চন্ডিপুর: পটচিত্রে নানা ধরনের কাহিনি উঠে এলেও এই প্রথম পটচিত্রের মাধ্যমে মহাভারতের কাহিনি তুলে ধরলেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পটুয়া। পটুয়া আবেদ চিত্রকর এবং তাঁর স্ত্রী সায়রা চিত্রকর মহাভারতের কাহিনি পটচিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরলেন। চিত্রকর দম্পতির হাতের জাদুতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে মহাভারতের কাহিনি।
শুধু রাজ্যে নয় দেশে এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও পটচিত্রের জন্য পুরস্কৃত হয়েছেন এই চিত্রকর দম্পতি। শুধু পটচিত্র আঁকা নয়, সঙ্গে সঙ্গে গান গেয়ে মহাভারতের কাহিনি বর্ণনা করেছেন তাঁরা।
পটচিত্র একটি অতি প্রাচীন লোকশিল্প। প্রাচীনকালে কাপড় বা কাগজের উপর দেবদেবীর প্রচলিত কাহিনির ছবি এঁকে গ্রামে গ্রামে ঘুরে গান গেয়ে পট দেখাতেন কিছু মানুষ। এটাই তাঁদের একমাত্র জীবিকা, লোকে তাঁদের বলতেন ‘পটুয়া’। তাঁরা ‘পটিদার’ নামেও অনেকাংশে পরিচিত ছিলেন।
তাঁদের বেশির ভাগের পদবি সাধারণত ‘চিত্রকর’। মহাভারতের ১৮টি পর্ব ৫৬৮ ফুট পটচিত্রে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। মহাভারতের কাহিনি পটচিত্রে ফুটিয়ে তুলতে সময় লেগেছে ১ বছর ৩ মাস। মহাভারতের আদিপর্ব থেকে দ্রৌপদীর স্বয়ম্বর সভা, কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ, ভীষ্মের শরশয্যা থেকে স্বর্গ আরোহণের পর্ব একের পর এক তুলে ধরা হয়েছে পটচিত্রের মাধ্যমে।
পটচিত্র নিয়ে বিভিন্ন গবেষক দল বার বার এসেছে এই পটচিত্রের গ্রামে। শুধু পটচিত্র অঙ্কন নয়, তার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন সামাজিক সর্তকতামূলক বার্তা দেওয়া ও সচেতনতার বার্তা দেওয়ার জন্য বার বার প্রয়াসী হয়েছেন এই পটচিত্রকাররা। মহাভারতের বিভিন্ন চরিত্রের কাহিনিগুলো ফুটিয়ে তুলেছেন পটচিত্রের তুলির টানে। ধর্মীয় বেড়াজাল ভেঙে শিল্পভাবনা ও ঐতিহ্য মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে পটচিত্রের আঙ্গিকে। এ বিষয়ে শিল্পী আবেদ চিত্রকর জানিয়েছেন, সব সময় ব্যতিক্রমী কিছু কাজ করার নেশা চেপে বসে। সেই নেশা থেকে বৃহত্তম পটচিত্র আঁকার জেদ জন্মায়। সেই জেদ থেকেই মহাভারতের কাহিনি পটচিত্রে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।’
মহাভারত ও রামায়ণ উপখ্যান থেকে চরিত্র খুঁজে নিয়ে উজ্জ্বল রঙে আঁকা হত। পটে আঁকা হত দুর্গাপট ও লক্ষ্মীপট। দিন দিন এই পটচিত্র শিল্প যেন হারিয়ে যাচ্ছে। পটচিত্র নিয়ে বেঁচে থাকতে শিল্পীরা তাঁদের আঁকার মাধ্যম বদলে বর্তমানে মাটির জিনিসপত্র এমনকি পোশাক, আচার থেকে দৈনন্দিন ব্যবহারের জিনিসপত্রে পটচিত্রের শিল্পকলা ফুটিয়ে তুলছেন। এবার সেই পটশিল্পীরা সর্ববৃহৎ পটচিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন মহাভারতের সম্পূর্ণ কাহিনি। শিল্পী জানান, এই পটচিত্র দেখতে সম্প্রতি বিদেশ থেকে গবেষকের দল আসবেন।
সৈকত শী