পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসকের সরকারি বাংলো নিলামের নির্দেশ দিল আদালত৷

DM bunglow auction: ‘ভিটেহারা’ হবেন খোদ জেলাশাসক? বাংলো নিলামে তুলতে বলল আদালত, বর্ধমানে শোরগোল

বর্ধমান: নিলামে উঠবে বর্ধমানের জেলাশাসকের সরকারি বাংলো! শুধু বাংলো নয়, বাংলো সংলগ্ন বাগান, জমি সব বাজেয়াপ্ত করে তা নিলামে তোলার নির্দেশ দিল আদালত। কেন এমন নির্দেশ?

অভিযোগ, জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের জন্য অধিগৃহীত জমির দাম মেটায়নি সরকার তথা জেলা প্রশাসন। সেই জন্যই পূর্ব বর্ধমানের জেলা শাসকের বাংলো ক্রোক করার নির্দেশ দিল আদালত। বর্ধমান শহরের সাধনপুর এলাকায় বাগান, ফাঁকা জমি ও ভবন সহ পুরো বাংলো ক্রোক করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্দেশ কার্যকর করার জন্য জেলা আদালত নাজিরকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আদেশ দিয়েছে।

আরও পড়ুন: কানহাইয়াকে ঘিরে ধরে চড়-থাপ্পড়, ছোড়া হল কালি! খাস দিল্লিতেই আক্রান্ত কংগ্রেস প্রার্থী

ক্রোকের পর বাংলোটি যাতে নিলামে বিক্রি করা যায় তার জন্য বাজারদর জানতে নাজিরকে বলেছে আদালত। ক্রোক প্রক্রিয়া কার্যকর করতে কতজন পুলিশ প্রয়োজন হবে তারও রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে নাজিরকে। ১৯ জুলাই এ ব্যাপারে নাজিরকে আদালতে রিপোর্ট পেশ করতে হবে। বাংলো নিলাম করে জমির মূল্য বাবদ আদালত নির্ধারিত টাকা মিটবে কিনা, তাও জানাতে বলা হয়েছে নির্দেশে।

শুক্রবার বর্ধমানের তৃতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক বিশ্বরূপ শেঠ এই নির্দেশ দিয়েছেন। আদালতের এই নির্দেশ চাউর হওয়ার পর জেলার প্রশাসন মহলে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, জাতীয় সড়ক চার লেনের করার জন্য ২০০৩ সালে জমি অধিগ্রহণ করে সরকার। পশ্চিম বর্ধমানের কাঠপুকুর মৌজায় কলকাতার সরশুনা থানার হো চি মিন সরণীর বাসিন্দা সুশান্ত কুমার গোস্বামীর ০.৪১ একর জমি অধিগ্রহণ করে সরকার। জমির মূল্য স্থির হয় ২৬ লক্ষ ৭৬ হাজার ২৪০ টাকা।অভিযোগ সরকার সেই টাকা মেটায়নি। এ নিয়ে প্রশাসনের নানা মহলে দরবার করেন জমির মালিক। যদিও তাতে কাজ হয়নি। বাধ্য হয়ে জমির মূল্য বাবদ নির্ধারিত টাকা পেতে তিনি ২০১৩ সালে মামলা করেন বর্ধমান আদালতে। আদালত জমির মূল্য বাবদ ৫৪ লক্ষ ৮৮ হাজার টাকা মিটিয়ে দেওয়ার জন্য সরকারকে নির্দেশ দেয়।

অভিযোগ, আদালতের নির্দেশের পরও সরকার জমির মালিককে জমির মূল্য বাবদ প্রাপ্য টাকা মেটায়নি। নির্দেশ কার্যকর করতে ২০১৫ সালে ফের আদালতের দ্বারস্থ হন জমির মালিক। সেই থেকে মামলাটি বর্ধমানের তৃতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা আদালতে চলছিল। এরই মধ্যে জমির মালিক মারা গেলে তিন ওয়ারিশ মিতালি গোস্বামী, পার্থসারথি গোস্বামী ও সিদ্ধার্থ গোস্বামী মামলাটি চালিয়ে যান। এ বছরের ১২ এপ্রিল আদালত জমির মূল্য বাবদ মালিককে ১ কোটি ৯৯ লক্ষ ৭০ হাজার ৭৯০ টাকা ১৭ মে এর মধ্যে মিটিয়ে দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেয়। সেই নির্দেশও মানেনি সরকার। এ দিনের শুনানির শুরুতে জিপি ১২ এপ্রিলের নির্দেশের বিরুদ্ধে হাইকোের্ট রিভিউ পিটিশন দাখিল করার জন্য আরও ২ মাস সময় চান। সিদ্ধার্থ আইনজীবী হওয়ায় তিনি নিজেই সওয়াল করেন। সরকার পক্ষের সময় চাওয়া নিয়ে তিনি তীব্র আপত্তি করেন।

দু’পক্ষের সওয়াল শোনার পর বিচারক তাঁর পর্যবেক্ষণে জানান, ২০১৫ সাল থেকে মামলাটি ঝুলে রয়েছে। আগের দিনের শুনানিতেই আর কোনও সময় দেওয়া হবে না বলে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়। এর পর রায় কার্যকর করা নিয়ে সময় দিলে ন্যায় বিচার বঞ্চিত হবে বলে পর্যবেক্ষণে জানান বিচারক। সরকার পক্ষের আবেদন খারিজ করে দিয়ে ৩.০৪ একর জমির উপর তৈরি জেলা শাসকের বাংলো ক্রোক করার নির্দেশ দেন তিনি।