তবে কে এই অনুব্রত! হঠাৎ কী করে এত দাপট বেড়েছিল অনুব্রতর? সময়টা ছিল ১৯৯৮ সালে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যে সব নেতারা কংগ্রেস ছেড়ে এসেছিলেন,সে তালিকায় নাম ছিল ‘কেষ্ট’র। রাজ্যে তখন বামেদের দাপট। তার মধ্যেই জেলায় একটু একটু করে সংগঠনকে শক্তিশালী করেন অনুব্রত।

Anubrata Mondal: স্ব-মহিমায় ফিরবেন অনুব্রত মণ্ডল? ঘুরপাক খাচ্ছে একাধিক প্রশ্ন

আবীর ঘোষাল, কলকাতা: অনুব্রত মণ্ডলের ফিরে আসা কি বীরভূমে তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে প্রভাব ফেলবে ? জোর আলোচনা তৃণমূল কংগ্রেসের অন্দরেই। লক্ষ্যণীয়ভাবে একদা অনুব্রত ঘনিষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে দূরত্ব কেষ্ট নিজেই তৈরি করলেন, তাতে শাসক দলের বীরভূমের ক্যাপ্টেন কে হবে তা নিয়ে এখন জোর চর্চা।

সাম্প্রতিক সময়ে বীরভূম কেন্দ্রিক কয়েকটি ছবি শাসক দলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে উল্লেখযোগ্য।

আরও পড়ুন– তিরুপতি মন্দিরের লাড্ডু এবার থেকে তৈরি হবে নন্দিনী ঘি দিয়ে, বিতর্কের মাঝেই এই সিদ্ধান্ত

চিত্র এক – ২১ জুলাইয়ের মঞ্চের কাজ দেখতে তার আগের দিন ধর্মতলায় পৌঁছলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো আলাদা করে ডেকে কথা বললেন কাজল শেখের সঙ্গে। যে কাজল অনুব্রত বিরোধী গোষ্ঠী হিসাবেই পরিচিত।

চিত্র দুই – ছবির হেরফেরে বদল নেই ৷ কেষ্ট বীরভূমে ফেরার দিনেই তার নীচু পট্টির বাড়ি থেকে দুই কিলোমিটারের মধ্যে প্রশাসনিক বৈঠক সারলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বেরনোর সময়ে গাড়ির সামনে ডেকে কথা বললেন কাজল শেখের সঙ্গে। পাশে থাকলেন চন্দ্রনাথ সিনহা, অভিজিৎ সিংহ এবং আশিষ বন্দ্যোপাধ্যায়।

চিত্র তিন – অনুব্রত ঘরে ফিরতেই দেখা করতে গেলেন চন্দ্রনাথ সিনহা, বিকাশ রায়চৌধুরীরা। দেখা করলেন না একদা তাঁর ঘনিষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে। তাহলে কি কেষ্টর অভিমান? নাকি রাজনৈতিক ভাবে নয়া সমীকরণ দেখছেন অনুব্রত।

চিত্র চার – সিবিআইয়ের মামলায় জামিন পেয়েছেন অনুব্রত ৷ এই খবর যখন আসল তখন জুলাইয়ের শেষ লগ্নে চলছে বিধানসভার অধিবেশনে৷ উপাধ্যক্ষ আশিষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘরে বীরভূমের কোর কমিটির একাধিক সদস্য বলে উঠলেন তারা কেষ্টদার জন্য অপেক্ষায়। কিন্তু মঙ্গলবার সকালের ছবি দেখে অভ্যন্তরীণ আলোচনা অনুব্রত মণ্ডল কি তাদের অপেক্ষায় আছেন?

আরও পড়ুন– বঙ্গোপসাগরে ঘনীভূত নিম্নচাপ, রাজ্যের ৮ জেলায় ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস

এই টুকরো টুকরো ছবি শাসক দলের অভ্যন্তরে দাগ কাটতে শুরু করেছে। জেলে যাওয়ার আগে পর্যন্ত দাপটের সঙ্গে জেলা সামলেছেন অনুব্রত মণ্ডল। দল তাঁর কাজে এতটাই খুশি ছিল যে তাঁকে ২০১৯ সালের পরে নদিয়া জেলায় গিয়ে বিশেষ বৈঠক করতে বলেছিল। সেই অনুব্রত মণ্ডল জেলে যাওয়ার পরে তাকে নিয়ে বিরোধীরা লাগাতার চেপে ধরেছিল তৃণমূল কংগ্রেসকে। কিন্তু লোকসভার মত কঠিন পরীক্ষাতেও কেষ্ট ছাড়াই বোলপুর-বীরভূম দুই লোকসভা আসন দখল করেছে জোড়া ফুল শিবির৷

তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের গড়ে দেওয়া কোর কমিটি এই জয়ের পিছনে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে বলা হয়৷ একইসাথে এই কোর কমিটির সদস্যদের অনুব্রত নিয়েই বারবার বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে। তাই কেষ্ট ম্যাজিকের কথা বারবার উচ্চারিত হলেও, ময়দানের আসল লড়াই উতরে দেওয়ায় কোর কমিটির সদস্যদের যে মস্ত বড় ভূমিকা আছে তা অস্বীকার করতে পারছেন না তৃণমূলের কোনও নেতাই। এই রাজনৈতিক সমীকরণ কি বুঝছেন অনুব্রত মণ্ডল। তাই কি তাঁর একদা ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে নিজেই বাড়াচ্ছেন দূরত্ব। একই সঙ্গে আলোচনায় উঠে আসছে তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকার সামাজিক প্রকল্পে যে বিপ্লব এনেছেন, তার সুফল ভোট বাক্সে পাচ্ছে শাসক দল ৷ বিশেষ করে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার ৷

অন্যদিকে মমতা-অভিষেক দুই ক্রাউড পুলার বাকিদের চেয়ে পার্থক্য গড়ে দিয়েছেন৷ তাই লাভপুরের মাঠে রাতের বেলা নবজোয়ার যাত্রায় অভিষেকের সভার ভিড় ৷ একই মাঠে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের নির্বাচনী সভার ভিড় দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে তৃণমূলের শক্তি বুঝিয়েছ ৷ আর এই সব ছবিই এবার আলোচনায় তৃণমূলের অভ্যন্তরে। বেশ কয়েকটি প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। অনুব্রত মণ্ডল কি সত্যিই আগের মতো প্রয়োজনীয়? কোর কমিটির সদস্যদের ভবিষ্যৎ কি? আর কাজল কতটা মুক্তমনে কাজ করতে পারবেন বীরভূমে? তাই অনুব্রত মণ্ডল জামিন পেয়ে ফিরে আসায় বিরোধীরা আসলে রাজনৈতিক সমীকরণ মেলানোর চেষ্টা করছে শাসক দল।