ঘূর্ণিঝড় আর বৃষ্টিতে নিতে হয়েছিল সাহসী সিদ্ধান্ত, ১২৫টি কুমিরকে চরম শাস্তি কৃষকের!

Animal Death: ঘূর্ণিঝড় আর বৃষ্টিতে নিতে হয়েছিল সাহসী সিদ্ধান্ত, ১২৫টি কুমিরকে চরম শাস্তি কৃষকের!

ব্যাংকক: থাইল্যান্ডের এক কুমির চাষী একটি হৃদয়বিদারক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলেন। ঘূর্ণিঝড়ের ঝড়ের কারণে তাঁর খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গিয়েছিল৷ তিনি এরপর চরম সিদ্ধান্ত নেন৷ ন্যাথাপাক খুমকাদ নামের ওই ব্যক্তি সিএনএনকে জানিয়েছেন যে, টাইফুন ইয়াগি ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করার পরে তিনি ১২৫টি সিয়াম কুমিরকে হত্যা করতে বাধ্য করা হয়েছিলেন৷ কারণ হিসাবে তিনি জানিয়েছেন, কুমিরগুলি যাতে সাধারণ মানুষের কোনও ক্ষতি করতে না পারে তাই এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে তাঁকে৷ কুমিরগুলোকে স্থানান্তরিত করার জন্য উপযুক্ত জায়গা খুঁজে না পাওয়ায় তাঁর কোনও উপায়ও ছিল না।

আরও পড়ুন : বাড়ির বাগানে মাকে গয়নার বাক্স উপহার ছোট্ট মেয়ের, খুলতেই যা হল…দেখুন ভিডিয়ো

খুমকাদ শেয়ার করেছেন যে তিনি জীবনের সবচেয়ে কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন৷ তাঁর আশঙ্কা ছিল, কুমিরগুলি যেখানে থাকত, সেই খামারের পাঁচিলটি যদি ঝড়ে ধসে পড়ে তাহলে কী হবে? সেক্ষেত্রে মানুষের নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়বে৷ ওই ব্যক্তি বিলাপ করে বলছিলেন, ১৭ বছর ধরে তার খামার টিকে ছিল৷ প্রতি বর্ষায় হাজার কষ্ট হলেও তিনি পুরো ব্যাপারটিকে নিয়ন্ত্রণে রেখেছিলেন৷ কিন্তু ইয়াগি ও অবিরাম বৃষ্টিতে এই বছর খামারের দেয়ালগুলিকে নষ্ট করে দিয়েছে।

আরও পড়ুন : অঙ্কের ভয় কাটাতে বিশেষ ব্যবস্থা নিলেন শিক্ষক, ম্যাজিকের মতো কাজ করে গেল প্ল্যান

খুমকাদ বলেন, “কুমিরগুলিকে হত্যা করাই আমার জীবনের সবচেয়ে কঠিন সিদ্ধান্ত ছিল। পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে বুঝেছিলাম যে খামারের দেয়ালটি ধসে পড়লে মানুষের জীবনের সাংঘাতিক ক্ষতি হবে৷ ঝড় আর বৃষ্টিতে খামারে ক্ষতি দ্রুত হওয়ায় ২৪ ঘন্টারও কম সময়ের মধ্যে আমাকে এত বড় আর কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল।”

এদিকে, সিঙ্গাপুরের আর্থ অবজারভেটরির পরিচালক বেঞ্জামিন হর্টনের মতে, “জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ইয়াগির মতো ঝড় শক্তিশালী হয়ে উঠছে৷ সমুদ্রের গরম জল ঝড়কে জ্বালানি দেয়৷ সেই কারণে ঝড় শক্তিশালী হয়ে ওঠে৷ বাতাসের গতি বেড়ে যায় এবং ভারী বৃষ্টিপাত হয়।”

ল্যামফুনের মৎস্য অফিসের প্রধান, পর্ণথিপ নুয়ালানং ব্যাখ্যা করেছেন যে খুমকাদ তার অফিসে পৌঁছেছিল, যখন ভারী বৃষ্টিতে তাঁর খামারের অবস্থা শোচনীয় হতে শুরু করে৷ তিনি আরও বলেন যে, কুমিরগুলিকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া তাঁর সাহসী এবং দায়িত্বশীল সিদ্ধান্ত ছিল। কারণ, প্রাপ্তবয়স্ক কুমিরগুলো যদি পাশের ধানের ক্ষেতে পালিয়ে যেত, তাহলে তারা ওই এলাকায় বসবাসকারী মানুষের মধ্যে মারাত্মক আতঙ্ক সৃষ্টি করতে পারত।

জানা গিয়েছে, খামারে একটি বিশাল কুমির ছিল৷ যেটি প্রায় ৪ মিটার (১৩ ফুট) লম্বা ছিল৷ পুরুষ কুমিরটিকে প্রধাণত প্রজননের জন্য ব্যবহার করা হত৷ কৃষকটি জানিয়েছেন, কুমিরটিকে রোজ তিনি গরম দুধ, মাংস খাওয়াতেন৷

প্রাথমিকভাবে, পরিবারটি মাত্র পাঁচটি কুমির নিয়ে শুরু হয়েছিল এবং গত দুই দশকে তাদের সংখ্যা বেড়েছিল অনেকটাই। এখন, পরিবারটি চামড়ার কারখানায় কুমিরের চামড়া সরবরাহ করে থাকে৷ থাইল্যান্ডের বাজারে হিমায়িত কুমিরের মাংস বিক্রি হয়, এবং শুকনো কুমিরের মাংস হংকং-এর বাজারে রপ্তানি করা হয়। জানা গিয়েছে, ১২৫টি কুমির মারা গেলেও, খুমকাদের কুমিরের খামারে ৫০০টি বাচ্চা কুমির এখনও রয়েছে।