প্রশ্ন- কালি সিরিজে অভিনয় করেছিলেন, তারপর অনেক দেরিতে বাংলা সিরিজে ফিরলেন৷ এত সময় লাগল কেন?
উত্তর- খুব ভাল লাগল আপনি কালি সিরিজটিকে বাংলা সিরিজ হিসেবে উল্লেখ করলেন৷ বেশির ভাগ মানুষই এটাকে হিন্দি সিরিজ হিবেসে মনে করে৷ তবে এটা ঠিক কালি সিরিজটি ছিল দ্বিভাষিক৷ এরপর বাংলা সিরিজ আমি করিনি৷ সেক্ষেত্রে কাবেরী পুরোপুরি বাংলা দর্শকদের জন্য৷ এর মাঝে বহু হিন্দি সিরিজে অভিনয় করেছি৷ কেন কাজ করিনি? কারণ আমি ভাল কন্টেন্টের অপেক্ষায় ছিলাম৷ এখানে কাজের এক ধরনের পরিকাঠামে৷ আমি কখনও হিন্দির মতো কাজের ধরন এখানে পাব, সেটা ভাবি না৷ কিন্তু কন্টেন্ট, বাজেট এগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ৷ অ্যাক্রপলিসের-(কাবেরীর প্রযোজক সংস্থা) সানির সঙ্গে অনেকদিন কথা হচ্ছিল৷ এবার যখন এই চরিত্রটা অফার করল, তখন আমার খুব পছন্দ হল৷ ডোমেস্টি ভায়োলেন্স-এর খবর এখন চারিদিকে৷ খবরের কাগজ খুললেই দেখা যায়৷ ফলে এমন একটা গল্পে আমি চাইছিলাম অভিনয় করতে৷ রাজি হয়ে গেলাম৷
প্রশ্ন-মেয়েদের মধ্যে লড়াই করার ক্ষমতাটা কি সহজাত?
উত্তর- মেয়েরা অনেক স্পর্শকাতর হয়৷ অনেক কিছু তাঁর গ্রহণ করতে পারে সহজে৷ এমন নয় যে ছেলেদের মধ্যে এই ধরনের গুণ থাকে না৷ বহু পুরুষ খুব নরম মনের মানুষ হন৷ আমাদের সমাজ ব্যবস্থা অনেক কিছুতে বাধা দেয়৷ তবে এটা ঠিক মেয়েরা লড়াই করতে জানে, ঘরে বাইরে তাদের এই পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয় প্রতিনিয়ত৷
প্রশ্ন-মেয়েরা মেয়েদের পাশে দাঁড়ায় না, এটাও কি পুরুষতন্ত্রের একটা ভুল প্রচার?
উত্তর- এখন যে শহরে প্রতিবাদ হচ্ছে সেটা তো এই কথাটা পুরো নসাৎ করে দিচ্ছে৷ মেয়েরা এখন মেয়েদের পাশে দাঁড়াচ্ছে৷ এখন আমরা অনেক বেশি মানবিক মুখ দেখছি৷ বুলবুল সিরিজে যে বিনোদিনী চরিত্র আমি করেছিলাম সেখানে দেখানো হয়েছিল যে বিনোদিনী বুলবুলকে সহ্য করতে পারছে না৷ অথচ কাবেরীতে কিন্তু ঠিক উল্টো৷ কাবেরী শম্পাকে সাহায্য করছে৷ প্রতিবাদ এক একজনের এক এক রকম৷ কাবেরীতে আমার আর শম্পার শিক্ষিকা-ছাত্রীর সম্পর্ক৷ এটা তো ঠিক যে একজন শিক্ষিকা ছাত্র-ছাত্রীকে গোড়া থেকে তৈরি করেন৷ এখানেও সেটাই দেখানো হয়েছে৷
প্রশ্ন- এখন অনেক মেয়ে কর্মরতা৷ তবে যাঁরা স্বেচ্ছায় ঘর-সংসার করে, তাঁদের অনেক সময় নিচু নজরে দেখা হয়ে৷ আপনার কী মত? এদের কী বেশি সংসারের যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়ে?
উত্তর- কাবেরীতে অভিনয় করার সময় একটি তথ্য আমাকে দেখানো হয়৷ সেখানে উঠে এসেছে যে বহু মহিলার অর্থনৈতিক স্বাধীনতা থাকা সত্ত্বেও প্রতিদিন যন্ত্রণার শিকার হচ্ছেন৷ লোকলজ্জার ভয় তাঁরা অনেক কিছু মুখ বুজে সহ্য করেন৷ ঠিক কাবেরী যেমন৷ অনেক বেশি মানিয়ে নিতে পারে, সহ্য ক্ষমতাও অনেকটা বেশি৷ অভিনয় করতে বা চরিত্রে ঢুকতে আমার প্রথমদিকে সমস্যা হয়েছিল৷ কারণ আমি শুধু বলতাম যে কেন কাবেরী এতটা সময় নিচ্ছে ঘুরে দাঁড়াতে, প্রতিবাদ করতে৷ ফলে একটা জিনিস পরিষ্কার যে যতই শিক্ষিত হোক না কেন, কণ্ঠস্বর জোগাতে পারেন না অনেকে৷ নিজের উত্তরণ ঘটাতে পারা সহজ নয়, সমাজের চাপেই হোক বা পারিবারিক চাপে৷ পুরুষদের আবার অন্য সমস্যা রয়েছে৷ তাঁরা বাড়িতে নিজেদের যত রাগ, ক্ষোভ তা উগড়ে দেন৷ কারণ বাইরে যদি তাঁরা কোনওভাবে নরম মনের প্রকাশ করে, তাহলে তাঁদের অসম্মান করা হবে৷ ফলে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের ফল ভুগতে হয়ে নারী-পুরুষ উভয়কে৷ তবে আমি মনে করি, নিজের কথা সবসময় বলা দরকার৷ এবং সেভাবেই নিজের মুক্তি মেলে৷ এটাই হয় তাদের জীবনের জয়ের গল্প৷
প্রশ্ন- পরিচালক সৌভিক কুণ্ডু সঙ্গে কাজ করে কেমন লাগল?
উত্তর– খুব ভাল অভিজ্ঞতা৷ খুব সুন্দর করে আমায় সবটা বুঝিয়ে দিয়েছে চরিত্র৷ কারণ আগেই বলেছি যে কাবেরীর চরিত্র করতে গিয়ে আমার প্রথমে সমস্যা হচ্ছিল৷ সৌভিকই আমায় ধীরে ধীরে পুরোটা বুঝিয়ে দেয় যে কেন কাবেরী প্রথমে প্রতিবাদ করে না, কেন এতটা সময় নিচ্ছে৷ তবে শুধু সৌভিক নয়, পুরো টিমই খুব ভাল ছিল৷ সহ অভিনেতারও খুব আন্তরিক ছিলেন৷
প্রশ্ন- পাওলি কি ভুল দেখলেই প্রতিবাদ করেন?
উত্তর-তা করি৷ মানে স্ত্রীকে মারধর করার মতো নক্কারজনক ঘটনা দেখলে রুখতে তো হবেই৷
প্রশ্ন-এখন কী নিয়মিত ওটিটি-তে দেখা যাবে?
উত্তর– নিশ্চয়ই৷ ভাল চরিত্র, গল্প পেলে তো কাজ করবই৷ আর এখন বাংলাতে অনেক কাজ হচ্ছে৷ অনেক ক্ষেত্রে সেগুলো আবার জাতীয় স্তরের থেকেও উন্নত মানের৷
প্রশ্ন-পাওলির পুজো কেমন কাটে? এবার কী প্ল্যান?
উত্তর-একদম প্ল্যান করি না৷ ৮ তারিখ কাবেরী মুক্তি পেয়েছে৷ আশা করব সবাই পুজোতে কাবেরী দেখবেন৷ এবার তো ৯ অক্টোবর পর্যন্ত কাজ করব৷ তারপর থেকে ছুটি৷ জানি না এখানে থাকব নাকি অন্য কোথাও৷
প্রশ্ন-এখন অনেকে একা থাকতে পছন্দ করছেন৷ আপনার কী মনে হয় সংসার করার প্রয়োজন আছে?
উত্তর– এক একজন এক একরকম ভাবে চলতে পারেন৷ একসঙ্গে থাকা শুধু অর্থনৈতিক দিক থেকে তো নয়, সোশ্যাল ব্যালেন্স, সংসার বাড়ানো বা আরও অনেক কারণে থাকে৷ এটা বহু বছরের একটা সামাজিক ব্যবস্থা৷ তবে সেখানে থাকতে হলে আন্তরিক ভাবে থাকা কাম্য৷ এক সঙ্গে থাকার ইচ্ছে থাকতে হবে৷ কথায় বলে যে দুটো বাসন যদি একসঙ্গে থাকে তাহলে ঠোকাঠুকি লাগতে পারে৷ তাই দু’জন একসঙ্গে থাকলে ঝামেলা হতে পারে৷ কারণ দুটি মানুষের চাওয়া-পাওয়া আলাদা৷ জীবনের ধারনা আলাদা৷ তারপরও একসঙ্গে থাকার কথা ভাবলে ভালবেসে থাকতে হবে৷ আর কেউ যদি একা থেকে শান্তি পান, তাহলে সেটাই করুন৷
প্রশ্ন-শহর কলকাতা দেখিয়ে দিল প্রতিবাদ কাকে বলে! আপনিও সহমত?
উত্তর– শহর কখনই ঘুমিয়ে ছিল না৷ এই শহর আমার প্রিয় শহর৷ এ শহর শুধু ইট কাঠ বালি দিয়ে তৈরি নয়৷ এখানে আমার পড়াশুনা, শিক্ষা, সিনেমার শিক্ষা, আমার কাজ, আমার পরিচিতি তৈরি হয়েছে৷ আমার গর্বের শহর৷ সময়ের দাবি মেনে সবার কন্ঠস্বর মিলে গেল৷ বুঝিয়ে দেওয়া গেল যে প্রয়োজনে সবাই সামনে এসে প্রতিবাদ করবে৷