যুদ্ধের মুখে ইরান-ইজরায়েল৷

Israel Iran war: একসময় বন্ধু ছিল ইরান-ইজরায়েল! কোন শত্রুকে কোণঠাসা করতে হাত মেলায় দুই দেশ?

কলকাতা: মঙ্গলবার রাতেই ইজরায়েলকে লক্ষ্য করে দুশো মিসাইল ছুড়েছে ইরান৷ পাল্টা জবাব দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইজরায়েলও৷ কার্যত যুদ্ধের মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছে দুই দেশ৷ কিন্তু শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও অতীতে একই শত্রুকে কোণঠাসা করতে হাত মিলিয়েছিল ইরান এবং ইজরায়েল৷ তাদের সঙ্গ দিয়েছিল আমেরিকাও৷

১৯৬০-এর দশকে ইরাকের বিরুদ্ধে জোট বেঁধেছিল ইরান এবং ইজরায়েল৷ সেই সময় ইরাকের সঙ্গে ইজরায়েলের তিক্ততা চরমে পৌঁছেছিল৷ আবার ইরানের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতির পথেও বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছিল ইরাক৷ ওই অঞ্চলে নিজেদের প্রভাব বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও ইরাককে নিজেদের পথের কাঁটা হিসেবেই দেখতে শুরু করেছিলেন ইরানের তৎকালীন শাসক মহম্মদ রেজা পহলভি৷ যিনি ইরানের শাহ হিসেবেই খ্যাত ছিলেন৷ তিনি মনে করতেন, ইজরায়েলের মাধ্যমেই ওয়াশিংটনের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা সম্ভব৷ সেই লক্ষ্যেই ইজরায়েলের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিলেন ইরানের শাহ৷

সেই সময় ইরাকের শাসকদের কোণঠাসা করতে কুর্দিশ অনুপ্রবেশকারীদের মদত দিতে শুরু করে ইরান, ইজরায়েল এবং আমেরিকা৷ ইজরায়েলের গুপ্তচর সংস্থা মোসাদের সঙ্গে হাত মেলায় ইরানের গুপ্তচর পুলিশ সাভাক৷ ইরাকের তৎকালীন নেতৃত্বকে বেকায়দায় ফেলতে গোপনে তথ্যের আদানপ্রদান করা শুরু করে ইজরায়েল এবং ইরানের দুই গুপ্তচর সংস্থা৷

এর পর এই দুই দেশের সঙ্গে ইরাকের বিরুদ্ধে হাত মেলায় তুরস্কও৷ তিন দেশের গুপ্তচর সংস্থার এই জোটবদ্ধ অভিযানের পোশাকি নাম দেওয়া হয় ট্রাইডেন্ট৷ নিজেদের মধ্যে গোপনে তথ্যের আদান প্রদানের পাশাপাশি ইরাকের বিরুদ পাল্টা অভিযানেরও ছক তৈরি করতে থাকে তারা৷

ইরান-ইজরায়েলের এই সুসম্পর্কের জেরেই ১৯৬০-এর দশকে ইরানে স্থায়ী কূটনৈতিক প্রতিনিধি দল নিযুক্ত করে ইজরায়েল৷ যা ইরানে ইজরায়েলের অস্থায়ী দূতাবাস হিসেবেও কাজ করতে শুরু করে৷

আরও পড়ুন: ‘বড় ভুল করে ফেলেছে ইরান’, হুঁশিয়ারি ইজরায়েলের! বুধবার রাতেই পাল্টা জবাব? সংঘাত চরমে

তবে আরব দুনিয়ায় ইজরায়েল বিরোধী মনোভাবের সম্পর্কে যথেষ্ট ওয়াকিবহল ছিলেন ইরানের শাহ৷ ১৯৬৭ সালে আরব-ইজরায়েল ছ দিনের যুদ্ধের পর ইজরায়েলের সমালোচনাও করেন তিনি৷ কিন্তু মতাদর্শের থেকেও ইরানের স্বার্থে কৌশলগত অবস্থানকেই বেশি গুরুত্ব দিয়ে ভারসাম্যের কূটনীতিতে জোর দেন তিনি৷

১৯৭৯ সালে ইরানে বিদ্রোহের পরে পরিস্থিতি সাময়িক ভাবে বদলায়৷ ইজরায়েল বিরোধী অবস্থান নেয় ইরানের নতুন শাসকরা৷ কিন্তু পরিস্থিতির চাপে ফের একবার ইজরায়েলের সঙ্গে হাত মেলাতে বাধ্য হয় আয়াতোল্লা খোমেইনির নেতৃত্বাধীন ইরান৷ ১৯৮০ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত ইরাকের সঙ্গে যুদ্ধ চলতেই থাকায় শেষ পর্যন্ত সাদ্দাম হোসেনের ইরাকের মোকাবিলায় আগের মতোই ইজরায়েলের সঙ্গে গোপনে হাত মেলায় ইরান৷

অন্যদিকে ইরানের সঙ্গে হাত মেলানোর ক্ষেত্রে ইজরায়েলেরও নিজস্ব স্বার্থসিদ্ধি ছিল৷ কারণ ইরাককে নিজেদের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার ক্ষেত্রে অনেক বেশি বিপজ্জনক মনে করত ইজরায়েল৷ পাশাপাশি ওই অঞ্চলে নিজেদের প্রভাব বিস্তারেও সক্রিয় হয়ে উঠেছিল ইরাক৷ সেই সময় আমেরিকা এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের সাহায্যে তৈরি হওয়া ইরাকি সেনাবাহিনীও যথেষ্ট শক্তিশালী ছিল৷ ইরাকি সেনাবাহিনীকে কোণঠাসা করতে ইরানকে সামরিক সাহায্যও করে ইজরায়েল৷

যদিও ১৯৯০-এর দশকের শুরু থেকেই ইরান এবং ইজরায়েলের মধ্যে সম্পর্কে ফাটল ধরতে শুরু করে৷ কারণ ইরাকের দাপট, সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রভাব সবই ততদিনে কমতে শুরু করেছে৷ ফলে দুই দেশের মধ্যে সুসম্পর্ক রাখার বাধ্যবাধকতাও কমতে থাকে৷ ধীরে ধীরে ইরান নিজেকে ইজরায়েল এবং ইহুদি বিরোধী রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছে৷ ইজরায়েলের পরিবর্তে হিজবুল্লাহ এবং হামাসের মতো গোষ্ঠীর সঙ্গে হাত মেলায় ইরান৷