এই প্রথম ত্রিপুরার ভূমিপুত্র নির্বাচিত হলেন তেলেঙ্গানার রাজ্যপাল

এই প্রথম ত্রিপুরার ভূমিপুত্র নির্বাচিত হলেন তেলেঙ্গানার রাজ্যপাল

আগরতলা: জনজাতি সমাজের পাশাপাশি রাজ্যের সামগ্রিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে জিষ্ণু দেববর্মার বলিষ্ঠ ভূমিকা রয়েছে। রাজ্য সরকারের তরফে তেলেঙ্গানার রাজ্যপালকে নাগরিক সম্বর্ধনা প্রদান অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন জনজাতি সমাজের উন্নয়নের পাশাপাশি রাজ্যের সামগ্রিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে জিষ্ণু দেববর্মার বলিষ্ঠ ভূমিকা রয়েছে। ত্রিপুরা রাজ্য থেকে তাঁর রাজ্যপাল হিসেবে নিযুক্তি আমাদের গর্বিত করেছে। সমাজ ব্যবস্থার উন্নয়নে তাঁর উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে।

রাজ্য সরকারের উদ্যোগে জিরানিয়া মহকুমার মান্দাইয়ের খরাং কমিউনিটি হলে তেলেঙ্গানার নবনিযুক্ত রাজ্যপাল জিষ্ণু দেববর্মাকে নাগরিক সম্বর্ধনা প্রদান অনুষ্ঠানে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। উল্লেখ্য, স্বাধীনতার পর এই প্রথম বার ত্রিপুরা থেকে কোন ভূমিপুত্র কোন রাজ্যের রাজ্যপাল হিসেবে গুরুদায়িত্ব পেয়েছেন। তিনি জিষ্ণু দেববর্মা। এর আগে ২০১৮ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত রাজ্য মন্ত্রিসভায় উপ মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। সম্প্রতি তাঁকে তেলেঙ্গানার রাজ্যপাল হিসেবে মনোনীত করা হয়।

আরও পড়ুন: পাশবিক অত‍্যাচার, ধর্ষণ, ক্ষত-বিক্ষত তরুণীর দেহ, খুন, আর জি কর উস্কে দিচ্ছে কামদুনির স্মৃতি! পৌঁছে গেলেন মৌসুমি, টুম্পা

এরপর শনিবার ত্রিপুরা সরকারের পক্ষ থেকে নবনিযুক্ত রাজ্যপাল জিষ্ণু দেববর্মাকে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্বর্ধনা প্রদান করা হয়।  সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, রাজ্যপাল জিষ্ণু দেববর্মা এই রাজ্যের ভূমিপুত্র এবং ত্রিপুরা রাজ পরিবারের কৃতি সন্তান। আমরা গর্বিত যে আপনি এই রাজ্যের প্রথম ব্যক্তি যিনি কোন রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান অর্থাৎ রাজ্যপাল পদে আসীন হয়েছেন।

ত্রিপুরা রাজ্যের জনগণের কাছে এটা অত্যন্ত গৌরবের বিষয়। শ্রী দেববর্মা শুধু একজন প্রাজ্ঞ রাজনীতিক নন, তিনি একাধারে কবি, লেখক ও শিল্পী। জনজাতি সম্প্রদায়ের সামগ্রিক উন্নয়নে তাঁর চিন্তাভাবনা ও কর্মকুশলতা নতুন দিশা সঞ্চার করেছে। রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যসচিব প্রয়াত রাজকুমার রমেন্দ্র কিশোর দেববর্মা ও বহু গুণের অধিকারী রাজকুমারী কমল প্রভাদেবীর সুযোগ্য সন্তান আপনি। সমাজের বহুমুখী ক্ষেত্রে তাঁর সৃষ্টিশীল অবদান নিঃসন্দেহে আমাদের গৌরবান্বিত করেছে।

আরও পড়ুন: টকটকে লাল নয়, ঘন নীল! বলুন তো কোন প্রাণীর রক্তের রং নীল? এক লিটারের দামই ১০ লাখ!

জনজাতি সমাজের উন্নয়নের পাশাপাশি রাজ্যের সামগ্রিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে আপনার বলিষ্ঠ পদক্ষেপ যা আজো আমাদের নতুন পথের দিশা দেখায়। প্রচারের অন্তরালে থেকে নীরবে নিভৃতে কাজ করে চলেছেন তিনি। ১৯৮৯ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত নর্থ ইস্টার্ন কাউন্সিলের এডভাইজারি কমিটির সদস্য ছিলেন। ১৯৯৩ সালে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর আর্ট এন্ড কালচারের ত্রিপুরা চ্যাপ্টারের দায়িত্বে থেকে এই অঞ্চলের শিল্প সংস্কৃতির বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছেন তিনি। ১৯৯৩ সালে ত্রিপুরা থেকে বিজেপির ন্যাশনাল কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। এই অঞ্চলের শিল্পকলার চর্চা ও প্রসারে তাঁর ভূমিকা দীর্ঘকাল আমাদের অনুপ্রাণিত করেছে এবং ভবিষ্যতেও করবে।

আরও পড়ুন: বলুন তো কোন জিনিস বাগানে সবুজ, বাজারে কালো আর ‘বাড়িতে লাল’ হয়? রান্নাঘরেই আছে কিন্তু! ৯৯% লোকজনই ভুল উত্তর দিয়েছেন

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ২০১৮ সালে ত্রিপুরায় প্রথম বিজেপি শাসিত রাজ্য মন্ত্রিসভায় উপ মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে আসীন হন জিষ্ণু দেববর্মা। অত্যন্ত দক্ষতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে অর্থ, পঞ্চায়েত, গ্রামোন্নয়ন, বিদ্যুৎ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, পরিবেশ, পরিকল্পনা ও সমন্বয় দপ্তরের দায়িত্ব পালন করেছেন। ৫ বছরের এই মন্ত্রীত্বের সময় কালে প্রশাসনিক ক্ষেত্রে তাঁর বহুমুখী সৃষ্টিশীল দৃষ্টিভঙ্গি রাজ্য প্রশাসনকে সমৃদ্ধ করেছে। নতুন সৃষ্টিশীল পরিকল্পনা গ্রহণ ও রূপায়নের দিকে প্রশাসনকে ধাবিত করেছেন। উন্নয়নের ক্ষেত্রে নতুন নতুন পরিকল্পনা রূপায়িত হয়েছে।

বিভিন্ন প্রশাসনিক সংস্কার ও স্বচ্ছতার সঙ্গে গ্রামীণ মানুষের জীবন জীবিকার ক্ষেত্রকে সম্প্রসারিত করেছেন তিনি। তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে রাজ্যে বায়ো ভিলেজ ২.০ প্রকল্প সফলভাবে বাস্তবায়িত করেছেন। বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০২২ সালের ৩০ অক্টোবর জাতীয় স্তরে সম্প্রসারিত জনপ্রিয় মন কি বাত কার্যক্রমে রাজ্যের এই সাফল্যের বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। শ্রী দেববর্মার সুযোগ্য নেতৃত্বে আগরতলার বাধারঘাটে বিজ্ঞান গ্রাম অর্থাৎ সায়েন্স সিটি স্থাপন করা সম্ভব হয়েছে। রাজ্যের তরুণ যুব সম্প্রদায় ও সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে বিজ্ঞান সচেতনতা ও মানসিকতা গড়ে তুলতে বিজ্ঞান গ্রাম স্থাপন একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ।

অনুষ্ঠানে ডাঃ সাহা বলেন, ক্রীড়া ক্ষেত্রেও আপনার অবদান বিশেষ উল্লেখযোগ্য। ভারতীয় ব্যাডমিন্টন এসোসিয়েশনের শীর্ষ পদে আসীন ছিলেন এবং এটির রাজ্য শাখার সভাপতির দায়িত্বও সুনামের সঙ্গে পালন করেছেন। রাজনীতির ক্ষেত্রেও জিষ্ণু দেববর্মার সুযোগ্য নেতৃত্ব ও বলিষ্ঠ সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও দূরদৃষ্টি সম্পন্ন বিশ্লেষণ ক্ষমতা অন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছিল। আমাদের বিশ্বাস তেলেঙ্গানা রাজ্যের চতুর্থ রাজ্যপাল হিসেবে আপনি আপনার দক্ষতা, নিষ্ঠা ও সৃজনশীল বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে সেই রাজ্যের সার্বিক উন্নয়নে বলিষ্ঠ ভূমিকা গ্রহণ করতে সক্ষম হবেন।

আরও পড়ুন: ক্যানসারে সদ্য মৃত স্ত্রী, একাধিক বিয়ে! নিজেকে পুলিশকর্মী পরিচয় দিত আর জি কর কাণ্ডে ধৃত সঞ্জয়

রাজ্যপাল হিসেবে সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি আপনার দূরদৃষ্টি দেশ ও রাজ্যকে সমৃদ্ধ করবে। আপনার সাহিত্য সৃষ্টি, সমাজ সচেতনতামুলক সুগভীর চিন্তাভাবনা আমাদের রাজ্যের অন্যতম সম্পদ। আপনি আমাদের অত্যন্ত শ্রদ্ধাভাজন প্রিয়জন। আজ আপনাকে এই রাজ্যের জনগণের পক্ষ থেকে নাগরিক সম্বর্ধনা জ্ঞাপন করতে পেরে আমরা সবাই গর্বিত। আপনার সুদীর্ঘ সুস্থ কর্মময় জীবন আমাদের চিরন্তন প্রত্যাশা।

অনুষ্ঠানে রাজ্যপাল জিষ্ণু দেববর্মা তাঁর সংক্ষিপ্ত আলোচনায় রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। তাঁরাই প্রথমবার ত্রিপুরা থেকে কোন রাজ্যের রাজ্যপাল হিসেবে দায়িত্ব অর্পন করেছেন। এর পাশাপাশি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহাকেও ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ডাঃ সাহার মুখ্যমন্ত্রীত্বের সময়েই এটা সম্ভব হয়েছে। আমি ত্রিপুরার প্রতিনিধি হয়েই তেলেঙ্গানায় গিয়েছি, ব্যক্তি জিষ্ণু দেববর্মা হিসেবে নয়। তাই শপথ গ্রহণের দিনে ত্রিপুরার রিসা আমিও পরিধান করেছি এবং তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রীকেও রিসা পরিয়ে দিই। রাজ্যপাল শ্রী দেববর্মা বলেন, আমি শুধু তেলেঙ্গানার রাজ্যপাল নই, আমি ত্রিপুরার একজন দূত।