‘চিঠি আর আসবে না’, ধুলো জমে ঝাপসা লেটার বক্সের এখনও লেখা ‘মাননীয় মুখ‍্যমন্ত্রী’, ‘প্রাক্তন’ হননি বুদ্ধদেব

Buddhadeb Bhattacharjee Death: ‘চিঠি আর আসবে না’, ধুলো জমা ঝাপসা লেটার বক্সে এখনও লেখা ‘মাননীয় মুখ‍্যমন্ত্রী’, ‘প্রাক্তন’ হননি বুদ্ধদেব

কলকাতা: পাম অ‍্যাভিনিউয়ের সরকারি আবাসনের ‘এ’ ব্লকের দু’কামরার ফ্ল‍্যাট ছেড়ে শেষবারের মতো বেরিয়ে গেলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। শূন্য ফ্ল্যাটের মতোই শূন্য হয়ে গেল ৫৯ নম্বর পাম অ্যাভিনিউয়ের লেটার বক্স। চিঠি আসবে কার নামে? লেটার বক্সে জ্বলজ্বল করছে যাঁর নাম, তিনিই তো আর নেই।

রং চটা লেটার বক্সটার গায়ে জমে আছে ধুলো। পুরনো হলদে হয়ে যাওয়া স্টিকারের গায়ে এখনও লেখা, ‘‘বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, অনারেবল চিফ মিনিস্টার, ৫৯এ, পাম অ‍্যাভিনিউ, ব্লক-এ, ফ্ল‍্যাট: ১’’। বুদ্ধদেবের মন্ত্রী থেকে উপমুখ্যমন্ত্রী, তারপর মুখ‍্যমন্ত্রী থেকে প্রাক্তন মুখ‍্যমন্ত্রী। সবেরই সাক্ষী এই লেটার বক্স। ধুলো জমে ঝাপসা লেটার বক্সের চোখ। সেখানে এখনও তাঁর নামের আগে বসেনি ‘প্রাক্তন’ শব্দ।

আরও পড়ুন: ‘মাস্টারমশাইয়ের মহাপ্রয়াণ’, প্রথম মাসে বেতন ১১৩ টাকা! এই স্কুলেরই শিক্ষক ছিলেন বুদ্ধদেব, জানেন কোন বিষয় পড়াতেন তিনি?

প্রেসিডেন্সি কলেজের ছাত্র একসময় পৌঁছে গেলেন রাইটার্স বিল্ডিং। তবে কখনওই খুব একটা বদলায়নি তাঁর সাধাসিধে জীবনযাপন। পাম অ্যাভিনিউয়ের এই সরকারি আবাসনটি তৈরি হয়েছিল বামেরা ক্ষমতায় আসার পরে। ১৯৮০ সাল থেকে এই ছোট্ট ফ্ল‍্যাটের বাসিন্দা হন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।

তখন তিনি মন্ত্রী। পাম অ্যাভিনিউয়ের এই সরকারি আবাসনটি তৈরি হয়েছিল বামেরা ক্ষমতায় আসার পরে। প্রথম বার ভোটে জিতেই জ্যোতি বসুর মন্ত্রিসভায় তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের দায়িত্ব পেয়েছিলেন। সেটা ১৯৭৭ সাল। লেটার বক্সে তখন লেখা ছিল ‘শ্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, মন্ত্রী, তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর’।

তখন তিনি মন্ত্রী। পাম অ্যাভিনিউয়ের এই সরকারি আবাসনটি তৈরি হয়েছিল বামেরা ক্ষমতায় আসার পরে। প্রথম বার ভোটে জিতেই জ্যোতি বসুর মন্ত্রিসভায় তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের দায়িত্ব পেয়েছিলেন। সেটা ১৯৭৭ সাল। লেটার বক্সে তখন লেখা ছিল ‘শ্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, মন্ত্রী, তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর’। তারপর সময় গড়িয়েছে।

ধীরে ধীরে মন্ত্রী থেকে তিনি হয়েছেন মুখ‍্যমন্ত্রী। তারপর প্রাক্তন মুখ‍্যমন্ত্রী। যদিও লেটার বক্সে এখনও লেখা নেই প্রাক্তন শব্দ। পরে স্ত্রী মীরা ভট্টাচার্যের সঙ্গে ‘যৌথ’ নামে ছিল লেটার বক্স। সাদা কাগজে ইংরেজিতে লেখা ‘শ্রী অ্যান্ড শ্রীমতী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য’। বৃহস্পতিবার থেকে শুধু মীরা ভট্টাচার্যের নামে হয়ে যাবে প্রাচীন লেটার বক্স।

আরও পড়ুন: ‘বলিষ্ঠ নেতা’, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের প্রয়াণে শোকপ্রকাশ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির

প্রসঙ্গত, বিগত বেশকিছুদিন ধরেই অসু্স্থ ছিলেন বামশাসনের দ্বিতীয় এবং শেষ মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। গত ২৯ জুলাই আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে ভর্তি করানো হয়েছিল দক্ষিণ কলকাতার আলিপুরের এক বেসরকারি হাসপাতালে। গত ৯ অগাস্ট হাসপাতাল থেকে ফিরেছিলেন বুদ্ধদেব। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ছিলেন। এরপর ফুসফুস এবং শ্বাসনালিতে মারাত্মক রকমের সংক্রমণও ধরা পড়ে তাঁর। ফের আচমকা আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। দীর্ঘ দিন ধরেই গুরুতর শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা (সিওপিডি)-তে ভুগছিলেন। ক’দিন ধরে জ্বর ছিল। গতকাল রক্তপরীক্ষাও করা হয়, রিপোর্টে সেরকরম কিছু পাওয়া যায়নি। বৃহস্পতিবার সকালে স্যাচুরেশন খুব দ্রুত কমে যাওয়ায় মীরাদেবী তাঁর পারিবারিক চিকিৎসক সোমনাথ মাইতিকে জানান। সকাল ৮:২০ মিনিটে প্রয়াত হয়েছেন প্রবীন রাজনীতিবিদ।