নদিয়া: আসন্ন কালীপুজোর মন্ডুমালা, খর্গ, ধাতব পুজো উপকরণ এবং বাসনপত্র পালিশঘরে চূড়ান্ত ব্যস্ততা শান্তিপুর কাঁসারী পাড়ায় , আক্ষেপ হারিয়ে যাওয়া শিল্প নিয়ে। নদিয়ার বৈষ্ণব ধর্মের সঙ্গে শাক্ত পুজোর প্রচলন আছে। সরকারি নথি অনুযায়ী শান্তিপুরে কালীপুজোর সংখ্যা ১০০ এর বেশি, যার মধ্যে প্রায় ২০ টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং বহু প্রাচীন। আগমেশ্বরী, মহিষখাগী, চড়ার বামা কালী, গুল বাজ, বোম্বেট কালী, বাংলা কালী যার মধ্যে অন্যতম। আর এইসব বিরাটাকার প্রতিমার ধাতব হাতের খাঁড়া, মুণ্ডমালা, শিবের ডুগডুগি, চাঁদ মালা এবং পুজোর বিভিন্ন বাসন-কোসন পালিশ করার জন্য সকলকে আসতে হয় শান্তিপুর কাঁসারি পাড়ায়।
কাঁসা-পিতলের ব্যবহার ধীরে ধীরে কমে যাওয়ার কারণে ওই পাড়ায় এখন সকলেই প্রায় অন্যান্য পেশায় নিযুক্ত হয়েছেন। তবে কালী পুজো উপলক্ষে ভরসা ৬৫ বছর বয়সি কাশীনাথ কংস বণিকের ওপর। তার পালিশ ঘরে কাজ হয়ে যাওয়ার পর চোখ এবং অন্যান্য আঁকার উদ্দেশে মেয়ে বর্ণালী প্রামাণিক কংস বণিক আসেন বাপের বাড়িতে।
আরও পড়ুন: ভূত চতুর্দশীর আগেই কিনে ফেলুন! দাম মাত্র ১০ টাকা থেকে শুরু…
ছোটবেলা থেকেই বাবার কাজে সহযোগিতা করে আসার অভ্যাসে বিয়ে হয়ে যাওয়ার পরও এই কদিন বাবার কাজে সহযোগিতা করতে থাকেন বাপের বাড়িতে। তবে জাগ্রত কালী মূর্তির ব্যবহার্য জিনিষের কাজ করতে গেলে শুদ্ধ বস্ত্রে, শুদ্ধ মনে , বিভিন্ন মন্ত্র উচ্চারণে মায়ের অনুমতি নিয়ে তবেই তাঁর হাতের মুন্ডু মালার পালিশ করতে হয়। তাই সে ধরনের গুরুত্বপূর্ণ কাজ সামলান, কাশীনাথ কংস বণিক। তিনি বলেন এ প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা এই পেশায় আসতে আগ্রহী নয়, তার ওপর দীর্ঘদিন কাজ করলে শ্বাস প্রশ্বাসজনিত সমস্যা হয়। আগে গোটা পাড়ায় প্রচুর পালিশ ঘর, কাঁসা পিতলের ধাতব মূর্তি তৈরির কারখানা থাকলেও বর্তমানে সকলেই কিনে ব্যবসা করেন। পালিশ ঘর বলতে তার বাদে আর দুজন মাত্র।
আরও পড়ুন: ৩০০ বছরের চিরাচরিত প্রথা মেনে পূজিত হন শান্তিপুরের দেবী আগমেশ্বরী মাতা
মেয়ে বর্ণালী বলেন, তার ছোটবেলায় বাবার চরম ব্যস্ততায় হাতে হাতে সহযোগিতা করতে করতে সে আঁকা, চুল লাগানো এবং পালিশের কাজ কিছুটা শিখে গেছে। সারা বছর বাসন-কোসন এবং অন্যান্য প্রতিমা এবং পুজোর উপকরণ পালিশের কাজের চাপ বাবা সামলে নেন। তবে কালীপুজোর দিন নাওয়া খাওয়া ভুলে মা এবং তাকে সহযোগিতা করতে হয়। দুর্গাপুজোর পর থেকেই কালীপুজোর বিভিন্ন ধাতব অস্ত্রশস্ত্র পুজোর উপকরণ মুন্ডুমালা পালিশ এর জন্য জমা পড়ে, যা পুজোর আগের দিন সকলেই নিয়ে যান।
তবে প্রবীণ কাশীনাথ কংস বণিকের আক্ষেপ এমনিতেই বিলুপ্তপ্রায় শিল্প হয়ে দাঁড়িয়েছে। উপযুক্ত পারিশ্রমিক এবং কাজ করতে গিয়ে শ্বাস জনিত নানান সমস্যায় পরবর্তী প্রজন্ম আগ্রহী নয় এই কাজ করতে। আর তার ফলেই আগামীতে কি হবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় তিনি।
Mainak Debnath