দক্ষিণবঙ্গ: বোলপুর শহরের নিচুপট্টি এলাকা৷ নীল রঙের এক দোতলা বাড়ি৷ এই ক’দিন আগে পর্যন্তও যে কোনও নির্বাচনের আগে তিল ধারণের জায়গা থাকত না এই বাড়ির সামনে৷ আর আজ সব শুনশান৷ দরজা জানলা বন্ধ৷ ডাকলেও বোধহয় সাড়া মেলে না কারও৷ লোকসভা ভোটের চতুর্থ দফার দিন যখন বোলপুরের বুথে বুথে ভোট দিতে জড়ো হচ্ছেন সাধারণ মানুষ৷ তখন অনুব্রত মণ্ডলের নীল রঙা বাড়ির সামনে চেয়ারে বসে রইলেন ২-৩ জন পুলিশকর্মী৷ আর কেউ নেই৷ সব ফাঁকা৷
তাঁর ভয়ে নাকি বাঘে-গরুতে এক ঘাটে জল খেত বোলপুরে৷ গোটা এলাকা চিনতেন হাতের তালুর মতো৷ নকুলদানা, গুর-বাতাসা থেকে চড়াম চড়াম৷ প্রত্যেক ভোটের আগেই ‘খেলা’ দেখিয়ে দিতেন অনুব্রত মণ্ডল৷ উনিশের লোকসভা নির্বাচনের মতো একুশের নির্বাচনেও অনুব্রতকে তাঁর এই বাড়িতেই নজরবন্দি রেখেছিল কমিশন৷ কিন্তু, তাতে কী? এখানে বসেই বীরভূম তো বটেই বর্ধমানের একাংশেও ভোট নিয়ন্ত্রণ করতেন কেষ্ট৷ কিন্তু, কেষ্টর সেই গমগমে বাড়ি আজ শ্মশান৷
গরু পাচার কাণ্ডে তাঁর এই বাড়ি থেকেই তাঁকে গ্রেফতার করেছিল সিবিআই। সেই দিনও উপচে পড়েছিল ভিড়। এক বছর পরে সেই নিচুপট্টির সেই বাড়ি খাঁ খাঁ করছে! অনুব্রত মণ্ডল নেই। তিনি তিহাড়ে বন্দি৷ নেই তাঁর মেয়ে সুকন্যাও।
আরও পড়ুন: ভোটের প্রথম বলি! রাতের অন্ধকারে বোমা মেরে কুপিয়ে খুন তৃণমূলকর্মী…গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব না বামফ্রন্ট, নেপথ্যে কে?
প্রশ্ন উঠেছে, বীরভূমের রাজনীতিতে কি এখনও প্রাসঙ্গিক আছেন অনুব্রত? বিশেষ করে পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলের জয়ের পরে? রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, সমস্ত পঞ্চায়েত সমিতি তৃণমূলের দখলে, ৫৯ আসনের জেলা পরিষদে বিরোধী জয়ী সদস্য কেবল এক জন। এবং এই সবই হয়েছে কেষ্টর অনুপস্থিতিতে। এই বিপুল নির্বাচনী ‘সাফল্য’ অনুব্রতকে জেলার রাজনীতিতে আরও ‘অপ্রাসঙ্গিক’ করে দেবে বলে মনে করেছিলেন রাজনীতিবিদদের একাংশের। কিন্তু বীরভূম ভোট প্রচারে তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের কথায় বারবার উঠে এসেছে অনুব্রত মণ্ডল বা কেষ্টর কথা৷
সম্প্রতি বীরভূমে ভোট প্রচারে গিয়ে তাঁর ‘প্রিয়’ কেষ্টকে (অনুব্রত মণ্ডল) মঞ্চেই স্মরণ করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে অনুব্রত মণ্ডলের সবচেয়ে বড় গুণ কী, তা নিয়েও প্রকাশ্যে মন্তব্য করেছিলেন তৃণমূল নেত্রী। মমতা বলেছিলেন, ‘‘কেষ্টর কেসে কী আছে, আমি জানি না। আইন আইনের পথে চলবে। তবে গরিব কেউ ওঁর কাছে গেলে খালি হাতে ফিরে আসত না। ও জেলাটাকে হাতের তালুর মতো চিনত।”
আরও পড়ুন :‘বলির পাঠা করা হচ্ছে ইউসুফ পাঠানকে,’ ভোটের দিনও মমতাকে তুমুল তোপ অধীরের! কেন এলেন না রাহুল? দিলেন উত্তর
মঙ্গলবার মমতা বলেছিলেন, পরিকল্পনা করে অনুব্রত ও তাঁর মেয়েকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘কেষ্ট আজ এলাকায় নেই। ওকে আর ওর মেয়েকে পরিকল্পনা করে গ্রেফতার করা হয়েছে।’’ এর পর মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন কবে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হবে। মমতা বলেন, ‘‘আমি আপনাদের বলছি, দেখে নেবেন ভোট মিটলেই ওদের ছেড়ে দেওয়া হবে।’’ অনুব্রত যাতে ভোট কাজ না করতে পারে সেই জন্য তাঁকে আটকে রাখা হয়েছে। আর বুধবার অনুব্রতর গুণ নিয়ে মন্তব্য করে শোরগোল ফেলে দিলেন তিনি।