মা হওয়ার সঠিক সময় কত?

Pregnancy Care Tips: প্রথমবার মা হওয়ার সঠিক বয়স কত? বেশি বয়সে মা হলে কী হতে পারে? জানুন ডাক্তারের জরুরিকথা

কলকাতা: আজকালকার দিনে বেশিরভাগ মহিলাই কেরিয়ারের পিছনে দৌড়চ্ছেন। ফলে কেরিয়ার সামলে বিয়ে করতেও তাঁদের দেরি হয়ে যাচ্ছে। আর সন্তানধারণেও আরও খানিকটা দেরি হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে জটিলতা এড়ানোর জন্য মহিলারা নিজেদের ডিম্বাণু সংরক্ষণ করতে পারেন।

আজকের প্রতিবেদনে গর্ভাবস্থায় যত্ন, প্রেগন্যান্সির প্রথম পর্ব এবং গর্ভপাতের অধিকার সম্পর্কে আলোচনা করছেন আইএলএস হসপিটালসের ডিরেক্টর এবং কনসালট্যান্ট সার্জন (গাইনিকোলজি এবং ওবস্টেট্রিক্স)

ডা. অরুণা তাঁতিয়া
ডা. অরুণা তাঁতিয়া

কিন্তু প্রথমবার মা হওয়ার সঠিক বয়স কত হওয়া উচিত? ডা. অরুণা তাঁতিয়ার মতে, ২২ থেকে ২৬ বছর বয়সই হল প্রথমবার মা হওয়ার সঠিক বয়স। আসলে এই সময় গর্ভাবস্থার চাহিদার সঙ্গে সঠিক ভাবে মানিয়ে নিতে পারে মেয়েদের শরীর। আসলে ৩০ বছর বয়স পার করে গেলে স্বাভাবিক ভাবে সন্তানধারণ করতে সমস্যা হয় মেয়েদের।

আরও পড়ুন: হাতে ১ ঘণ্টা, তোলপাড় বৃষ্টির পূর্বাভাস কলকাতায়! বাজের সতর্কতা জারি ৩ জেলায়

কারণ এই সময় মেয়েদের পিসিওডি অথবা এন্ডোমেট্রিওসিস অথবা আর্লি অনসেট ডায়াবেটিসের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই কেউ যদি মা হতে চান, তাহলে তাঁর সবার আগে একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়া উচিত। যাতে থাইরয়েড, ডায়াবেটিস, পিসিওডি অথবা থ্যালাসেমিয়া, হেপাটাইটিস এ, বি, সি ভাইরাস পরীক্ষা করা যায়। শুধু তা-ই নয়, শুধু হবু মায়ের পাশাপাশি হবু বাবারও পরীক্ষা করানো উচিত।

 

সব কিছু স্বাভাবিক থাকলে হবু মা-কে প্রতিদিন ফলিক অ্যাসিড খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হবে। একবার সন্তানধারণ করলে গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে নিজের খেয়ার রাখা অত্যন্ত জরুরি। আসলে গর্ভাবস্থার গোটা সময়টাকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়। যথা – ১২ সপ্তাহ পর্যন্ত সময়টাকে প্রথম ট্রাইমেস্টার বলা হয়। আবার ১২ থেকে ২৪ সপ্তাহ পর্যন্ত সময়কালকে দ্বিতীয় ট্রাইমেস্টার বলা হয়। আর ২৪-৩৬ সপ্তাহ পর্যন্ত সময়টাকে তৃতীয় ট্রাইমেস্টার বলা হয়।

আরও পড়ুন: বুড়িয়ে যাচ্ছে চামড়া? রাতে শোওয়ার আগে ‘এই’ এক কাজে চকচক করবে মুখ! রইল গোপন টিপস

প্রথম ট্রাইমেস্টার: ১২ সপ্তাহ পর্যন্ত সময়কাল। এই সময় গর্ভাবস্থা কিন্তু স্থিতিশীল থাকে না। গা-বমি ভাব কাটানোর জন্য বারবার অল্প অল্প করে খেতে হবে। সেই সঙ্গে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া আবশ্যক। যদি আগে ডায়াবেটিস অথবা উচ্চ রক্তচাপ ধরা পড়ে, তাহলে ডাক্তারের পরামর্শে গর্ভাবস্থা চলাকালীন ডায়াবেটিস অথবা উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ খেয়ে যেতে হবে।

প্রথম ট্রাইমেস্টারে কী কী এড়িয়ে চলা ভাল?

১. হাই হিলস
২. ওজন বা ভারি জিনিস না তোলা
৩. ঝাঁকুনি
৪. পেঁপে এবং আনারসের মতো খাবার
৫. যৌনমিলন
৬. আজিনামোতো
৭. ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনও ওষুধ

প্রথম ট্রাইমেস্টারের উপসর্গ:

১. বারবার প্রস্রাব পাওয়া
২. গা-বমি
৩. বমি
৪. পেট ব্যথা

আসলে এই সময়টায় চিকিৎসকেরা খুবই অল্প ওষুধ দিয়ে থাকেন। এই সময় দেওয়া ওষুধগুলির মধ্যে অন্যতম হল ফলিক অ্যাসিড, বমি প্রতিরোধ করার ওষুধ এবং স্টুল সফনার। গর্ভাবস্থায় এই সময়টায় যদি মাইল্ড স্পটিং অথবা পেট ব্যথা হয়, তাহলে হয়তো বিশেষ সাপোর্টিভ মেডিসিন দেওয়া হয়। এর পাশাপাশি ডেটিং আল্ট্রাসোনোগ্রাফি এবং অ্যানিউপ্লয়েডির মতো নির্দিষ্ট স্ক্রিনিং টেস্টের পরামর্শ দেওয়া হয় প্রথম ট্রাইমেস্টারের সময়। তবে ১২ সপ্তাহ পর্যন্ত পেটে কোনওরকম বাম্প দেখা যাবে না।

আরও পড়ুন: খেতে ভাল লাগুক বা না লাগুক, কলা গাছের ‘মজ্জা’ এই মারণরোগ থেকে রেহাই দেবেই! চমকে যাবেন জানলে

দ্বিতীয় ট্রাইমেস্টার:

এই সময়ে পেলভিস থেকে জরায়ু বাড়তে থাকে। আর ২৪ সপ্তাহের মধ্যে তা আম্বিলিকাস পর্যন্ত পৌঁছে যায়। এরপর ধীরে ধীরে ছোট্ট বাম্প দেখা যেতে থাকে। মোটামুটি ৫ মাস হলে বাচ্চার নড়াচড়া অনুভূত হবে অনেকটা ভাইব্রেশনের মতো। আর এটা প্রায় প্রতিনিয়তই চলতে থাকবে। আর গা-বমি ভাবটাও কমতে থাকবে। ফলে এই সময়টায় হবু মা ভাল করে খাবার উপভোগ করতে পারেন। আসলে সমস্ত লেভেল ঠিক রাখার জন্য আয়রন এবং ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

গর্ভাবস্থার সময় যত এগোতে থাকে, হিমোগ্লোবিনের মাত্রা নামতে থাকে। তাই এই সময় সবুজ শাকসবজি, হাই প্রোটিন ডায়েট এবং হাই ক্যালসিয়াম ডায়েটের অভ্যাস করতে হবে। সুগার, হিমোগ্লোবিন এবং থাইরয়েড বারবার পরীক্ষা করাতে হবে। আসলে পরিবারের কারও ডায়াবেটিস অথবা উচ্চ রক্তচাপ থাকলেও হবু মায়ের কিন্তু গর্ভাবস্থায় হাই সুগার হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

তাই নিজের ডায়েটের দিকে নজর দিতে হবে এবং এক্সারসাইজ করতে হবে। এর পাশাপাশি এই সময় মাতৃত্বকে স্বাগত জানানোর জন্য প্রস্তুতি নেয় স্তনও। ফলে অল্পস্বল্প জলের মতো ডিসচার্জ বার হতে থাকে। তাই প্রতিদিন সাবান এবং জল দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। বাচ্চাদের মধ্যে কোনও অস্বাভাবিকতা আছে কি না, তা বোঝার জন্য ১৮-২০ সপ্তাহে অ্যানোম্যালি স্ক্যান করাতে হবে।

তৃতীয় ট্রাইমেস্টার:

এই সময় দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পেতে থাকে গর্ভস্থ শিশু। ফলে ৩৬ সপ্তাহ পর্যন্ত মাসে অন্তত ২ বার চেক-আপ করাতে হয়। এরপর থেকে সপ্তাহে একবার করে চেক-আপ করাতে যাওয়া উচিত। এই সময়ে সন্তানের নড়াচড়া ভাল ভাবে টের পান মায়েরা। ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার, আয়রন সমৃদ্ধ খাবার নিয়মিত খেতে হবে। পা ফোলার সমস্যা এড়িয়ে চলতে বাম পাশে কাত হয়ে শুতে হবে। এর পাশাপাশি টিটেনাস সংক্রমণ প্রতিরোধ করার জন্য গর্ভাবস্থা চলাকালীন টিটেনাস টক্সয়েডের ২টি ডোজ নেওয়া আবশ্যক। ১ মাসের ব্যবধানে এই দুটি ডোজ দেওয়া হয়।

প্রসবের সময় আসন্ন হতে শুরু করলে হবু মায়ের শরীরে ব্যাপক পরিবর্তন দেখা দিতে শুরু করে। স্তনের আকার বৃদ্ধি পায়, রক্তের ঘনত্ব বাড়ে, যার জেরে হিমোগ্লোবিনও নামতে থাকে। আর গাঁটগুলিও শিথিল হতে থাকে। হৃদযন্ত্রও বৃদ্ধি পায়। প্রসব হয়ে যাওয়ার পরেই এই সমস্ত শারীরিক পরিবর্তন একেবারেই স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

প্রসবের সময় আসন্ন, সেটা বোঝা যাবে কীভাবে?

১. পেটে এবং পিঠে ব্যথা
২. ঘন ঘন ব্যবধানে সঙ্কোচন
৩. রক্তের পাতলা ডেলা জরায়ুমুখে আটকে থাকে, তা প্রসারণের সময় বেরিয়ে আসে।
৪. কখনও কখনও শীঘ্রই ওয়াটার ব্রেক হয়। সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে।
৫. হাসপাতালে যাওয়ার আগে ভারি খাবার খাওয়া চলবে না।
৬. দুটো আলাদা আলাদা ব্যাগ প্রস্তুত রাখতে হবে। একটা মায়ের জন্য আর অন্যটা বাচ্চার জন্য।
৭. আগে থেকেই কিনে রাখতে হবে ফিডিং ব্রা। যা ব্যাগে রেখে দিতে হবে।

প্রসব-পরবর্তী যত্ন:

১. স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া
২. প্রচুর পরিমাণে দুগ্ধ পান
৩. স্তনকে সুস্থ রাখা। প্রতিবার স্তন্যপানের আগে এবং পরে স্তন পরিষ্কার করতে হবে।
৪. এলইউসিএস-এর ক্ষেত্রে অ্যাবডোমিনাল বেল্ট ব্যবহার করতে হবে।
৫. নর্ম্যাল ডেলিভারির ৬ সপ্তাহ পর থেকে এক্সারসাইজ
৬. সন্তানকে পুরোপুরি ভাবে স্তন্যপান করাতে হবে।

গর্ভপাত সংক্রান্ত অধিকার:

ধর্ষণ অথবা ইনসেস্ট সার্ভাইভার, কুমারী অবস্থায় গর্ভাবস্থা, বিবাহবিচ্ছেদের মতো ক্ষেত্রে ভারতে বিবাহিত অথবা সিঙ্গেল মহিলাদের ২০ সপ্তাহ থেকে ২৪ সপ্তাহের মধ্যে গর্ভপাত করার অধিকার থাকে। সাম্প্রতিক এক যুগান্তকারী ঐতিহাসিক রায়ে বলা হয়েছে যে, ২ জন চিকিৎসকের সম্মতিতে অবিবাহিত মহিলার সম্মতিক্রমে যৌন মিলনের বাইরে গর্ভধারণের ক্ষেত্রে ২৪ সপ্তাহ পর্যন্ত গর্ভপাত করানো সম্ভব।