জামাত শীর্ষ নেতার সঙ্গে বৈঠক চিনা রাষ্ট্রদূতের৷ ছবি- এক্স

China Jamat meeting: নজর বাংলাদেশে, চিনের ঘুঁটি জামাত? ঢাকার বৈঠকে ঘিরে জল্পনা, জল মাপছে দিল্লি

Arun Anand

কলকাতা: বাংলাদেশের জামাত-ই-ইসলামির সভাপতি শফিকুর আমিরের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত সারলেন সে দেশে নিযুক্ত চিনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। জামাতের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ওয়েন, বাংলাদেশের এই কট্টরপন্থী দলকে সুসংগঠিত রাজনৈতিক গোষ্ঠী মনে করেন বলে জানিয়েছেন। ঢাকাতে অবস্থিত জামাত-ই-ইসলামির সদর দফতরে সোমবার চিনা রাষ্ট্রদূত, দলের প্রধান শফিকুর আমিরের সঙ্গে বৈঠকে সারেন। জামাত শীর্ষ নেতার সঙ্গে চিনা কূটনীতিকের এই বৈঠক ভারতের কাছে আশ্চর্যের লেগেছে বলে সূত্রের খবর।

রিপোর্ট অনুযায়ী, দু’জনেই বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পালাবদল এবং দুই দেশের সরকার এবং জনসাধারণের সৌহার্দ্যের বিষয়ে আলোচনা করেন।

আরও পড়ুন: ফের জেল হেফাজতে সন্দীপরা, সিবিআই-এর আবেদন শুনেই ‘কড়া’ মন্তব্য বিচারকের

২০১০ সালের পর এই প্রথম কোনও বিদেশী কূটনীতিক জামাতের অফিসে পা রাখলেন। পুলিশ জামাতের এই অফিসটি আগে সিল করে দিলেও, ছাত্র বিক্ষোভের জেরে অগাস্ট মাসে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পরই অফিসটি আবার নতুন করে খোলা হয়েছে।

ইয়াও ওয়েনের সঙ্গে জামাতের আমিরের মিটিংয়ের পরেই, এই চিনা রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশকে প্রশংসা আর স্তুতিতে ভরিয়ে তুলেছেন। বাংলাদেশকে সুন্দর এক দেশ হিসাবে ঘোষণা করে জামাত-ই-ইসলামিকে সুসংগঠিত এক দল হিসাবে আখ্যা দেন। তিনি আরও বলেন, চিন বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে এক সুন্দর সম্পর্ক গড়ে তুলতে ইচ্ছুক। বাংলাদেশের উন্নতি প্রকল্পের জন্য চিন আরও কাজ চালিয়ে যেতে চায় বলে তিনি জানান।

শেখ হাসিনার শাসনকালে, ভারতের পর চিন দ্বিতীয় দেশ যার সঙ্গে আওয়ামি লিগের সম্পর্ক অত্যন্ত মজবুত ছিল।

রাষ্ট্রদূত ওয়েন জানান, বর্তমানে বাংলাদেশ এক ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। তাঁর মতে, চিন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে গভীর এবং সুসম্পর্কে যেতে চায়। চিন এবং বাংলাদেশ দুই রাষ্ট্রই একে অন্যের হাত ধরে এগিয়ে চললে সবদিক থেকেই এই দুই দেশ এবং সেখানকার মানুষদের পক্ষে মঙ্গলকর হবে বলে তিনি আশা করেন।

জামাত প্রধান শফিকুর রহমান চিনের এই মহৎ উদ্দেশ্যকে স্বাগত জানিয়েছেন। বাংলাদেশের অর্থনীতি এবং সামাজিক উন্নয়নে চিনের ভূমিকাকেও তিনি সাধুবাদ জানান।

তিনি জানান, অখণ্ড চিন গড়ে ওঠার পক্ষে জামাত বরাবরই সমর্থন করে এসেছে এবং পরবর্তীতেও করে যাবে। জামাতের এই সমর্থন বাংলাদেশ এবং চিন দুই দেশেরই একাত্মতাও বাড়িয়ে তুলেছে বলে তার অভিমত। জামাত নেতা শফিকুর চিনের কাছে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের জন্য আরও বেশি বিনিয়োগের অনুরোধও রাখেন।

এই মিটিংয়ে উপস্থিত ছিলেন জামাতের নায়েব-ই-আমির মুজিবর রহমান, সায়েদ আবদুল্লাহ মহম্মদ তাহের, সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পোরোয়ার এবং অন্যান্য বরিষ্ঠ নেতৃবৃন্দ।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, চিন বহুদিন ধরে উইঘরের মুসলিমদের উপর দমন পীড়ন নীতি চালিয়ে আসছে বলে অভিযোগ। অন্যদিকে চীন বাংলাদেশ এবং অন্যান্য দেশের চরমপন্থী ইসলামিক গোষ্ঠীগুলির সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে। এখন এটাই প্রশ্ন, কেমন ভাবে চিন নিজের দেশের উইঘর সংখ্যালঘুদের অত্যাচার করে অন্যান্য মুসলিম প্রধান দেশগুলিকে সমর্থন করে চলেছে এবং তাদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক জারি রেখেছে?

দু’মুখী এই আচরণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়েই কি তবে চিন করে চলেছে? এর সঙ্গে আরও একটি বিষয় হচ্ছে, জামাত-ই-ইসলামির চিনের উইঘর মুসলিমদের নিয়ে ভাবনা। বাংলাদেশের ইসলামপন্থী প্রধান দল জামাত গোটা বিশ্বের যে কোনও প্রান্তে হওয়া মুসলিম নিপীড়ণ নিয়ে সোচ্চার হলেও, কেনই বা চিনের উইঘর সংখ্যালঘুদের প্রতি নির্যাতন নিয়ে সরব হচ্ছে না তা নিয়ে আগেও জলঘোলা হয়েছে। চিনের প্রতি তাঁদের এই নীরবতা গোটা বিশ্ব জুড়েই এক বিস্ময় তৈরি করেছে।

বিশিষ্ট লেখক ও প্রবন্ধক অরুণ আনন্দ, সামাজিক ও রাজনৈতিক বিভিন্ন বিষয়ে নিয়মিত লেখালেখি করেন। তার লেখা প্রবন্ধ ও বই পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। আপনি তাঁকে তাঁর X (formerly Twitter) হ্যান্ডেল @ArunAnandLive -এ ফলো করতে পারেন।