সুন্দরবেনর বনবিবি মন্দির

সুন্দরবনের জঙ্গলজীবী মানুষের এক অজানা কাহিনি, আজও অনেকে জানেন না

উত্তর ২৪ পরগনা: বনবিবি জঙ্গলজীবি মানুষের কাছে আরাধ্যা দেবী। সুন্দরবন অঞ্চলে মৎস্যজীবী, মধু-সংগ্রহকারী ও কাঠুরিয়া জনগোষ্ঠীর দ্বারা পূজিত এক লৌকিক দেবী।

আজও সুন্দরবনের জঙ্গলজীবী মানুষ সুন্দরবনের নদীখাড়িতে মাছ, মধু, কাঁকড়া সংগ্রহ করতে যাওয়ার আগে পুজো করে থাকেন জঙ্গলের দেবী বনবিবিকে।

সুন্দরবনের জঙ্গলে বা বিভিন্ন খাঁড়িতে গেলে বেশ কিছু জায়গায় দেখা মেলে বনবিবি মন্দিরের। তবে সুন্দরবনের জলা জঙ্গলে এই বনবিবিকে পুজো করার পিছনে এক ইতিহাস লুকিয়ে আছে।

আরও পড়ুন- বাংলাজুড়ে উথালপাথাল আবহাওয়া… ভাসছে উত্তর থেকে দক্ষিণ, তিন জেলায় অবিরাম বৃষ্টি

সুন্দরবনের জঙ্গলজীবী মানুষের কাছে বনবিবিকে পুজোর ইতিহাস প্রসঙ্গে সুন্দরবন বিষয়ক গবেষক অনিমেষ মন্ডল জানান, কথিত আছে, সুন্দরবনের এক প্রত্যন্ত গ্ৰামে এক বিধবা মহিলা ও তাঁর ছেলে বাস করত। বাপ হারা ছোট্ট ছেলেটির নাম ছিল দুখে। দুখের দুই জ্ঞাতি কাকা ছিল পাশের গ্ৰামের ধনা ও মনা‌। একসময় সুন্দরবনের পাশের গ্রামের ধনা ও মনা দুই জঙ্গলজীবী মানুষ সুন্দরবনের কেঁদোখালির জঙ্গলে মধু আহরণ করতে নিয়ে যান দরিদ্র মায়ের ছেলে দুঃখেকে নিয়ে।

জঙ্গলে যাওয়ার আগে দুঃখে’কে মা জানিয়ে দেয়, ‘বনে আমার মতো তোর আরেক মা আছেন। কোনো বিপদে পড়লে তাঁকে ডাকবি।’ এক রাতে জঙ্গলের রাজা দক্ষিণ রায় ধনা-মনাকে স্বপ্নে দেখা দেন। তিনি দুই ভাইকে প্রচুর মধু আর সম্পদ দেওয়ার লোভ দিয়ে দুঃখে’কে তার কাছে তুলে দিতে বলেন, ধনা আর মনা দুঃখে’কে উৎসর্গ করার সিদ্ধান্ত নেন এবং তাকে জল আনতে পাঠিয়ে নৌকা ছেড়ে চলে যান।

দুঃখে মায়ের কথামতো সেই মাকে স্মরণ করে। বনবিবি এসে দুঃখেকে বাঘরূপী দক্ষিণ রায়ের কবল থেকে উদ্ধার করেন এবং তাকে কুমিরের পিঠে ভাসিয়ে মায়ের কাছে পাঠিয়ে দেন।

আরও পড়ুন- টোটোর ভবিষ্যত কী বাংলায়? এবার বড় ইঙ্গিত দিয়ে রাখল প্রশাসন!

এরপর বাড়ি ফিরে ধনা মনা তাদের কৃতকার্যের কথা জানতে পারায় লজ্জায় পড়ে যায়। আর এভাবেই বনবিবির মাধ্যমে জঙ্গলে দক্ষিণরায় অর্থাৎ বাঘের থেকে রক্ষা পাওয়ায় জন্য আজও জঙ্গলজীবী মানুষের কাছে বনবিবি জঙ্গলের আরাধ্যা দেবীহয়ে আছেন।

জুলফিকার মোল্লা