আয়ুর্বেদে এমন কোনও গাছ নেই যা ওষধি রূপে গণ্য করা হয়ে থাকে না। শুধু গাছ নয়, পরগাছাও একই ভাবে সমান আদৃত প্রাচীন এই ভারতীয় স্বাস্থ্য সম্পর্কিত শাস্ত্রে। সেই কারণেই আয়ুর্বেদে গিলয় পাতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি অনেক রোগের উপশমের জন্য কার্যকর বলে মনে করা হয়। কোভিড সময়কালে গিলয়ের রসের সবচেয়ে বেশি চাহিদা ছিল। কারণ এতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা রয়েছে। গিলয় পাতা নিম গাছে উঠলে একে ‘নিম গিলয়’ও বলা হয়। নিম গাছে ছড়িয়ে থাকা গিলয়ের উপকারিতা সবচেয়ে বেশি।
এই পাতার বিশেষত্ব হল এটি যে গাছে চড়ে, সেই গাছের গুণাবলী নিজের মধ্যে শুষে নেয়। এর পাতাগুলো পানের মতো বড় সবুজ রঙের। এটি এমন একটি পাতা যা প্রতি মরশুমে সবুজ থাকে। গিলয় লিভার টনিক হিসেবেও কাজ করে। এর স্বাদ তিক্ত।
আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক ডা. পিন্টু ভারতী লোকাল 18-কে জানিয়েছেন যে, গিলয়ে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি রয়েছে। এতে রয়েছে টিনোস্পোরিন, টিনোস্পোরিক অ্যাসিড, আয়রন, পালমেরিয়ান, ফসফরাস, কপার, ক্যালসিয়াম এবং জিঙ্ক ইত্যাদি পুষ্টি উপাদান। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও সক্ষম। জ্বর, জন্ডিস, বাত, ডায়াবেটিস, কোষ্ঠকাঠিন্য, অ্যাসিডিটি, বদহজম ও প্রস্রাবের সমস্যায় গিলয় খুবই উপকারী। এছাড়া এটি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী।
তিনি বলেন, গিলয়ের জুস পান করলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায় এবং ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। ডায়াবেটিসে গিলয়ের রস খুবই উপকারী। গিলয় গলা ব্যথা বা ডেঙ্গি জ্বরের উপশমের জন্য একটি ঘরোয়া প্রতিকার হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
তিনি আরও বলেন, এতে অ্যান্টিপাইরেটিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা দ্রুত জ্বর সারাতে কার্যকর। গিলয় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিকারী হিসেবে কাজ করে। এর রসে উপস্থিত পুষ্টিগুণ ত্বকের রোগ নিরাময়ে এবং এটিকে উজ্জ্বল করতে সহায়ক।
গিলয়ের ধর্মীয় গুরুত্ব ভারতীয় ঐতিহ্যে একটি বিশেষ স্থান রাখে। ধর্ম বিশেষজ্ঞ চন্দ্রপ্রকাশ ঢন্ডন বলেন, ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে গিলয়কে অমরত্বের প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। গিলয় বিশেষ করে ভগবান বিষ্ণু এবং মহাদেবের সঙ্গে যুক্ত। এটি অনেক জায়গায় পূজা করা হয় এবং একটি পবিত্র উদ্ভিদ হিসাবে বিবেচিত হয়। এটি নবরাত্রি এবং অন্যান্য ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সময় বাড়িতে লাগানো হয়, যাতে এর ইতিবাচক এবং বিশুদ্ধ প্রভাব পরিবেশে বজায় থাকে। ঔষধি গুণের কারণে মন্দির ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানেও এর গুরুত্ব দেওয়া হয়।