ঝাড়গ্রাম : ভগ্নপ্রায় দুটি স্কুলের হাল বদলে দিয়েছিলেন জঙ্গলমহলে দুই শিক্ষক। এবার রাজ্য সরকারের কাছ থেকে শিক্ষারত্ন পুরস্কার পাচ্ছেন দু’জনেই। দু’জনের গল্পটা প্রায় এক। সহশিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক হয়েছেন।বাড়ি থেকে বেশ আনন্দের সঙ্গে যোগদান করতে গিয়েছিলেন স্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে। আর স্কুলের চত্বরে পা রাখতেই উধাও হয়ে গিয়ে ছিল দু’জনেরই মুখের হাসি। একজনের চোখের সামনে ভেসে উঠেছিল ফাঁকা মাঠের মধ্যে চারটি ভাঙাচোরা ক্লাস রুম। আর তার মাঝেই চলেছে স্কুল। অপরদিকে , আর একজন এক হাঁটু জল পেরিয়ে ঝোপঝাড়ে ভরা স্কুলে প্রবেশ করে। তখনই তারা দু’জনেই দূড় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছিল স্কুলের চেহাটা বদলে দেওয়ার।
লড়াইটা দীর্ঘ সময় হলেও তাদের সেই দু’চোখে দেখা স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়েছে । স্কুলকে নিজের বাড়ি এবং ছাত্র-ছাত্রীদের নিজের ছেলেমেয়েদের মত আগলে রেখেছেন তারা। তারা আর কেউ নন তারা হলেন ঝাড়গ্রাম শহরের কুমুদ কুমারী ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক বিশ্বজিৎ সেনগুপ্ত এবং জামবনি বানী বিদ্যাপীঠ হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক অমিতাভ পাহাড়ি।
বিশ্বজিৎ সেনগুপ্ত বর্তমানে ঝাড়গ্রাম কুমুদ কুমারী ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক। বিশ্বজিৎ বাবু ঝাড়গ্রাম শহরের কদমকাননের বাসিন্দা। ১৯৯৫ সালে পূর্ব মেদিনীপুরের একটি স্কুলে ইংরেজির শিক্ষক হিসেবে যোগদান করে নিজের শিক্ষকতার জীবন শুরু করেন। ২০০১ সালে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিজের জেলার পড়িহাটি প্রগতিসংঘ জুনিয়র হাই স্কুলে যোগদান করেন। তিনি তখন দেখেছিলেন ফাঁকা মাঠের মধ্যে চারটি ভাঙাচোরা ঘর রয়েছে ।আর তাঁর মধ্যে চলছে পঠন-পাঠন। তাঁর হাত ধরেই জুনিয়ার হাই স্কুলটি মাধ্যমিক এবং পরে উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয়। এখন স্কুলটিতে লাইব্রেরি, কম্পিউটার ল্যাব থেকে শুরু করে রয়েছে সাইন্সের ল্যাব। ভাঙাচোরা চারটি স্কুলের ঘর এখন চারিদিকে পাঁচিল ঘেরা বড় স্কুল ভবনে রূপান্তরিত হয়েছে। ২০১৮ সালে ঝাড়গ্রাম জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত হন তিনি। ২০২১ সালে ঝাড়গ্রাম কুমুদ কুমারী ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষকের পদে যোগদান করেন বিশ্বজিত বাবু।
অপরদিকে, অমিতাভ পাহাড়ি বর্তমানে জামবনী বাণী বিদ্যাপীঠ হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক। তিনি ঝাড়গ্রাম শহরের রঘুনাথপুরের বাসিন্দা। ১৯৮৯ সালে জামবনী ব্লকের ডুমুরিয়া জগদীশচন্দ্র ইনস্টিটিউশনে বিজ্ঞান বিভাগের সহশিক্ষক হিসেবে যোগদান করে নিজের শিক্ষকতার জীবন শুরু করেন। ২০১১ সালে জামবনী বাণী বিদ্যাপীঠ হাই স্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। যোগদান করতে গিয়ে তিনি এক হাঁটু জল পেরিয়ে স্কুলের গিয়ে দেখেন। কোন শিক্ষক কারো সঙ্গে কথা বলে না। একে অপরের সঙ্গে মামলায় জড়িয়ে রয়েছেন। বিদ্যালয়ে নেই কোনও ক্লাসের রুটিন। বিশৃংখলভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে ছাত্র-ছাত্রীরা। ফাঁকা মাঠের মধ্যে ঝোপঝাড়ে ভরা। এই অবস্থায় স্কুলটির হাল ধরেন তিনি। ২০১১ সালে বিদ্যালয়টিতে মাধ্যমিক পর্যন্ত পঠন-পাঠন চলত। ওনার হাত ধরেই বিদ্যালয়ে শুরু হয় উচ্চমাধ্যমিকের পঠন-পাঠন। প্রথমে কলা বিভাগ তারপরে শুরু হয় বিজ্ঞান বিভাগ। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে ৫৫০ জনেরও বেশি। রয়েছে কম্পিউটার ল্যাব,সায়েন্স ল্যাব লাইব্রেরী সহ আরো অনেক কিছু। চারিদিকে পাঁচিল ঘেরা অবস্থায় মাথা উঁচু করে রয়েছে বিদ্যালয়টি।
বিশ্বজিৎবাবু ও অমিতাভবাবু দু’জনেই বলেন,”শিক্ষকতার জীবনে এটা একটা সবচেয়ে বড় পাওনা, প্রথম দিন শুনে খুবই আনন্দিত লাগছিল”। দু’জনেরই এখন স্বপ্ন বিদ্যালয় গুলিকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার। দু’জনেরই শিক্ষকতার বাইরেও রয়েছে বড় একটি নেশা। তা হল সমাজ ও পরিবেশকে সুস্থ রাখার নেশা। বিশ্বজিৎ বাবু সবুজ প্রাণ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ করছেন অপরদিকে অমিতাভবাবু পরিবেশকে কিভাবে সুস্থ রাখা যায়। কিভাবে আরও সবুজ বৃদ্ধি করা যায় তা নিয়ে তিনি মানুষকে সচেতন করে চলেছেন।
বুদ্ধদেব বেরা