Savings Tips: বেতন থেকে ঠিক কতটা সঞ্চয় করা উচিত? বিশেষজ্ঞর পরামর্শ মানলেই সব মুশকিল হবে আসান

নিজেদের বেতনের কত অংশ সঞ্চয় করতে হবে, সে সম্পর্কে বেশ কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে। ক্রমবর্ধমান ব্যয় এবং জীবনযাত্রার লক্ষ্যগুলির সঙ্গে সর্বদা সঞ্চয়ের বিষয়ে নজর দেওয়া উচিত। জীবনের লক্ষ্য অর্জনের জন্য, বেতনের কত টাকা সঞ্চয় করা উচিত, তা আয়, খরচের অভ্যাস এবং ভবিষ্যৎ উচ্চাকাঙ্ক্ষার উপর নির্ভর করে।

অনেকেই সম্ভবত ৫০/২০/৩০ নিয়মের কথা শুনেছেন – এটি হল আয়ের ৫০% রাখা উচিত প্রয়োজনীয়তা পূরণের জন্য, ২০% সঞ্চয়ের জন্য এবং ৩০% অন্য ব্যয়ের জন্য।

আরও পড়ুন: ১০ লাখ টাকা বিনিয়োগে ভাল রিটার্ন পেতে কী করা উচিত? জানুন সবথেকে কাজের উপায়

এটা সহজ হলেও সবসময় সম্ভব নয় –

মুদ্রাস্ফীতি, জীবনযাত্রার আকাঙ্ক্ষা এবং ঋণগুলি কয়েক দশক আগের তুলনায় আজ নিজেদের আয়কে অনেক দ্রুত শেষ করে দেয়। SEBI-তে রেজিস্টারড বিনিয়োগ উপদেষ্টা এবং উদ্যোক্তা গৌরব গোয়েল উল্লেখ করেছেন যে, অনেকেই বিভিন্ন কারণে তাদের বেতনের ২০% সঞ্চয় করতেই হিমসিম খায়। এর একটি প্রধান কারণ হল উচ্চাকাঙ্ক্ষী জীবনধারা যা মানুষ বজায় রাখতে চায়। সোশ্যাল মিডিয়া এবং বিজ্ঞাপনের ক্রমাগত প্রভাব বিলাসবহুল আইটেমগুলিতে ব্যয় করতে প্রভাবিতত করে। যা প্রায়শই ৫০/২০/৩০ নিয়মের বাইরে নিয়ে যায়।

কেউ মাসে ৫০,০০০ টাকা রোজগার করলেও ভাড়া, ইএমআই, মুদিখানা এবং অন্যান্য খরচের পরে শুধুমাত্র ১০,০০০ টাকা অবশিষ্ট থাকতে পারে। ৫০,০০০ টাকার মধ্যে ১০,০০০ টাকা সাশ্রয় করা সহজ মনে হয়। কিন্তু, কেউ যদি এই বেতনে ১.২০ লাখ টাকা দামের সর্বশেষ iPhone ক্রয় করতে চায় তাহলে তা দীর্ঘমেয়াদী আর্থিক সুরক্ষার ক্ষতি করতে পারে।

আরও পড়ুন: SIP-র এই ৭ ফিচার অন্য কোনও স্কিমে পাবেন না, বিনিয়োগের আগে বুঝে নিন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি

উদাহরণ সহ ব্যবহারিক সঞ্চয় কৌশল –

কেউ যদি মাসে ৫০,০০০ টাকা উপার্জন করে এবং আগামী বছরে ১.২০ লাখ টাকা মূল্যের একটি iPhone ক্রয় করার জন্য সঞ্চয় করার লক্ষ্য রাখে, তাহলে কীভাবে আয় বরাদ্দ করা যেতে পারে তা এখানে দেখা যাক-

প্রয়োজনীয়তা (৫০%): ভাড়া, মুদিখানা, অন্য ব্যবহারিক খরচ ইত্যাদির জন্য ২৫,০০০।

অন্য খরচ (৩০%): বিনোদন, খাওয়া-দাওয়া ইত্যাদির জন্য ১৫,০০০।

সঞ্চয় (২০%): ১০,০০০।

প্রথম নজরে, প্রতি মাসে ১০,০০০ টাকা সঞ্চয় করা সম্ভব বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু, কেউ যদি ইতিমধ্যেই ব্যক্তিগত ঋণের ইএমআই-তে ৫,০০০ টাকা এবং ভাড়ার জন্য আরও ১০,০০০ টাকা পরিশোধ করে, তাহলে এটি সমস্ত খরচের জন্য মাত্র ২০,০০০ টাকা রেখে যায়। যার অর্থ ২০% সঞ্চয় করা কঠিন হয়ে পড়ে।

FinEdge-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং CEO হর্ষ গেহলোটের মতে, আগে সঞ্চয়, পরে খরচের নীতি অনুসরণ করাই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ তাই একটি EMI স্কিমে ঝাঁপিয়ে পড়ার পরিবর্তে দীর্ঘমেয়াদী আর্থিক লক্ষ্যগুলিতে বিনিয়োগ চালিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে iPhone-এর জন্য বিশেষভাবে প্রতি মাসে ৫০০০ টাকা জমানো যেতে পারে।

– ফলে, স্বল্পমেয়াদী সঞ্চয়ের জন্য ৫০০০ টাকা (আইফোন) রইল

– দীর্ঘমেয়াদী সঞ্চয়ের জন্যও ৫০০০ টাকা (অবসর, জরুরি তহবিল, বা ভবিষ্যতের বিনিয়োগ) রইল

আকাঙ্ক্ষা এবং অগ্রাধিকারের ভারসাম্য বজায় রাখা –

যদি একটি আইফোন কেনা কারও জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়, তাহলে অন্য খরচ কম করতে হবে। গোয়েল জোর দিয়ে বলেছেন যে, এর অর্থ এই নয় যে নিজেদের ইচ্ছাগুলি পুরোপুরি বাদ দিতে হবে। বিলাসিতার জন্য কিছু টাকা আলাদা করে রেখে স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং দীর্ঘমেয়াদী নিরাপত্তার মতো প্রয়োজনগুলিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। ৫০,০০০ টাকা উপার্জনকারী কারও জন্য এর অর্থ হল ১২-১৮ মাসের মধ্যে সেই iPhone-এর টাকা সঞ্চয় করার জন্য ছুটি কাটানো বা ঘন ঘন অনলাইন কেনাকাটা করার মতো অপ্রয়োজনীয় খরচ কমাতে হবে।

আর্থিক বিনিয়োগ: ধাপে ধাপে পদ্ধতি –

ধাপ ১: নিজেদের লক্ষ্য চিহ্নিত করতে হবে। স্বল্পমেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদী উভয় আর্থিক লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে। একটি বাড়ি ক্রয়, সন্তানের শিক্ষার জন্য সঞ্চয়, না কি তাড়াতাড়ি অবসর – এগুলি স্পষ্টভাবে হিসেব করার মাধ্যমে, নিজেদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলিকে ঘিরে সঞ্চয়ের পরিকল্পনা করা যেতে পারে।

ধাপ ২: নিজেদের প্রয়োজন গুণে রাখতেতে হবে। ধরা যাক কেউ ৫০ লাখ টাকা মূল্যের একটি বাড়ি কিনতে চায় এবং প্রয়োজনীয় ডাউন পেমেন্ট ২০% (১০ লাখ টাকা)। যদি সেই ডাউন পেমেন্টের জন্য পাঁচ বছর সঞ্চয় করতে হয়, তাহলে প্রতি মাসে প্রায় ১৬,৬৬৭ টাকা সঞ্চয় করতে হবে (সুদ বা বিনিয়োগের রিটার্ন ব্যতীত)।

কেউ যদি প্রতি মাসে ১ লাখ টাকা উপার্জন করে এবং ৫০/২০/৩০ নিয়ম অনুযায়ী সঞ্চয় করে, তাহলে সঞ্চয় করার জন্য ২০,০০০ টাকা থাকবে। যদি ভাড়া এবং EMI পেমেন্ট বেতনের একটি বড় অংশ গ্রাস করে, তাহলে সামঞ্জস্য করতে হবে। সম্ভবত বিবেচনামূলক খরচ কমাতে হবে বা আয় বাড়ানোর উপায় খুঁজে বের করতে হবে।

ধাপ ৩: গেহলোট স্বয়ংক্রিয় সঞ্চয় গুরুত্ব দেন। তাই বেতনের একটি নির্দিষ্ট অংশ বিনিয়োগ করতে হবে বা সেভিংস অ্যাকাউন্টে জমা করতে হবে।

প্রয়োজনে একটি মিউচুয়াল ফান্ডে মাসিক ৫০০ টাকা বিনিয়োগ করা দরকার এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা বাড়তে হবে। এটি চক্রবৃদ্ধি সুদের সুবিধা দিতে পারে।

সব মিলিয়ে উচিত হল নিজেদের উদ্বৃত্তের অন্তত ৭৫% সঞ্চয় করা, যা আর্থিক স্বাধীনতার পথে নিয়ে যায়। উদাহরণস্বরূপ, ভাড়া এবং বিল কভার করার পরে যদি কারও কাছে ২০,০০০ টাকা অবশিষ্ট থাকে, তাহলে এর মধ্যে ১৫,০০০ টাকা বাঁচানোর লক্ষ্য রাখতে হবে। এটি নিশ্চিত করে যে, স্বল্পমেয়াদী বিলাসিতা দীর্ঘমেয়াদী নিরাপত্তায় হস্তক্ষেপ করবে না। সুতরাং, স্বল্প পরিমাণে হলেও সঞ্চয় শুরু করা উচিত এবং নিশ্চিত করা উচিত যে, দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্যগুলিতে স্বল্পমেয়াদী আকাঙ্ক্ষার জন্য কখনও যেন আপোস করতে না হয়।

Keywords: Salary, Savings

Original Link: https://www.cnbctv18.com/personal-finance/savings-investments-rules-how-much-of-salary-to-save-life-goals-house-purchase-iphone-19480739.htm

Written By: Mihir Sur