অনাথ শিশুদের আশ্রম

Purulia News: লোকগীতি গেয়ে পথে-পথে ভিক্ষা! আর সেই টাকাতেই ৫০ অনাথ শিশুকে বড় করছেন শিল্পী

পুরুলিয়া : মনের ইচ্ছা যদি প্রখর হয় তা হলে কোনও কিছুই বাধা হয়ে দাঁড়ায় না। তাতে পথে যতই বাধা-বিপত্তি আসে আসুক না কেন ইচ্ছা শক্তির সামনে সবটাই মলিন হয়ে পড়ে‌। আর সেই মনের জোরের সঙ্গে প্রতিদিনই লড়াই সংগ্রাম লড়াই করে চলেছেন পুরুলিয়ার আড়ষাব্লকের বাসিন্দা নরেন হাঁসদা।

এক অদম্য লড়াই করে চলেছেন তিনি। জেলার প্রত্যন্ত গ্রামে গ্রামে গিয়ে গান গেয়ে ভিক্ষা করে সেই টাকা দিয়ে অনাথ শিশুদের জন্য গড়ে তুলেছেন একটি আশ্রম। নাম ‘সিধো-কানহু মিশন’। অনাথ আবাসিকদের পাশাপাশি লেখাপড়া শেখাচ্ছেন এলাকার আরও শতাধিক ছেলে-মেয়েকে। স্বপ্ন একটাই, তাঁরা যেন মানুষ হয়ে সমাজ গড়ার কাণ্ডারি হতে পারে।

পুরুলিয়া শহর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দুরে আড়ষা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার ফাঁকা জঙ্গলের মাঝে ছোটো ছোটো ডুংরির তলায় মনোরম পরিবেশে তৈরি করা হয়েছে এই আশ্রম। সেখানে রয়েছে ৫০ জন আবাসিক আদিবাসী সম্প্রদায়ের অনাথ ছেলে-মেয়ে। শুধু পড়াশোনাই নয় গান , বাজনা, খেলাধুলো, আদিবাসী রীতিনীতি, গাছ লাগানো সব কাজই শেখানো হয় এই ছাত্র-ছাত্রীদের। নরেন হাঁসদা সারাদিন গ্রামে গ্রামে ঘুরে গানবাজনা করে যে চাল-ডাল ও টাকা পয়সা সংগ্রহ করেন তা দিয়েই চলে এই আশ্রম। এ বিষয়ে নরেন হাঁসদা বলেন, “গ্ৰামে গ্ৰামে ঘুরে গান গেয়ে ভিক্ষা করি। সেই থেকেই তিনি যা দান পাই, তা দিয়েই এই আশ্রম চলে। এ ছাড়াও কোনও সহৃদয় ব্যক্তি, স্থানীয় থানা থেকে এবং পঞ্চায়েত থেকে কিছু সাহায্য দেন।”

সময় সঙ্গে সঙ্গে খরচের পরিমাণও বাড়ছে তবুও তিনি চেষ্টা করে যাচ্ছেন এই শিশুদের মানুষ করে তোলার। সরকারি সাহায্য নেই তাঁর। তাও তিনি হার মানতে নারাজ। এ বিষয়ে আশ্রমে আসা এক শিক্ষিকা বলেন, তিনি কোলকাতার একটি এনজিও-এর সঙ্গে যুক্ত। প্রায়শই তিনি এখানকার শিশুদের পড়াশোনা শেখাতে আসেন। শহরের ব্যস্ত জীবন থেকে এই শিশুদের কাছে অনেকখানি স্বস্তির নিঃশ্বাস পান তিনি।

২০১২ সালে এই সিধো-কানহো মিশনের প্রতিষ্ঠা হয়। প্রতিষ্ঠার সময় অনাথ শিশুদের সংখ্যা ছিল প্রায় ১৩ জন। ধীরেধীরে অনাথ শিশুদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। বর্তমানে এই মিশনে ৫০ জন অনাথ ছেলে মেয়ে রয়েছে আবাসিক হিসেবে। আশেপাশের বিভিন্ন গ্রাম থেকে সেখানে পড়াশোনার জন্য আসে। এই ছোট ছোট শিশুদের ভবিষ্যৎ এর ভিত মজবুত করতে প্রতিদিন লড়াই সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন নরেন হাঁসদা।

শর্মিষ্ঠা ব্যানার্জি