হাওড়ার নৌকা সাম্রাজ্যে কাজ হারা কয়েকশো কারিগর

Howrah News: নৌকার সাম্রাজ্য শেষ!  অচলাবস্থা পঞ্চানন দিলীপ অমল মণিমোহনদের  

হাওড়া: নৌকার সাম্রাজ্য শেষে অচলাবস্থা পঞ্চানন দিলীপ আমল মনিমোহনদের! হাওড়া জেলার শ্যামপুর ব্লকের রূপনারায়ণের পূর্ব তীরে ডিহি মন্ডল ঘাট গ্রাম ও তার পার্শ্ববর্তী গ্রামে কয়েকশো মানুষ নৌকা তৈরির কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিল । তখন রূপনারায়ণ নদীতে প্রচুর ঢেউ ছিল নাব্যতা বেশি ছিল। প্রচুর মাছ পাওয়া যেত যে কারণে নৌকার চলছিল বেশি । তাই নৌকা তৈরি এবং নৌকার সারানোর কাজ প্রচুর ছিল। তখন বেশি ছোট্ নৌকা চলত। ধীরে ধীরে নদীর নাভ্যতা কম, নদীর জল থেকে ক্রমশ ফিকে হতে থাকে প্রবল ঢেউ। ঢেউ এর সঙ্গে সঙ্গে মাঝিদের মাথার উপর থেকে সরে যেতে থাকে নদীর আশীর্বাদ। এর ফলে নদীতে জাতীয় নৌকা বেড়ানো কম হয়। সারাদিনে কয়েকশ নৌকা চলতেছে সময়। বর্তমানে নদীর বুকে গুটি কয়েক শালতি নৌকা ভেসে বেড়ায়। সে সময় নৌকা কারিগড়দের হাতে প্রচুর কাজ ছিল। কাজের বাজার তিন দশক আগে পর্যন্ত বেশ ভালই ছিল।

আরও পড়ুন: অপেক্ষার অবসান, প্রাচীন ছোট নৌকা পৌঁছল গন্তব্যে

নদী ঘেরা বাংলায় একসময় পরিবহণের প্রধান মাধ্যম‌ই ছিল নৌকা। ফলে যথেষ্ট চাহিদা ছিল নৌ কারিগরদের। নতুন কাঠ দিয়ে নতুন নৌকা তৈরির পাশাপাশি পুরনো নৌকা মেরামত করেই আয় করতেন তাঁরা। কিন্তু নৌকা চালিয়ে রোজগারের উৎস ক্রমশ কমে যেতে থাকায় শ্যামপুর ব্লকের রূপনারায়ণের পূর্ব তীরে ডিহিমন্ডল ঘাট ও তৎসংলগ্ন গ্রামগুলোর মানুষ ধীরে ধীরে নৌকা কেন্দ্রিক জীবিকা থেকে সরে আসতে শুরু করেছে। আর তার জেরেই চাহিদা কমেছে নৌকার। ফলে কাজ নেই নৌকার কারিগরদের। বাংলার নদ-নদীতে ছোট্ নৌকা কতদিন চলেছিল তার কোনও ঐতিহাসিক উল্লেখ নেই। তবে মনে করা হচ্ছে কয়েক শত বছর ধরে ছোট্ নৌকার সঙ্গে পরিচিত এখনকার মানুষ। তাই ছোট্ নৌকা তৈরি করা পঞ্চানন মন্ডল দিলীপ মন্ডল এর মত মানুষের রক্তে রয়েছে নৌকার কাজ। পরিবারে একটি ঐতিহ্যগত দক্ষতা এবং প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলে আসছে ।

আরও পড়ুন: ভাড়ার এক চিলতে ঘরে ঢোকে না আলো, হাওড়ার ঘিঞ্জি বস্তিতে অভাবী দিন গুজরান মুঘল ‘বেগম’ ও বংশধরের

একটি ছোট্ নৌকা বানাতে পাঁচ জনের প্রায় ৫০ দিন লেগে যেত, শনাক্ত করা এবং কাঠ আনা থেকে শুরু করে নৌকা শেষ করা পর্যন্ত। একসময় শাল ও সেগুন দিয়ে ছোট নৌকা তৈরি হতো কিন্তু পরবর্তীকালে খিরিশ, অর্জুন ও বাবলা গাছের কাঠ দিয়ে তৈরি করতে হত। অ্যান্থোপলিজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার ভিজিটিং ফেলো স্বরূপ ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, এক সময় হাওড়া রূপনারায়ণ নদীতে মাছ শিকারি মাঝিদের কাজের উপযোগী ছিল এই নৌকা। ভি আকৃতির এই নৌকায় করে অনেক বেশি মাছ সংগ্রহ করার উপযুক্ত ছিল। বড় বড় ঢেউ কেটে এই নৌকা নদী থেকে সরাসরি সমুদ্রে পৌঁছানো যেত। দারুন পছন্দের ও ভরসার ছিল মাঝি-মল্লাদের ছোট্ নৌকা। নদীর চরবৃদ্ধির ফলে মাছ বোঝাই নৌকা ফেরার পথে নদীর চড়ে আটকে বিপদে পড়ত মাঝিরা। ফলে ধীরে ধীরে এই ছোট নৌকার চল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। আর তাই দক্ষ নৌকা কারিগরদেরও সংসার চালাতে বাছতে হচ্ছে অন্য পেশা। কেউ ইঁটভাটায় কাজ করে সংসার চালাচ্ছে,কেউ বা অন্য কোনও পেশার মাধ্যমে বেছে নিচ্ছেন রুজি রোজগারের পথ ।
আরও খবর পড়তে ফলো করুন
https://whatsapp.com/channel/0029VaA776LIN9is56YiLj3F
এ প্রসঙ্গে প্রবীণ নৌকা কারিগর পঞ্চানন মন্ডল জানান, নৌকা কারিগড়দের হাতে কাজ নেই। বাধ্য হয়ে অন্যান্য কাজে যুক্ত হয়েছে।নৌকা বিশেষজ্ঞ স্বরূপ ভট্টাচার্য জানান, নদীর চরিত্র বদলের ফলেই নদীতে নৌকা চলাচল কম হয়েছে। সেই দিক থেকে আগের মত ডিহিমন্ডল ঘাট এলাকায় কয়েকশো নৌকা কারিগরদের হাতে কাজ পাওয়া অসম্ভব প্রায়।

রাকেশ মাইতি