ধ্বংসস্তূপের মধ্যে থেকেই উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে মায়া এবং মারফি

Wayanad landslide: ওয়ানাডে আশার আলো মায়া এবং মারফি, কারণ জানলে অবাক হবেন!

ওয়ানাড: ওয়ানাডে ভূমিধসে তছনছ হয়ে গেছে গোটা এলাকা। ঈশ্বরের দেশে এই বিপর্যয়ে এখনও পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন বহু মানুষ। ইতিমধ্যেই ভারতীয় সেনার ২ হাজার জন সেনা উদ্ধারকাজে নেমেছেন। মানুষ ছাড়াও এই কাজে নেমেছে মায়া এবং মারফি। তাঁরা অবশ্য মানুষ নয়। তবে চারপেয়ে এই দুই সারমেয় উদ্ধারকারীদের পরম বন্ধু হয়ে দাঁড়িয়েছে দেহ উদ্ধারের ক্ষেত্রে।
মানুষের দেহ এবং দেহাংশ উদ্ধারের ক্ষেত্রে এই দুই সারমেয়ের জুড়ি মেলা ভার। এরনাকুলাম পুলিশের অন্তর্গত এই দুই সারমেয় বেলজিয়ান ম্যালনয়েস প্রজাতির। তাঁদের অনুশীলনই করানো হয়েছে যাতে তাঁরা পচে যাওয়া দেহ উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। এখনও পর্যন্ত তাঁরা বহু দেহই খুঁজে বের করেছে। যদিও এখনও পর্যন্ত কোনও জীবিত ব্যক্তিকে ওই এলাকা থেকে খুঁজে পাওয়া যায় নি।
২রা অগাস্ট থেকে মায়া এবং মারফি উদ্ধারকাজ চালাতে শুরু করে। গত ৩০ জুলাই, ওয়ানাডের মুন্নাকাই, চুরালমালা, এবং ভেলারিমালা মূলত এই তিন এলাকাই ভূমি ধসে সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই সমস্ত জায়গায় বহু দেহ চাপা পড়ে আটকে যায়। এই বিশাল এলাকা জুড়ে অনেক বাড়ি বা মাটির নিচে চাপা পড়ে থাকে দেহ। এলাকা বিশাল হওয়ায় উদ্ধারকারীদের পক্ষে কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়ে সঠিক জায়গায় খুঁড়ে সন্ধান চালানো। ঠিক সেই সময়েই কাজে আসে এই সারমেয়দের সাহায্য।
মায়ার ট্রেনার প্রভাত জানান, “মায়া ঠিক জায়গা গুলো খুঁজে বের করে দিয়েছে আমাদের। আমরা সেই মতন জায়গায় উপস্থিত হয়ে অপারেশন শুরু করি। পয়লা অগাস্ট আমরা ১৫ টি দেহ পাই। পরের দিন আমরা আরও ছয়টি দেহ পাই। তাঁদের মধ্যে একজনের শুধু থাই-এর কিছু অংশ পেয়েছিলাম।”
প্রথম দু দিনেই মায়া এবং মারফি শুধু ঘ্রাণেন্দ্রিয় দিয়েই ২৩টি দেহ খুঁজে বের করে বলেও জানান উদ্ধারকারীরা। যখনই কুকুর দুটি জায়গা দেখিয়ে দিয়েছে সেখানেই খোঁড়া হয়েছে। ফলে দেহ উদ্ধার অনেক সহজ হয়েছে বলেও জানান তাঁরা।

আরও পড়ুন: কেরলে ভয়ঙ্কর রোড অ্যাক্সিডেন্ট, মৃত বিধায়কের ছেলে
তাঁদেরই একজন বলেন, “প্রথম দিন আমাদের কাছে জেসিবি কিংবা খোঁড়ার কোনও যন্ত্র ছিল না। এই খোঁজার অপারেশন আমাদের সম্পূর্ণ শাবল, বেলচা ইত্যাদি দিয়েই করতে হয়েছে। সেক্ষেত্রে এই দুই সারমেয়-এর নিখুঁত জায়গা আমাদের পরিশ্রম ব্যর্থ হতে দেয় নি। এরপর যখন জেসিবি চলে আসে আমাদের কাজ অনেক সহজ হয়ে যায়।”
কেরল পুলিশের তিনটি কুকুর ছাড়াও ভারতীয় সেনাবাহিনীর তিনটি স্নিফার ডগকেও এই অপারেশনে পাঠানো হয়েছে। এই ধরনের কুকুর মূলত কোনও বিস্ফোরক, মাদক দ্রব্য, বন্যপ্রাণী, বিদেশি মুদ্রা, কিংবা রক্ত খুঁজে বের করতে সাহায্য করে।
মায়া এবং মারফি কেরল পুলিশের সঙ্গে প্রায় চার বছর ধরে সমানে কাজ করে চলেছে। এর আগেও বহু উদ্ধারকাজে তাঁরা সমান পারদর্শিতায় নিজেদের দক্ষতা দেখিয়েছে। এই প্রসঙ্গে মায়ার ট্রেনার প্রভাত বলেন, “মায়া মূলত ২ ফুট নিচ থেকে দেহ খুঁজে বের করার জন্য পারদর্শী কিন্তু পেটিমেন্ডিতে সে ১০ ফিট নিচ থেকেও দেহ উদ্ধার করেছে।”
ওয়ানাডে এই ভয়াবহ ভুমিধসে এখনও পর্যন্ত প্রায় ২৫০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন প্রায় ২০০ জন। চালিয়ার নদীর ধারে পাওয়া গিয়েছে প্রায় ৫০টি ক্ষতবিক্ষত দেহ। ইতিমধ্যেই জেলা জুড়ে ৯১টি ত্রাণশিবির খুলেছে প্রশাসন।