কলকাতা: মহিলাকে দিয়ে পাতা ফাঁদে পা দিয়েই কি নৃশংস ভাবে খুন হতে হল বাংলাদেশের সাংসদ আনোয়ার উল আজিমকে? তদন্তে নেমে এমন সম্ভাবনার কথা উড়িয়ে দিচ্ছে না সিআইডি এবং ঢাকা পুলিশের তদন্তকারী দল৷ তদন্তকারীদের নজরে রয়েছেন বাংলাদেশের বাসিন্দা সিলেস্টি রহমান নামে এক মহিলা৷ পুলিশ সূত্রে খবর, ঘটনার দিন সম্ভবত সিলেস্টাই বাংলাদেশের ওই সাংসদকে নিউ টাউনের ওই ফ্ল্যাটে ডেকে নিয়ে গিয়েছিলেন৷ ইতিমধ্যেই সিলেস্টাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে ঢাকা পুলিশ৷
গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য কলকাতায় পৌঁছন বাংলাদেশের সাংসদ আনোয়ার উল আজিম৷ কলকাতায় এসে বরানগরে গোপাল বিশ্বাস নামে এক আত্মীয়ের বাড়িতে উঠেছিলেন তিনি৷ সেখান থেকেই গত ১৩ মে চিকিৎসককে দেখাতে নিউ টাউনে যান তিনি৷ এর পর থেকেই নিখোঁজ হয়ে যান তিনি৷ গত ১৮ মে আনোয়ার উল আজিমের খোঁজ মিলছে না বলে পুলিশে অভিযোগ জানান গোপাল বিশ্বাস৷ তদন্তে নেমে নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের কথা জানতে পারে পুলিশ৷
কীভাবে হত্যা বাংলাদেশের সাংসদকে?
জানা যায়, ঘটনার দিন নিউ টাউনের অভিজাত আবাসনের একটি ফ্ল্যাটে প্রথমে ক্লোরোফর্ম দিয়ে সংজ্ঞাহীন করে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়৷ মৃত্যু নিশ্চিত করতে প্রথমে ভারী বস্তু দিয়ে সাংসদের মাথায় আঘাত করে আততায়ীরা৷ তার পর রান্নাঘরে নিয়ে গিয়ে শুরু হয় দেহ লোপাটের প্রস্তুতি৷
তদন্তকারীদের দাবি, এই ঘটনার প্রায় আড়াই মাস আগে অবৈধ ভাবে খুলনার বাসিন্দা পেশায় কসাই জিহাদকে কলকাতায় নিয়ে আসা হয়৷ চিনার পার্কের কাছে একটি ফ্ল্যাটে রাখা হয় তাকে৷ আনোয়ার উল আজিমকে খুনের পর তাঁর দেহ টুকরো টুকরো করে কাটা হয়৷ এর পর চামড়া ছাড়িয়ে মাংস, হাড় টুকরো টুকরো করে ব্যাগে ভরা হয়৷ এর পর ট্রলি ব্যাগে ভরে সাংসদের দেহাংশ ভাঙড় এলাকার পোলেরহাটে খালের জলে ফেলে আসা হয়৷ এ দিন জিহাদ হাওলাদার নামে ওই কসাইকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি৷
আরও পড়ুন: রবিবার থেকে কত দিন চলবে দুর্যোগ, কলকাতা সহ ভাসবে কোন কোন জেলা? বৃষ্টি উত্তরবঙ্গেও
সিআইডি-র পাশাপাশি এই চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের তদন্তে নামে ঢাকা পুলিশও৷ নিউ টাউনের ওই আবাসনের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, ঘটনার দিন এক মহিলার সঙ্গে ওই আবাসনে ঢুকছেন বাংলাদেশের সাংসদ আজিম৷ ওই মহিলাই সম্ভবত সিলেস্টা রহমান বলে অনুমান তদন্তকারীদের৷ তাদের ধারণা, সিলেস্টাই টোপ দিয়ে আজিমকে ওই আবাসনে ডাকেন৷ আগে থেকেই ওই আবাসনের ফ্ল্যাটে লুকিয়ে ছিল জিহাদ সহ অন্য আততায়ীরা৷ আনোয়ার উল আজিম ফ্ল্যাটে ঢুকতেই শুরু হয় হত্যা পর্ব৷
খুনের মাস্টারমাইন্ড বিদেশে?
তদন্তে এখনও পর্যন্ত জানা গিয়েছে, এই হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড সম্ভবত আখতারউজ্জামান নামে বাংলাদেশ বংশোদ্ভূত আমেরিকা অথবা লন্ডন নিবাসী এক ব্যক্তি৷ সে আনোয়ার উল আজিমের পূর্ব পরিচিত৷ খুনের জন্য জিহাদ সহ আততায়ীদের আখতারউজ্জামান ৫ কোটি টাকা দিয়েছিল বলে দাবি তদন্তকারীদের৷
সিলেস্টা নামে সন্দেহভাজন ওই মহিলা হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড আখতারউজ্জামান এবং এক আততায়ীর পূর্ব পরিচিত বলেও জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা৷ তবে আখতারউজ্জামানের খোঁজ এখনও পায়নি পুলিশ৷ পাশাপাশি, নিহত সাংসদ আনোয়ার উল আজিমের দেহাংশের খোঁজও মেলেনি৷