ব্যবসা-বাণিজ্য Success Story: বীরভূম থেকে ইউরোপ, ১০০ বছরে এই সংস্থার সোনায় মোড়া ইতিহাস, চাল ও ভোজ্য তেলের রূপকথা Gallery October 2, 2024 Bangla Digital Desk “বাঙালি ব্যবসা করতে পারে না।’’ এই আপ্ত বাক্যটিকে ভুল প্রমাণ করে দিয়েছে হালদার গ্রুপ। সময়টা ১৯২৪ সাল। বীরভূমে চালকল খুললেন এক উদ্যমী তরুণ B.C. Halder। তারপর গঙ্গা দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। সেই একটা চালকল আজ হালদার গ্রুপ। চাল ও ভোজ্য তেল উৎপাদনের অন্যতম বৃহৎ কোম্পানি। ১০০ বছরের এই যাত্রাপথে শুধু ফুলের পাপড়ি বিছানো ছিল না। ছিল কাঁটাও। আর ছিল হার না মানা লড়াই। জমকালো অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে ফেলে আসা সেই সব দিন, ১০০ বছরের পথ চলা উদযাপন করল হালদার গ্রুপ। উপস্থিত ছিলেন সংস্থার কর্মী, কর্তাব্যক্তি থেকে শুরু করে অংশীদার, ব্যবসায়িক সহযোগী এবং শিল্পপতিরা। বীরভূম থেকে ইউরোপ। ঘরোয়া বাজার থেকে আন্তর্জাতিক বাজার, চুটিয়ে ব্যবসা করছে হালদার গ্রুপ। লক্ষ্য শুধু গ্রাহকের সন্তুষ্টি, শ্রেষ্ঠত্বে উত্তরণ। ব্যবসার শুরুটা হয়েছিল বৃন্দাবন চন্দ্র হালদার এবং মদন মোহন হালদারের হাত ধরে। বংশ পরম্পরায় বর্তমানে হালদার সাম্রাজ্যের দায়িত্ব বর্তেছে কেশব কুমার হালদারের হাতে। তিনিই হালদার ভেঞ্চার লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং সিইও। শতবর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানে দেখানো হয়েছে সংস্থার ১০০ বছরের ঐতিহাসিক যাত্রা নিয়ে তৈরি ছবি ‘দ্য মিল’। যা চ্যালেঞ্জ এবং চ্যালেঞ্জের মোকাবিলার, বাঙালির ব্যবসা করার গল্প বলে। ফুটে ওঠে কোম্পানির বিবর্তনের ইতিহাস। অনুষ্ঠানে কেশব কুমার হালদার বলেন, “প্রথম দিন থেকে চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করেছি আমরা। সুযোগ কাজে লাগিয়েছি। আমাদের প্রতিটা পদক্ষেপ ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নিয়েছে।’’ একটা চালকল থেকে কীভাবে এই সাম্রাজ্য গড়ে উঠল, সেই গল্পও এদিন বলেন কেশব। ১৯৯৫ সালে দ্বিতীয় মিল কেনে হালদার গ্রুপ। ২০১৩ সালে পা রাখে বিশ্ব বাজারে। ২০১৬ সালে বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হয় হালদার গ্রুপ। ২০১৮ সালে কোম্পানি নিয়ে আসে ভোজ্য তেলের ব্র্যান্ড ‘Odaana’। এখন চাল ও ভোজ্য তেল উৎপাদনে অন্যতম নাম হালদার গ্রুপ। এশিয়া, ইউরোপ এবং আফ্রিকার বাজারে চাল রফতানি করে কেশব কুমার হালদারের সংস্থা। ঘরোয়া বাজারে উৎপাদন করে উচ্চ মানের ভোজ্য তেল। সম্প্রতি ঘানা, বেনিন, ক্যামেরুন এবং টোগো-এর বাজারেও চাল রফতানি করতে শুরু করেছে হালদার গ্রুপ। এখন এগিয়ে যাওয়ার সময়। ভবিষ্যত প্রজন্মকে ব্যবসায় যুক্ত করেছে হালদার গ্রুপ। গ্রাহকের মন বুঝে সেই অনুযায়ী ব্যবসা ঢেলে সাজাবেন তাঁরা। অবকাঠামো বৃদ্ধির সঙ্গে ডেটা, হাত ধরাধরি করে চলবে পরম্পরা এবং আধুনিকতা। চাল এবং ভোজ্য টেলের উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি প্রিমিয়াম রাইস ব্র্যান্ড আনার পরিকল্পনাও রয়েছে সংস্থার। শুধু ব্যবসা নয়, পরিবেশ এবং সমাজের প্রতিও দায়বদ্ধ হালদার গ্রুপ। জৈব পণ্য এবং কার্বন সমতা অর্জনের লক্ষ্য নিয়েছে কোম্পানি। এদিনের অনুষ্ঠানে অংশীদার ও ব্যবসায়িক সহযোগীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান কেশব। তিনি বলেন, “আপনাদের সমর্থন পেয়েছি বলেই আজ আমরা সফল ৷’’ নতুন ও পুরনো কর্মীদেরও কৃতজ্ঞতা জানান তিনি। সংস্থার চেয়ারম্যান ও ডিরেক্টর প্রভাত কুমার হালদার বলেন, “কোম্পানির শতবর্ষ শুধু একটা মাইলফলক নয়। আরও বেশি। আমাদের যাত্রাপথকে যাঁরা রূপ দিয়েছেন তাঁদের সকলের প্রতি সংস্থা কৃতজ্ঞ। কেশব বলেন, “মূল্যবোধ এবং দৃষ্টিভঙ্গীই আসল, যা আমাদের এগিয়ে নিয়ে যায়। এই সাফল্য শুধু সংখ্যা দিয়ে মাপা যায় না। আমরা শুধু দেশ নয়, বিশ্বব্যাপী সম্পর্ক তৈরি করেছি। অর্জন করেছি কোটি কোটি গ্রাহকের বিশ্বাস।’’ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বন্ধন ব্যাঙ্কের প্রাক্তন ম্যানেজিং ডিরেক্টর চন্দ্রশেখর ঘোষ। তিনি উচ্ছ্বসিত। বললেন, “হালদার গ্রুপের শতবর্ষ উদযাপনের অংশ হতে পেরে আমি রোমাঞ্চিত। এই অনুষ্ঠান প্রমাণ করে দিল অধ্যাবসায় এবং সঠিক দৃষ্টিভঙ্গী শক্তি কতখানি। আমাদের শেখায় সত্যিকারের অগ্রগতি ঐতিহ্যকে সম্মান করার মধ্যে দিয়েই আসে। খোঁজ চলে বৃহৎ-এর।’’ এদিন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়েছিল। সঙ্গীত পরিবেশ করেন সৌরেন্দ্র- সৌম্যজিৎ। সব মিলিয়ে বাংলার ব্যবসার সমৃদ্ধ ইতিহাস আরও একবার উঠে এল বিশ্ব দরবারে।