পুজো করা হচ্ছে সাপকে

East Bardhaman News: জ্যান্ত সাপের পুজো করা হল বর্ধমানের এই গ্রামে, বিশেষত্ব জানলে চমকে যাবেন ! 

পূর্ব বর্ধমান : জ্যান্ত কেউটে সাপের পুজো করা হল পূর্ব বর্ধমানের মঙ্গলকোটের পলসোনা গ্রামে। তবে গ্রামবাসীরা সাপকে ‘ সাপ ‘ বলেন না। এই সাপ গ্রামবাসীদের কাছে পরিচিত মা ঝঙ্কেশ্বরী নামেই।পলসোনা গ্রামের প্রায় বাড়ির আশে পাশে, গ্রামের আনাচে কানাচে ঘুরে বেড়ায় বিষধর কেউটে প্রজাতির সাপ। কিন্তু এই সাপ নাকি কাউকে কামড়ায় না। কারণ এই সাপই হল আসলে মা ঝঙ্কেশ্বরী। এদিন মঙ্গলবার পলসোনা গ্রামে মহা সমারোহে এই ঝঙ্কেশ্বরী পুজো অনুষ্ঠিত হয়। জ্যান্ত সাপের পুজো দেখতে ভিড় জমিয়ে ছিলেন দূর দূরান্তের বহু মানুষ। এই বিষয়ে পলসোনা গ্রামের বাসিন্দা মৃণাল কান্তি মন্ডল বলেন , “ঝঙ্কেশ্বরী দেবীকে একদম কেউটে সাপের মত দেখতে। মনসামঙ্গল কাব্য থেকে জানা গিয়েছে, বেহুলা লক্ষিন্দরকে যে দংশন করেছিল , তিনি নাকি আমাদের এখানে আবির্ভূত হয়েছেন। এর বিশেষত্ব মানুষকে এমনি কামড়ায় না।

কিন্তু গায়ে পা দিলে বা বিরক্ত করলে অনেককে দংশন করেছে এরকম জানা গিয়েছে। পূজোর দিন সন্ধ্যেবেলায় গ্রাম ঘুরে আসার পর একটা মাটির কলস মন্দিরের সামনে ভাঙ্গা হয়। এবং ওই ভাঙ্গা মাটির কলসের টুকরো যদি বাড়িতে রেখে দেওয়া হয় তাহলে, সেই বাড়িতে কোনও বিষধর সাপ ঢুকবে না, এমনটাই বিশ্বাস। এই সাপকে আমাদের গ্রামের ছোট থেকে বড় কেউ ভয় করেনা। এই সাপ কামড়ানোর ফলে কেউ মরেছে এরকম দেখা যায়নি। আমার মা, কাকিমাকেও এই সাপে কামড়ে ছিল। কিন্তু বর্তমানে তারা সুস্থভাবে জীবন যাপন করছে।”পলসোনা গ্রামে সারাবছরই সাপ ঘুরে বেড়ায়। কখনও বাড়ির হেঁশেলে ঢুকে পড়ে বিশালাকৃতি কুচকুচে কালো বিষধর কেউটে। আবার কখনও ঢুকে পড়ে গৃহস্থের বাড়ির বিছানার মধ্যেই। গ্রামের মধ্যে হেঁটে বেড়ালেও সাপের দর্শন মিলবে। তবে মা ঝঙ্কেশ্বরী কাউকে কখনও কামড়ায় না।

আরও পড়ুন : কখনও কাঁধে চড়ে ঘুরছে, কখনও আপন মনে করছে খেলা! আদরের রামুকে নিয়েই সময় কাটছে বনকর্মীদের

দীর্ঘ বহু বছর ধরে প্রতিবছর আষাঢ় মাসের কৃষ্ণ প্রতিপদ তিথিতে পুজিত হন মা ঝাঁকলাই। সেরকমই এদিন মঙ্গলবারও জ্যান্ত মা ঝঙ্কেশ্বরী পূজিত হলেন এই গ্রামে। এই প্রসঙ্গে পলসোনা গ্রামের এক বাসিন্দা তথা পুরোহিত মলয় চ্যাটার্জী বলেন, “গ্রামে আমাদের বিছানা, রান্নাঘর সব জায়গায় তিনি বিচরণ করেন। কারও কোনও ক্ষতি হয়নি আজ পর্যন্ত কামড়ানোর ফলে। তবে এই সাপে কামড়ালে আমরা সেটাকে কামড়ানো বলি না, আমরা বলি প্রসাদ করেছেন। সর্পবিদরা বলছে এর বিষ আছে কিন্তু আমরা বিশ্বাস করিনা। এ গরু বাছুর বা অন্য কোনও প্রাণী কে কামড়ায় না। এর খাবার হচ্ছে ব্যাঙ। কিন্তু আমরা ব্যাঙ বলতে পারব না। আমরা বলি নাড়ু। একে আমরা মা মনসা ও বলতে পারব না ঝঙ্কেশ্বরী বলতে হয়।”

আরও পড়ুন : ৬৪ বছরের ফেরিওয়ালার ভ্যানে ওটা কী ঝুলছে? কাণ্ড দেখলে চমকে যাবেন!

তবে শুধু পলসোনা গ্রাম নয়। মঙ্গলকোটের ছোটপোষলা, মুষুরি এবং নিগন। আর ভাতারের বড় পোষলা শিকোত্তর ও মুকুন্দপুর নিয়ে মোট সাতটি গ্রামে এই ঝঙ্কেশ্বরী পুজো হয়। তবে পলসোনা গ্রামের পুজো অন্যতম। গ্রামবাসীদের কথায়, অতীতে দেশ, বিদেশ থেকেও এই গ্রামগুলিতে গবেষক, স্বর্পবিদরা এসেছিলেন। ক্যাম্প করে বেশ কিছুদিন থেকে গবেষণাও চালিয়েছেন।

আরও খবর পড়তে ফলো করুন
https://whatsapp.com/channel/0029VaA776LIN9is56YiLj3F 

তাঁরা এটাও বলেছেন যে এই সাপের বিষ রয়েছে। কিন্তু এই সাপ কামড়ালে কেন কিছু হয়না, তার আজও কেউ কোনও সদুত্তর দিতে পারেনি।

বনোয়ারীলাল চৌধুরী