ভোজপুর: ঠিক যেন সিনেমার প্লট! বিহারের ভোজপুর জেলার এই খবরটি নাটক, থ্রিলার এবং সাসপেন্সে ভরপুর। বিয়ের পর মারধর করতেন স্বামী। বাধ্য হয়ে স্ত্রী ধর্মশীলা দেবী ফিরে আসেন তাঁর বাবা-মায়ের ঘরে। দু’মাস পর মা মারা যান ধর্মশীলার। এর পর বাবা তাঁকে ‘কুনজরে’ দেখতে শুরু করেন বলে অভিযোগ। একদিকে স্বামীর নির্যাতন, অন্য দিকে বাবার কীর্তিতে নিজেকে শেষ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এই তরুণী। রেললাইনে গলা দিতে যান। এই অবস্থায় এক ব্যক্তি শেষ মুহূর্তে ধর্মশীলার প্রাণ বাঁচান। এই ব্যক্তি ধর্মশীলাকে তাঁর সঙ্গে আসতে বলেন।
দু’জনে একটি মন্দিরে গিয়ে বিয়েও করেন। তবে ধর্মশীলার বাবা ভেবে নেন তাঁর কন্যা মারা গিয়েছে। জামাইয়ের নামে খুনের মামলা দায়ের করলে পুলিশ এসে ধর্মশীলার প্রথম স্বামীকে তুলে নিয়ে যায়। তাঁর জেল হয়। এর পর কিছু দিনের মধ্যেই একটি দাবিহীন মৃতদেহ আসায় ধর্মশীলার বাবাকে ডেকে পাঠানো হয়। তিনি সেই দেহ নিজের কন্যার বলেই সনাক্ত করেন। এর পর মামলা রুজু করে ধর্মশীলার প্রাক্তন স্বামীকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।
আরও পড়ুন- কেন সব সময় হাইহিল পরতে হয় এয়ারহোস্টেসদের? কারণ জানলে চমকে যাবেন!
এর পর কেটে গিয়েছে ৪ বছর! হঠাৎ পুলিশ দেখতে পায় ধর্মশীলাকে। একী! তিনি তো জীবিত! কী হল তার পর? পুলিশ সূত্রে খবর, বিহারের আড়ার বাসিন্দা ধর্মশীলা দেবী জনকপুরিয়া গ্রামের অবধ বিহারী সিংয়ের মেয়ে। স্বামীর অত্যাচার এবং বাবার বিষনজরের কারণেই ধর্মশীলা আত্মহত্যার কথা ভেবেছিলেন এবং রেলস্টেশন থেকে ট্র্যাকের দিকে হাঁটা শুরু করেন। সামনে থেকে ট্রেন আসতে দেখে ধর্মশীলাকে বাঁচান এক যুবক। এরপর ধর্মশীলার কাছে আত্মহত্যার কারণ জানতে চান ওই যুবক। ধর্মশীলা ওই যুবককে সব খুলে বলেন। যুবক ধর্মশীলাকে সঙ্গে নিয়ে গিয়ে গাঙ্গীতে অবস্থিত বিশ্বকর্মা মন্দিরে বিয়ে করে আরাতে বসবাস শুরু করেন।
আরও পড়ুন- ‘অনশন তুলে বৈঠকে আসুন’, জুনিয়র ডাক্তারদের ইমেলে কী কী লিখলেন মুখ্য সচিব?
ধর্মশীলা জানান, তাঁর দুই সন্তান, এক ছেলে ও এক মেয়ে। ধর্মশীলার বাবা জামাইয়ের বিরুদ্ধে খুনের মামলা করেন। খোঁজাখুঁজির পরও ধর্মশীলার সন্ধান না পেয়ে অবধ বিহারী ধর্মশীলার স্বামী দীপক, শ্বশুর প্রমোদ সিং এবং শ্যালক রবিশঙ্করের বিরুদ্ধে খুনের মামলা দায়ের করেন। এই সময়ে, 31 অক্টোবর 2020, পুলিশ থানা এলাকায় সোন নদীর তীরে একটি মৃতদেহ খুঁজে পায়, যেটিকে অবধ বিহারী সিং তার মেয়ে ধর্মশিলা দেবী হিসাবে চিহ্নিত করেছিলেন। পরে পুলিশ সদর হাসপাতালে লাশের ময়নাতদন্তও করে। খুনের অভিযোগে ধর্মশিলা দেবীর স্বামী দীপককেও জেলে পাঠিয়েছে পুলিশ।
চার বছর পর পুলিশ ধর্মশীলাকে উদ্ধার করে এবং আদালতে ১৬৪ ধারায় তাঁর জবানবন্দি রেকর্ড করার পর সদর হাসপাতালে ডাক্তারি পরীক্ষা করানো হয়। 17 অক্টোবর 2024 তারিখে, টাউন থানার পুলিশ মীরগঞ্জ মহল্লা থেকে ধর্মশীলাকে উদ্ধার করে চৌরি থানায় হস্তান্তর করে।
ধর্মশালা দেবী বললেন- “বাবা মিথ্যা এফআইআর নথিভুক্ত করেছেন।
পুলিশ মীরগঞ্জে আমার বাড়িতে এসে আমাকে থানায় নিয়ে যায়। আমার বাবা আমার প্রথম স্বামীকে মিথ্যা বলে, অন্য মহিলার মৃতদেহকে আমার মনে করে, মিথ্যা এফআইআর দায়ের করে। আমি আরা মীরগঞ্জের বাসিন্দা অজয় কাহারকে বিয়ে করেছি। আমার দুই সন্তান আছে।”
ধর্মশীলা আরও বলেন, “বাবা আমার সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক করার ইচ্ছা পোষণ করতে থাকে, আমি ঘুমন্ত অবস্থায় থাকলেও আমার কাছে আসত এবং অবৈধ সম্পর্ক করতে চেয়েছিল বাবা।
” ঘটনায় পিয়ার মহকুমায় পোস্ট করা এএসপি কে কে সিং বলেছেন, “চৌরি থানা সম্পর্কিত একটি মামলা হয়েছে, যেখানে 2020 সালে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছিল, যেখানে অপহরণের পরে সোন নদীতে একটি মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছিল, পরিবার সনাক্ত করেছে যে এটি সেই মেয়ে। কিন্তু সেই মামলার বিচারও এখন হয়েছে এবং সেই মামলার আসামিরাও জেলে গেছে। এর পর এই মেয়েটিকে উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া আদালতের নির্দেশ নিয়ে যা যা আইনানুগ ব্যবস্থা, নেওয়া হবে। বাবার বিরুদ্ধে মেয়েটির অভিযোগও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”