নিজের অবিস্মরণীয় অবদানের জন্য চলচ্চিত্র জগতের সর্বোচ্চ সম্মানে ভূষিত হতে চলেছেন মিঠুন চক্রবর্তী। সোমবার সকালেই এই খবর কেন্দ্রীয় তথ্য এবং সম্প্রচার মন্ত্রকের তরফে ভাগ করে নিয়েছেন অশ্বিনী বৈষ্ণো। আর নিজের দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কারটি ভক্তদের উদ্দেশ্যেই উৎসর্গ করলেন অভিনেতা। সেই সঙ্গে নিজের কেরিয়ারের প্রথম দিকের লড়াইয়ের দিনগুলির স্মৃতিচারণও করেছেন রুপোলি পর্দার মহাগুরু। Photo: PTI
আপাতত কলকাতায় নিজের সাম্প্রতিক-তম ছবির শ্যুটিংয়ের কাজেই ব্যস্ত মিঠুন। সেখানে আবার হাতে চোটও পেয়েছেন তিনি। তাতেও অবশ্য থেমে নেই তাঁর কাজ। বরং নিজের সেরাটাই দিয়ে লড়াই করে চলেছেন। News18-এর সঙ্গে আলাপচারিতার কালে এই সম্মানে ভূষিত হওয়ার আনন্দ-উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন মিঠুন চক্রবর্তী। লড়াইয়ের প্রথম দিকের দিনগুলির স্মৃতিচারণ করে অভিনেতা জানান যে, টাকা না থাকায় একবার এক সাংবাদিকের কাছ থেকে টাকা চাইতে হয়েছিল তাঁকে। সেই গল্পটাই ভাগ করে নিলেন বলিউডের সুপারস্টার। News18-এর সঙ্গে বিশেষ আলাপচারিতায় মিঠুন চক্রবর্তী কী কী বললেন, সেটাই একবার দেখে নেওয়া যাক।
প্রশ্ন: আপনার কেমন লাগছে? মিঠুন চক্রবর্তী: আমার ধন্যবাদ জানানোর ভাষা নেই। এমন একটা অনুভূতি হচ্ছে যে, আমি না পারছি হাসতে আর না পারছি কাঁদতে! আমার এখনও মনে আছে, একটা সময় কীভাবে আমি মুম্বইয়ের ফুটপাথে ঘুমোতাম! সেই সময় সব কিছুর জন্য আমাকে কত লড়াই করতে হত। আর আজ আমাকে যে এই সম্মান দেওয়া হয়েছে, সেটা আমি এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না।
প্রশ্ন: এই পুরস্কার কাকে উৎসর্গ করবেন? মিঠুন চক্রবর্তী: আমার সমস্ত ভক্ত এবং যাঁরা আমার ছবি দেখেছেন, তাঁদের উদ্দেশ্যেই আমি আমার এই পুরস্কারটি উৎসর্গ করতে চাই। শুধু তা-ই নয়, আমি এই পুরস্কার আমার নিজের পরিবারের উদ্দেশ্যেও উৎসর্গ করতে চাইছি। আসলে পরিবার অক্লান্ত ভাবে সব সময় আমার পাশে ছিল।
প্রশ্ন: নিজের এই সফরটাকে কীভাবে দেখেন আপনি? মিঠুন চক্রবর্তী: সেই ফুটপাত থেকে আমি আমার লড়াই শুরু করেছিলাম। খোলা আকাশের নীচে যে কত রাত কাটিয়েছি! প্রথমে আমি সি-গ্রেড ছবিতে কাজ করতাম। এরপর বি-গ্রেড ছবি ছবিতে এসেছিলাম। যখন আমি আমার প্রথম জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলাম, এক সাংবাদিক আমার সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্য এসেছিলেন। আমি তাঁকে বলেছিলাম যে, ‘আমার হাতে কোনও পয়সা ছিল না বলে খাবার কিনে খেতে পারিনি। ফলে ক্ষুধার্ত ছিলাম। আর তিনি এতটাই দয়ালু ছিলেন যে, আমায় খাবার কিনে খাইয়েছিলেন।’ আর আজ আমি চারবেলা খাবার পাই। নিজের জীবনে আসলে আমি প্রচুর উত্থান-পতন দেখেছি। কিন্তু অভিনয়ের প্রতি আবেগ আর লড়াইটাই ছিল আমার মূল হাতিয়ার।
প্রশ্ন: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও তো আপনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন? মিঠুন চক্রবর্তী: প্রধানমন্ত্রীকে আমি খুবই ভালবাসি। তিনি একজন দারুণ মানুষ। বহুবার তাঁর সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে। যখন তিনি আমায় শুভেচ্ছাবার্তা দিয়েছেন, তখন আমি তাঁকে আমার ‘প্রণাম’ পাঠিয়েছি।
প্রশ্ন: সমস্ত রাজনীতিবিদ আপনাকে শুভেচ্ছাবার্তা জানিয়েছেন। কুণাল ঘোষ তো আবার বলেছেন, আপনার প্রণব মুখোপাধ্যায় এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবদানের কথা মনে রাখা উচিত। কারণ প্রথম ব্যক্তিত্ব আপনার নাম পদ্মশ্রীর জন্য সুপারিশ করেছিলেন। আর দ্বিতীয় ব্যক্তিত্ব তো আপনাকে সাংসদ বানিয়েছিলেন? মিঠুন চক্রবর্তী: হ্যাঁ। আমার মনে আছে। আর আমি তো নিজের ইচ্ছাতেই তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলাম। বিজেপি-ও আমায় ভোটে লড়াই করার জন্য বহু বার অফার দিয়েছে। কিন্তু আমি সব সময় সেই প্রস্তাব নাকচ করে এসেছি। আসলে আমি অভিনয়ের সঙ্গে রাজনীতিকে কখনওই মেলাইনি।
প্রশ্ন: অনেকেই অবশ্য আপনার এই পুরস্কার জয়কে আপনার বিজেপি-যোগের সঙ্গে মেলানোর চেষ্টা করছেন। এতে আপনার প্রতিক্রিয়া কী? মিঠুন চক্রবর্তী: আমি কিছু বলব না। আমি কখনও কারও কাছ থেকে অনুগ্রহ নিইনি। আর ভবিষ্যতেও সেটা নেব না।
প্রশ্ন: বর্তমানে বাংলার সকলেই আরজি কর ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনা নিয়ে কথা বলছেন। এই বিষয়ে আপনার কী মতামত? মিঠুন চক্রবর্তী: বিচার নিশ্চয়ই হবে। এটা একটা ভয়ঙ্কর নৃশংস অপরাধ।
প্রশ্ন: নবাগতদের উদ্দেশ্যে আপনি কী বার্তা দিতে চান? মিঠুন চক্রবর্তী: নবাগতদের উদ্দেশ্যে আমি বলতে চাই যে, নিজের লক্ষ্য যতক্ষণ না পূরণ হচ্ছে, ততক্ষণ লড়াই করে যেতে হবে। কারণ আমি যদি এটা করতে পারি, তাহলে ইচ্ছা থাকলে সেটা যে কেউ অর্জন করতে পারবেন।
Post navigation
Just another WordPress site