বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে নিরপেক্ষ হওয়ার দাবি৷

Muhammad Yunus: শক্ত হাতে রাশ ধরতে পারবেন বাংলাদেশের? নোবেলজয়ী ইউনুসের সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ

কলকাতা: অরাজকতা, বিশৃঙ্খলায় লাগাম টেনে কি স্থিরতা ফিরবে বাংলাদেশে? শক্ত হাতে কার্যকর করা যাবে আইনের শাসন? এই সমস্ত প্রত্যাশা পূরণে আপাতত যার দিকে গোটা বাংলাদেশ সহ বিশ্বের নজর রয়েছে, তিনি মহম্মদ ইউনুস৷ নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদকেই প্রথম থেকে নতুন সরকারের প্রধান হিসেবে দাবি করে এসেছেন বাংলাদেশের আন্দোলনরত ছাত্ররা৷ মঙ্গলবার রাতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মহম্মদ সাহাবুদ্দিন জানিয়ে দিয়েছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান করা হচ্ছে মহম্মদ ইউনুসকেই৷ বাংলাদেশে গ্রামীণ ব্যাঙ্কের প্রতিষ্ঠাতা নিজেও সেই প্রস্তাবে রাজি হয়েছেন৷ প্রশ্ন হল, শক্ত হাতে কি বাংলাদেশকে সঠিক পথে চালিত করতে পারবেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ?

দারিদ্র দূরীকরণে অবদান রাখার জন্যই ২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছিলেন মহম্মদ ইউনুস৷ কিন্তু নোবেল জয়ের আগে পরে কখনওই সেভাবে প্রত্যক্ষ রাজনীতির সঙ্গে জড়াননি তিনি৷ যদিও শেখ হাসিনা এবং তাঁর সরকারের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক একেবারেই ভাল ছিল না৷ বরং, হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে নোবেলজয়ী এই অর্থনীতিবিদকে আইনি হেনস্থারও অভিযোগ উঠেছে৷ ইউনুসের অন্যতম ইতিবাচক দিক হল, পশ্চিমী দুনিয়ার শক্তিধর দেশগুলির মধ্যে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা অনেকটাই বেশি৷

আরও পড়ুন: চাকরই তিনশো কোটির মালিক, থাকেন আমেরিকায়! হাসিনার নিজের সম্পত্তির পরিমাণ কত?

তবে বাংলাদেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার কাজটা ইউনুসের পক্ষে মোটেই সহজ হবে না৷ গত কয়েক সপ্তাহে বাংলাদেশে অন্তত তিনশো মানুষের মৃত্যু হয়েছে৷ মৃতদের মধ্যে প্রচুর সংখ্যক পুলিশকর্মী এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যও রয়েছেন৷ এই মুহূর্তে বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনীর সদস্যরাও কর্মবিরতির ডাক দিয়েছেন৷ দেশজুড়ে চলছে লুঠ, খুন, গণহত্যার মতো ঘটনা৷ তার উপর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থাও খুব একটা স্বস্তিদায়ক জায়গায় নেই৷ হাসিনা সরকারের আমলে পোশাক রফতানি করে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কিছুটা গতি এলেও মাঝেমধ্যেই তা থমকে গিয়েছে৷ ফলে বাংলাদেশকে আর্থিক সঙ্কট থেকে বের করে আনতে আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডারকে পদক্ষেপ করতে হয়েছে৷

হাসিনা সরকারের আমলে অবশ্য আইনি ঝামেলাতেই জর্জরিত থাকতে হয়েছে ইউনুসকে৷ গ্রামীণ ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধে কর ফাঁকির অভিযোগ ওঠার পর থেকেই ইউনুসের বিরুদ্ধে তৎপরতা বাড়ায় হাসিনা সরকার৷ এই মুহূর্তে বাংলাদেশে ইউনুস এবং তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে প্রায় দুশো মামলা চলছে৷ আর্থিক তছরুপ, ঘুষ নেওয়ার মতো গুরুতর অভিযোগ তোলা হয়েছে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদের বিরুদ্ধে৷ ইউনুসের সমর্থকদের অভিযোগ, ইউনুস ভবিষ্যতে বাংলাদেশের মসনদে বসতে পারেন, এই আশঙ্কা থেকেই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে ইউনুসের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ এনে মামলা করেছে হাসিনা সরকার৷ ইউনুসকে হেনস্থা না করার জন্য আন্তর্জাতিক মহল থেকেও চাপ বাড়ানো হয় বাংলাদেশ সরকারের উপরে৷

৮৪ বছর বয়সি ইউনুস বাংলাদেশে গ্রামীণ ব্যাঙ্কের প্রতিষ্ঠাতা৷ সমাজের প্রান্তিক শ্রেণির মানুষকে ছোট ছোট ঋণ দিয়ে তাঁদের অর্থনৈতিক উন্নতিই ছিল ইউনুস এবং তাঁর সংস্থার মূল লক্ষ্য৷ মূলত দরিদ্র মহিলাদেরই ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে জোর দিত তাঁর সংস্থা৷ এই উদ্যোগের জন্যই নোবেল শান্তি পুরস্কার পান তিনি৷ ২০০৭ সালে বাংলাদেশে সামরিক শাসন জারি হওয়ার পর ইউনুস নিজের রাজনৈতিক দল করার কথা ভেবেও পরে অবশ্য পিছিয়ে আসেন৷ ফলে, রাজনীতির জগতে তিনি আনকোড়াই৷

এ বছরের শুরুতেই একটি সাক্ষাৎকারে ইউনুস বলেছিলেন, রাজনীতিতে আমি একেবারেই স্বচ্ছন্দ বোধ করি না৷ বিশ্বের অর্থনৈতিক শক্তিধর দেশগুলির মধ্যে ইউনুসের গ্রহণযোগ্যতা যেমন বেশি, সেরকমই বিশ্বের প্রথমসারির অনেক শিল্পপতির সঙ্গেও তাঁর ব্যক্তিগত সুসম্পর্ক রয়েছে৷ গোটা বিশ্বে তাঁর সমর্থক এবং প্রশংসকের সংখ্যাও কম নয়৷ ফলে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নিজের ভাবমূর্তিকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশকে তিনি কতটা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন, সেটাই দেখার৷ তবে একই সঙ্গে তাঁকে দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির জটিল অঙ্কের সঙ্গেও তাল মিলিয়ে চলতে হবে৷ নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ এই জোড়া চ্যালেঞ্জ কীভাবে সামলান, সেটাই দেখার৷