#কলকাতা: ভাত-মাছের পাশাপাশি ফুটবলপ্রেম বাঙালির জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। দেশের অন্য রাজ্যগুলিতে যখন ক্রিকেট, হকি নিয়ে চর্চা চলে, এই রাজ্য তখন কোনও মনমাতানো ড্রিবলে বা কারও হ্যান্ড অফ গড গোলে মজে থাকে। তবে রাজপুত্র দিয়েগোর বিদায়ে সেই প্রেমে আজ যেন এক অদ্ভুত যন্ত্রণা দেখা দিয়েছে। ২৫ নভেম্বর ফুটবল বিশ্বকে একলা করে ছেড়ে চলে গিয়েছেন মারাদোনা। তবে তাঁর মৃত্যুর পর সোশ্যাল মিডিয়ায় এক অভিনব প্রতিযোগিতায় নেমেছেন নেটিজেনরা। মারাদোনাকে কে বেশি ভালোবাসেন? এখন এ নিয়েই সম্মুখ সমরে পশ্চিমবঙ্গ ও কেরল। কিন্তু কেন? ঠিক কী হয়েছিল?
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় থেকে শুরু করে নরেন্দ্র মোদি, মারাদোনাকে শোকবার্তা জানিয়েছেন বিভিন্ন ক্ষেত্রের মানুষজন। আর সেই ক্রমেই মারাদোনাকে নিয়ে একটি Facebook পোস্ট করেন কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। শোকবার্তা প্রকাশের পাশাপাশি এই পোস্টে তিনি জানান, মারাদোনার দেশ আর্জেন্তিনার বাইরে বোধহয় তাঁর সব চেয়ে বেশি ফ্যান রয়েছে কেরলে। কেরলবাসীর হৃদয় ও মননের একটি বড় জায়গা জুড়ে রয়েছেন মারাদোনা।
Since I heard about football ASA child, I heard about #Maradona. In a Bengali household,there was no bigger Legend/Hero than Maradona.Everyone spoke about him like he was our own. Football changed today forever,for all those people. Just glad that I was alive during his lifetime.
— Sayani Gupta (@sayanigupta) November 25, 2020
আর এরপরই খানিকটা হতাশ ও বিস্মিত হয়েছেন বাঙালি ফ্যানেরা। কোন রাজ্যের মানুষ মারাদোনাকে বেশি ভালোবাসেন, তা নিয়েই ট্যুইটার ও ফেসবুকে চলছে কমেন্টের লড়াই। দুই রাজ্যের মানুষ নিজেদের মতো করে নানা স্মৃতি ও মারাদোনার প্রতি অসম্ভব ভালোবাসার কথা তুলে ধরেছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়।
No Sir, that would be Bengal. ? https://t.co/Z2QfUjKnIf
— Mitali Mukherjee (@MitaliLive) November 25, 2020
#Kolkata will be in mourning tomorrow for Maradona’s death. Just like they were last week when Soumitra Chatterjee passed. Both “Bengali” legends. Greatest Maradona loving city in India by far.
— Shantanu (@shantanub) November 25, 2020
আসলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাঙালির ঘরে ঘরে একাত্ম হয়ে গিয়েছিল মারাদোনা নামটি। ২০১৭ সালে মারাদোনা যখন কলকাতা আসেন, সেই উন্মাদনা আর উচ্ছ্বাসই ধরা পড়েছিল শহরবাসীর চোখে। চ্যারিটি ফুটবল ম্যাচে সেই চেনা ড্রিবল হোক কিংবা স্প্যানিশ গানের ছন্দ, সে বার ৫৭ বছরে বয়সী মারাদোনার প্রেমে মজেছিল সিটি অফ জয়। তবে তার আগেও ২০০৮ সালে কলকাতায় এসেছিলেন দিয়েগো মারাদোনা। সেই সময়ে বাংলায় বামসরকারের শাসন ছিল। আর্জেন্তিনার মার্ক্সিস্ট আইকন চে গুয়েভারা হোক কিংবা কিউবার প্রধানমন্ত্রী ফিদেল কাস্ত্রো, কোথাও যেন বার বার স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল তাঁর রাজনৈতিক মতাদর্শও। সে বার মোহনবাগান ক্লাবও ঘুরে গিয়েছিলেন মারাদোনা।
তবে শুধু বাংলা নয়। ২০১২ সালে এসে কেরলেও ঘুরে গিয়েছেন তিনি। কান্নুরে লক্ষ লক্ষ ফ্যানের সঙ্গে তাঁর ৫২তম জন্মদিন পালন করেন মারাদোনা। এখানে বেশ কয়েকটি ক্লাব ও বহু ফুটবলার রয়েছেন। ফুটবল নিয়ে এই রাজ্যের ছোট ছোট শহরগুলিতেও উন্মাদনা তুঙ্গে। তাই মারাদোনার প্রতি কেরলবাসীর প্রেমও সর্বজনবিদিত।
বাংলা না কেরালা, কে এগিয়ে, তা বলা মুশকিল। কোথায় ফ্যানের সংখ্যা বেশি, তা গুনে ওঠাও প্রায় অসম্ভব। তবে, আর্জেন্তিনা পেরিয়ে ফুটবলের রাজপুত্রের সাম্রাজ্য যে বহু দূরে ছড়িয়ে পড়েছে, এই সোশ্যাল মিডিয়া যুদ্ধ সেই বিষয়টিকেই স্পষ্ট করে তুলল নতুন করে।