পূর্ব বর্ধমান: এ যেন হার না মানার লড়াই। পূর্ব বর্ধমানের গীতা দাসের গল্প শুনলে অবাক হবেন। গীতা দেবীর বাড়ি পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়া শহরের কলেজ পাড়ায় । বর্তমানে কাগজের ঠোঙা বানানোর কাজ নিয়ে এগিয়ে চলেছেন মাঝ বয়সী এই মহিলা। এই ঠোঙা বানানোর কাজ তিনি শুরু করেন তিন দশক আগে। দীর্ঘদিন যাবৎ এই কাজ করছেন গীতা দেবী। অভাব অনটনকে সঙ্গে করে বিবাহিত জীবন শুরু হয় তাঁর। সংসারের হাল ধরতে নিজেই শুরু করেন এই ব্যবসা। সেই ঠোঙার ব্যবসাকেই নিজের জীবন বলেন তিনি।
গীতা দেবীর কথায়, পাড়ার এক কাকিমার কাছ থেকে তিনি এই কাজ শেখেন। প্রাথমিক পর্যায়ে প্রতি কেজিতে চার থেকে আট আনা করে দাম পেতেন তিনি। পরবর্তীতে নিজেই শুরু করেন ঠোঠা বানানো। সাইকেলে করে বাড়ি-বাড়ি ঘুরে সংগ্রহ করতেন কাগজ। সেই কাগজের ঠোঙা বানিয়েই সংসারের হাল ফিরেছে তাঁর। সাইকেলের পরিবর্তে এখন স্কুটিতে করে খবরের কাগজ কিনতে যান গীতা দেবী। কাগজের ঠোঠা তৈরির ব্যবসা করে বর্তমানে তাঁর আর্থিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে । তবে আজ থেকে বহু বছর আগে যখন তিনি শুরু করেছিলেন তখন পরিস্থিতি ছিল সম্পূর্ণ আলাদা ।
গীতা দেবী বলেন , “সবই পরিশ্রমের ফল। চেষ্টা করলে সাফল্য আসবেই। থেমে থাকলে চলবে না।” গীতা দেবীর জীবনের প্রথম শুরুটা বেড়ার ঘর থেকে হলেও, বর্তমানে মাথার ওপর পাকা ছাদ নির্মাণ করতে পেরেছেন তিনি। বাড়িতে বসিয়েছেন এয়ার কন্ডিশনার যন্ত্র , বাড়িতে রয়েছে দুটো টিভি , তিনি নিজে স্কুটিও কিনেছেন । সব মিলিয়ে তাঁর সংসারে ভালরকম উন্নতি হয়েছে আর সেটা সম্ভব হয়েছে এই ঠোঙার ব্যবসা করেই। গীতা দেবী জানান, বর্তমানে এই কাগজের ঠোঙার চাহিদা আরও বেড়েছে। নিয়মিত সন্ধ্যে হলেই স্কুটি নিয়ে বেরিয়ে পড়েন দোকানে দোকানে ঠোঙা দিতে।
পূর্ব বর্ধমানের পরিশ্রমী মহিলা গীতা দাস। প্রথম থেকে কষ্ট করে, লড়াই করে আজ তিনি সফল । পুরানো দিনের কথা মনে পড়লে গীতা দেবীর চোখ ভিজলেও , তিনি সর্বদা হাসি-খুশি থাকেন । অনেক সময় তিনি দরিদ্র, দুঃস্থ মানুষদেরও সাহায্য করেন । সবমিলিয়ে আজ নিজের চেষ্টায় সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছাতে পেরেছেন পূর্ব বর্ধমানের গীতা দাস ।
বনোয়ারীলাল চৌধুরী