের কাজ খাতা-কলমে মাত্র ১৫ শতাংশ হয়েছে। ঝাড়গ্রাম, দক্ষিণ দিনাজপুর, মালদা, শিলিগুড়ি ও পশ্চিম মেদিনীপুরেও একই চিত্র। তবে সব থেকে ভাল কাজ হয়েছে আলিপুরদুয়ার ও পুরুলিয়ায়। এখানে ১০০ শতাংশ গ্রামীণ বাড়িতে শৌচাগার তৈরি হয়েছে। দেখা গিয়েছে, রাজ্যের গ্রামীণ এলাকায় প্রতিটি বাড়িতে শৌচালয় তৈরির হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার ৬০ শতাংশের কিছু বেশি। স্বচ্ছ ভারত মিশনের কাজে পিছিয়ে পড়ে রাজ্যকে বারবার কেন্দ্রের প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে।

পঞ্চায়েতের এই কাজ না করা ও কাজ করার নামে দুর্নীতির অভিযোগ থেকে বেড়িয়ে আসতে রাজ্য পঞ্চায়েত দফতর এবার সরাসরি স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে এই প্রকল্প রূপায়ণের দায়িত্ব দিল। তারা গ্রাম পঞ্চায়েতকে নয়, কাজের রিপোর্ট দেবে সরাসরি বিডিওকে। এই মুহূর্তে পঞ্চায়েত দফতরের অধীনে থাকা ১২ লক্ষ ৫ হাজার ৯৪৬ টি স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে দিয়ে প্রচারের নামে এই প্রকল্প রূপায়নের জন্য সমীক্ষা চালাবে। যাদের বাড়িতে শৌচালয় নেই তাদের তালিকা তৈরি করে প্রশাসনকে দিয়ে তা নির্মাণের ব্যবস্থা করবে। ১৫ অগাস্ট পর্যন্ত এই প্রচারাভিযান চালাবে।

রাজ্যের পঞ্চায়েত দফতরের কর্তাদের কথায়, স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের সাহায্যেই গ্রামীণ এলাকার  ১০০ শতাংশ বাড়িতে শৌচালয় নিশ্চিত করা সম্ভব।  এই গোষ্ঠীগুলির সঙ্গে যুক্ত রয়েছে ১ কোটি ২২ লক্ষ ৭৬৪ জন মহিলা। জলবাহিত রোগ প্রতিরোধে মহিলারাই প্রতিটি বাড়িতে শৌচালয় থাকা গুরুত্ব নিয়ে সঠিক প্রচার করতে পারে। যাদের বাড়ি শৌচালয় নেই তাদের সঠিকভাবে চিহ্নিত করে সরকারকে জানাবে। শৌচালয় তৈরির জন্য সরকারি আর্থিক সাহায্য পাওয়ার ব্যবস্থা করবে।

রাজ্যের পঞ্চায়েত সচিব পি উল্গানাথন ইতিমধ্যেই জেলাশাসকদের চিঠি দিয়ে কীভাবে স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলি কাজ করবে তার রূপরেখা পাঠিয়ে দিয়েছে। তাতে দিনক্ষণও স্থির করে দেওয়া হয়েছে। এই নির্দেশিকা অনুসারে প্রতি স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির  মহিলারা গ্রামে মানুষের মধ্যে শৌচালয়ের প্রয়োজনীয়তা সর্ম্পকে সচেতনতার প্রচার চালাবে। সেই সময়ই চিহ্নিত করবে গ্রামের কোন বাড়িতে শৌচালয় রয়েছে, কার বাড়িতে নেই। না থাকার কারণও জেনে নেবে। এরপরই বিডিওর কাছে তারা  ৮ জুলাইয়ের মধ্যে একটি রিপোর্ট দেবে। যা বিডিও সরকারি বিভিন্ন মাধ্যমে যাচাই করে নেবে।

তালিকার ভিত্তিতে রাজ্য  সরকার টয়লেট তৈরির জন্য সরকারি অনুদানের ছাড়পত্র দেবে। এরপর উপভোক্তাদের ব্লক ভিত্তিক জমায়েত করে শৌচালয়ে কী থাকতে হবে তা বিডিও ও সরকারি আধিকারিকেরা বুঝিয়ে দেবেন। ১৩ আগস্টের মধ্যে টাকা সরাসরি উপভোক্তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে চলে যাবে।