অকৃতদার থেকে গেলেন আজীবন। সুবিশাল জীবনে তাঁকে ঘিরে থেকেছে মহতী কর্মযজ্ঞ, ব্যস্তও রেখেছে, দিয়েছে সম্পদ এবং সাফল্য উজাড় করে, এত কিছুর পরেও কেন বিয়ে করা হয়ে উঠল না, সে কথাই একদা সিমি গারেওয়ালকে এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন রতন টাটা।
সিমির জনপ্রিয় টক-শো রাঁদেভ্যু-র কথা এখনও অনেকেই ভোলেননি। সেখানেই একবার অতিথি হয়ে এসেছিলেন দেশের প্রবাদপ্রতিম এই উদ্যোগপতি। “আজীবন তিনি থেকেছেন প্রচারের আলো থেকে দূরে, তার পরেও যে আমার টক-শোয়ে এসেছেন, বলাই বাহুল্য, এ নিছকই তাঁর উদারতা”, বলেছেন সিমি।
সেই শো-তেই সিমি প্রশ্ন করেছিলেন- কেন কখনই বিয়ে করলেন না রতন টাটা! বলে রাখা ভাল, একদা দুজনের গভীর সখ্য ছিল, একে অপরকে ডেটও করেছেন তাঁরা। ফলে, সিমির মধ্যে প্রশ্নের মধ্যে অনেক কিছু ছিল, তা অনুমান করে নিতে অসুবিধা হবে না কারও।
আরও পড়ুন: সুবিস্তৃত কর্মজীবনে শুধুই ফলেছে সোনা, টাটা গ্রুপের প্রবাদপ্রতিমের এই কয়েকটি সাফল্য সবারই অনুপ্রেরণা
রতন টাটা কিন্তু সেই প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে যাননি। “অনেক সময়েই আমি নিঃসঙ্গ বোধ করি, স্ত্রী বা পরিবার না থাকার জন্য, কখনও কখনও তার জন্য রীতিমতো ব্যাকুলতাও তৈরি হয়”, অকপট স্বীকারোক্তি তাঁর। এও বলতে ভোলেননি, জীবনে এমন কিছু মুহূর্তও এসেছে, যখন বিয়ের কথা প্রায় পাকা হয়েই যাচ্ছিল। তার পরেও তিনি কেন অকৃতদার, সেই উত্তরও দিয়েছেন নিজেই।
“এক কথায় এর উত্তর দেওয়া যাবে না। সময়, কাজ নিয়ে আমার ব্যস্ত থাকা- অনেক কারণই রয়েছে। বিয়ের কথাও হয়েছে দু-একবার, শেষ পর্যন্ত আর হয়নি”, বলেছেন রতন টাটা।
সিমির সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নিয়ে যে গুজব রয়েছে, তারও উত্তর সেই শো-তেই সুন্দরভাবে দিয়েছিলেন আদ্যন্ত এই ভদ্রলোক। সিমি নিজে বলেছেন যে তাঁদের যখন আলাপ হয়, দুজনেই তখন সবে বিদেশ থেকে দেশে ফিরেছেন। এই পরিবেশ ছিল অজানা, সেখান থেকেই হৃদ্যতা তৈরি হতে সময় লাগেনি। আর এই বিষয়ে নিজে কী বলেছেন উদ্যোগপতি?
“অনেকেই বলবেন আমি নির্জনতাবিলাসী। কথাটা একেবারে মিথ্যাও নয়। এটা হওয়ারই ছিল। স্বতস্ফূর্ত ভাবেই তা আমার স্বভাবে এসেছে। সারা দিন অফিসে থাকা, চারপাশে প্রচুর লোক, অসংখ্য টেলিফোন কল, এর পর সেই সব থেকে বেরিয়ে আসার পরে এক শান্তির অনুভূতি তো কাজ করবেই। তোমার মনে আছে, বহু বছর আগে আমাদের যখন প্রথম দেখা হয়, আমরা যখন সৈকতে পায়চারি করছিলাম, তখনও আমায় এই একই অনুভূতি ঘিরে রেখেছিল। তোমার সঙ্গে কাটানো ওই মুহূর্ত আমি এখনও খুবই উপভোগ করি। ওই নৈঃস্তদ্ধ্যের মধ্যে একটা আলাদা ব্যাপার ছিল। ওর মধ্যেই পেরিয়ে এসেছিলাম কত চিন্তার স্তর, বলা হয়ে গিয়েছিল সব না বলা কথা”, নিজের অনুভূতি লুকিয়ে রাখেননি তিনি।
এত কিছুর পরেও বিয়ে কেন করলেন না, আরও একটু স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছিলেন রতন টাটা। “বেশিরভাগ সময়ই আমি এই সাংসারিক বন্ধন না থাকা, কারও জন্য কোনও বিশেষ অনুভূতি না থাকা, কারও জন্য উদ্বেগ না থাকার স্বাধীনতা অতীব উপভোগ করি। মাঝে মাঝে বিষয়টা একাকিত্বের দিকে চলে যায়”, খোলসা করেছিলেন তিনি।
আরও পড়ুন: আয়ের একটা বড় অংশ দান করতেন সেবামূলক কাজে, কত পরিমাণ সম্পত্তি রেখে গেলেন রতন টাটা?
সিমি কিন্তু আরও স্পষ্ট উত্তরের আশায় ছিলেন সে দিন। জানিয়েছেন, শো শেষে মারুতি করে বেরিয়ে যাওয়ার আগে তিনি সংশ্লিষ্ট প্রতি কর্মীর সঙ্গে করমর্দন করেছিলেন। উষ্ণতা তাঁর স্বভাবজাত। তাহলে কি বিয়ে না করার কারণ অন্য কিছু? একেবারে সরাসরি এবার তূণীর থেকে শেষ তিরটা বের করেন সিমি- “তুমি কি কাউকে আসলে বিশ্বাস করে উঠতে পার না”?
এরও উত্তর দিয়েছিলেন সে দিন রতন টাটা। “হ্যাঁ, আমি করি। ভীষণভাবেই করি। অনেকেই হয়তো এ কথা মানতে চাইবেন না। কিন্তু আমি নিজে তা-ই মনে করি”, স্বভাবসিদ্ধ আত্মবিশ্বাস ঝরে পড়েছিল প্রতি শব্দের উচ্চারণে।
সম্পর্কের পদচারণা বড়ই জটিল। কোথায়, কখন তা কীভাবে মোড় নেয়, বলা মুশকিল! এক সময়ে একে অপরকে ডেট করলেও সে সম্পর্ক যে পরিণতি পায়নি, তা নিয়ে কোনও ক্ষোভ আছে কি না, তা সিমির বক্তব্য থেকে স্পষ্ট নয়। রতন টাটার প্রতি বক্তব্যেই কিন্তু ছিল সেই সুন্দর সময়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা। ক্ষোভ থাকলে সিমির ক্ষতে সে দিন প্রলেপ পড়ারই কথা। তবে, সময় বোধহয় ধুয়ে নিয়ে গিয়েছিল তা। এক আদ্যন্ত ভদ্রলোক হিসেবেই যে রতন টাটাকে চিরকাল মনে থেকে যাবে, সে কথা বলতে ভোলেননি সিমি।
আর এবার তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেলে ঝরে পড়ল চোখের জল। ওই শো থেকে দুজনের ছবির এক কোলাজ ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করেছেন সিমি। “সবাই বলছে তুমি চলে গিয়েছ! এই ক্ষতির ভার বহন করা খুব কঠিন… সত্যি খুব কঠিন। চিরবিদায় প্রিয়সখা”, লিখেছেন সিমি।