কোচবিহার: জেলা কোচবিহারের রাজ আমলে স্থাপন করা হয়েছিল মদনমোহন বাড়ি। দীর্ঘ সময় ধরে এই রাজ আমলের মদনমোহন বাড়িতে মদনমোহন দেবের রাসযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। এই দীর্ঘ সময়ের পুরনো এই প্রাচীন মন্দিরের রাস যাত্রার এক বিশেষ ঐতিহ্য হলো রাস চক্র। রাজ আমলে শুরু হওয়ার রাস মেলার ঐতিহ্যবাহী এই রাস চক্র চার পুরুষ ধরে নির্মাণ করে আসছেন এক পরিবার বংশপরম্পরায়। রাজার আদেশ এই এই রাস চক্র নির্মাণ শুরু করে এই পরিবার। তারপর কেটে গিয়েছে অনেকটা সময়। আজও নিয়ম মেনে এই কাজ করে থাকেন এই পরিবারের মানুষেরা।
বর্তমান সময়ে রাস চক্রের কারিগর আমিনুর হোসেন জানান, “দীর্ঘ প্রায় চার পুরুষ ধরে এই রাস চক্র নির্মাণ কাজ করে আসছে তাঁর পরিবার। কিছুদিন আগে পর্যন্ত তাঁর বাবা এই কাজ করতেন। তবে তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ার কারণে এই কাজ করতে পারছেন না। তাই গত বছর থেকে তাঁর কাঁধেই পড়েছে রাস চক্র নির্মাণের দায়িত্ব। কোজাগরী লক্ষ্মী পুজোর দিনে নিয়ম মেনে নিরামিষ খাবার খেয়ে শুরু করতে হয় রাস চক্র নির্মাণের কাজ। তারপর টানা একমাস ধরে চলে এই পর্ব। রাস পূর্ণিমার আগে সম্পন্ন হয় রাস চক্র নির্মাণের কাজ।”
আরও পড়ুন: নতুন শাড়ি গয়নাতে কনের সাজে পালন করবা চৌথ! অনন্য রীতিতে জমজমাট কালচিনি
তিনি আরও জানান, “রাস পূর্ণিমার দিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সময় লাগে এই গোটা চক্রকে মদনমোহন বাড়িতে স্থাপন করতে। চক্র মূলত নির্মাণ করা হয় বাঁশ, বাঁশের কাঠি, আঠা, কাগজ, রঙ, সুতো, পাটের দড়ি এবং ভগবানের ছবি দিয়ে। এই চক্রকে এমন ভাবে নির্মাণ করা হয় যাতে এই চক্র ঘোরানো সম্ভব হয়। রাস পূর্ণিমার উপলক্ষে বহু মানুষ দূর-দূরান্ত থেকে মদনমোহন বাড়িতে এসে থাকেন রাস চক্র ঘোরানোর জন্য। দীর্ঘ সময় ধরে এই রাস চক্র কোচবিহার জেলার অন্যতম প্রাচীন ঐতিহ্য।”
আরও পড়ুন: বিধানসভা উপনির্বাচনে তৃণমূলের হাতিয়ার চা বাগানের জমির পাট্টা!
দীর্ঘ সময়ের এই ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখতে প্রাচীন রাজ আমলের রীতি প্রথা মেনে এই কাজ করে থাকেন এই পরিবারের মানুষেরা। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও আজও অক্ষুন্ন রাখা হয়েছে সমস্ত রীতি প্রথা। তাই শুধুমাত্র জেলায় নয় জেলা এবং রাজ্যের বাইরেও সমান প্রসিদ্ধ জেলা কোচবিহারের এই ঐতিহ্যবাহী রাসমেলা।
Sarthak Pandit